• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সারা দেশ

আখাউড়ায় গরুর খামার দিয়ে মাহফুজের বাজিমাত

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০২১

প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনের গন্ডির মধ্যে দৈনন্দিন কাজ করে সাংসারিক জীবন ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে কারও সাংসারিক জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে আবার কারও আসেনা। আর এই আর্থিক স্বচ্ছলা ফিরিয়ে আনার একমাত্র চাবি কাঠি হলো ইচ্ছাশক্তি, শ্রম আর আত্মবিশ্বাস। এই তিন সমন্বয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঈদ কেন্দ্রীক গরুর খামার করে সফলতা পেয়েছেন মো. মাহফুজুর রহমান এক প্রবাস ফেরত ব্যাক্তি। খামারের পাশাপাশি তার রয়েছে মাছ ও ডেকোরেটারের ব্যবসা। ওইসব থেকে বছর তার আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকার উপর।

মাহফুজ উপজেলা মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তার পরিবারে স্ত্রী, ২ ছেলে ৩ মেয়েসহ ৭ জন সদস্য রয়েছে।

বাড়িতে নিজ পরিশ্রমে গরুর খামার করে তিনি এলাকায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । এবার ঈদ কেন্দ্রীক মাত্র ৭ মাস গরু লালন পালনের মাধ্যমে তা বিক্রি করে ৪লাখ টাকার উপর আয় করে বাজিমাত করেন। তিনি কোরবানির ঈদ কেন্দ্রীক খামার ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে। তিনি একজন সফল খামারি। তার খামার দেখে আশপাশের এলাকার মানুষ এখন গরু পালনে উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা গেছে, আজ থেকে ১৮ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাসি ফোটাতে বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে যায় মো. মাহফুজুর রহমান। সেখানে গিয়ে ও সে স্বপ্নের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পেরে নানা কারণে তিনি মাত্র ৪ বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। এক দিকে সংসারে অভাব অনটন আর অন্য দিকে ধারদেনা করে বিদেশ গিয়ে স্থায়ী হতে না পাড়ায় অনেক লোকসান গুনতে হয় তাকে। বাড়িতে এসে তিনি অনেকটাই মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে কোন উপায় না পেয়ে তিনি কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্য নিয়ে নিজ উদ্যোগে বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে ২টি গরু লালন পালনের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু করেন। গরু খামার লাভ জনক হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। শুরু হয় তার ঈদ কেন্দ্রীক গরু লালন পালন। এরপর থেকেই তিনি প্রতিবছরই কুরবানী ঈদের প্রায় ৭-৮ মাস পূর্বে স্থানীয় বাজার থেকে ২০-৩০টি গরু ক্রয় করে দেশীয় পদ্ধতি লালন পালন করে বিক্রি করছেন। মাহফুজ মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে গত ৭ মাস আগে প্রায় ১৫ লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় পশুর হাট থেকে ৩০টি ছোট বড় গরু ক্রয় করা হয়। কোন প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যে নিয়মিত যতেœ খড়, তাজা ঘাস,খৈল ভুষি,চালের কুড়া, ভুট্রা,ভাতসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে গরুগুলোকে লালন পালন করেন। পরিবারের সদস্যরা তার এ কাজে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করছে।

খামারে থাকা ওই গরুগুলো গত প্রায় ২৫ দিনের মধ্যে সব বিক্রি করা হয়। এক একটি গরু নিচে ৮০ হাজার উপরে ১লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ১ জন শ্রমিক তার খামারে নিয়মিত কাজ করছেন। গরু ক্রয়, খাবার, ঔষধ, শ্রমিকসহ অন্যান্য যাকতীয় খরচ বাদে ওই গরু বিক্রি থেকে তার প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হয়। পাশাপাশি তার রয়েছে ডেকোরেটাস আর মাছ ব্যবসা রয়েছে তার । ওইসব ব্যবসা থেকেও আরো তার ২লাখ টাকার উপর আয়। বছরে তার আয় হচ্ছে ৬লাখ টাকার উপর। তিনি দেশেই করছেন এখন বিদেশের আয়। দিন দিন বাড়ছে তার ব্যবসার পরিধিও। তার গড়ে উঠা এ খামার এখন গ্রামের অন্য বেকার যুবকদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাহফুজ মিয়া বলেন, এক সময় সংসারে ছিল অভাব অনটন। কোন উপায় না পেয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান। ভাগ্য খারাপ হওয়ায় সেখানে তার ৪ বছরের বেশী সময় থাকা হয় নি। নানা কারণে তাকে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে দেশে আসতে হয়। তার দৃঢ় মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকায় ২ টি গরু লালন পালন করে এখন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ।

তিনি বলেন কষ্ট করলে সফলতা আসবে এই দৃঢ় বিশ্বাসে তিনি পিছপা হয়নি। দৃঢ় মনোবল আর ্িবশ্বাস নিয়ে নতুন উদ্যোমে পরিশ্রম করে আজ তিনি সফল এক খামারি।

প্রতিকূলতার কথা বলতে গিয়ে মাহফুজুর রহমান জানান, অনেক সময় প্রয়োজনীয় ডাক্তার পাওয়া যায় না। নিজে নিজে প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ শুনেছেন। গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে জেনেছেন। আস্তে আস্তে এখন তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

খামার ঘুরে দেখা গেছে, তার খামারের পরিবেশ অনেক ভালো। ভেতর-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন সব সময়। এ ছাড়া মশা-মাছি আর পোকামাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা আছে। কোন প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যে নিয়মিত যত্নে খড়, তাজা ঘাস,খৈল ভুষি,চালের কুড়া, ভুট্রা,ভাতসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে গরুগুলোকে লালন পালন করেন।

সফল খামারি মাহফুজের পরামর্শ, শিক্ষিত যুবকরা চাকরির জন্য ঘুরে ঘুরে হতাশ না হয়ে সঠিকভাবে গরুর খামারের ব্যবসায় নজর দিলে ভালো করতে পারবে।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মাহফুজ মিয়ার খামার নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। ব্যক্তি উদ্যোগে বিশাল গরুর খামার স্থাপন করে তিনি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । ‘কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতা আসে, মাহফুজ তার অনন্য উদাহরণ। এ ধরনের খামারে সব প্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তত রয়েছে বলে জানায়।

মোগড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন মাহফুজ মিয়ার এমন উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়। এ ধরনের বাণিজ্যিক খামার জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads