• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রাত পোহালে ঈদ: আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে আনন্দের বন্যা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

রাত পোহালে ঈদ: আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে আনন্দের বন্যা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০২১

রাত পোহালেই ঈদ। আর ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এরই মধ্যে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ছোট বড় সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। শেষ মুহুর্তে সবাই যেন যার যার মতো করে ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের কেন্দুয়াই গ্রামে ভূমিহীন ও গৃহহীন পুর্নবাসিত পরিবারগুলো দেখা যায় ঈদ আনন্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই প্রথম তারা নিজের মতো করে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করবেন । মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে সরকারিভাবে এ উপজেলায় ৫০ টি বাড়ি তৈরী করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে কেন্দুয়াই গ্রামে ৭টি ঘর রয়েছে। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে সরকার তাদেরকে এ বিশাল সুযোগ তৈরী করে দেওয়ায় অসহায় হতদরিদ্রদের জীবন দ্বারা অনেকটাই পাল্টে যায়। স্বাধীন ভাবে বাঁচা ও ঈদের যে কী আনন্দ সরকারি ঘর পেয়ে তারা বুঝতে পাড়ায় এখন ঘরে ঘরে চলছে মহাখুশি আর আনন্দ।

এদিকে কেন্দুয়াই গ্রামে কথা হয় উপকারভোগী আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার সাথে। তিনি বলেন আমার একটু জায়গা ছিল না জমি ছিল না, জায়গা হবে একটা ঘর হবে, পরিবার নিয়ে এক সাথে চিন্তামুক্ত হয়ে থাকতে পারবো এই কথা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।

আমার নিজের ঠিকানায় সন্তান আর পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনে এই প্রথমবারের মতো ঈদ উৎসব করবো এর চাইতে আনন্দের আর কি হতে পারে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর পেয়ে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেন ঈদের আনন্দে কখনও শামিল হতে পারিনি। ছিল না ঘর , অন্যের বাড়িতে থাকতে হতো। ছিল কোন স্বাধীনতা। সবাই আনন্দ উৎসব করতো শুধু আমার সন্তানরা শুধু চেয়ে দেখে গেছে। তখন খুবই খারাপ লাগতো । এবার পরিবার পরিজন নিয়ে সবার মতো করে নিজ ঘরে আনন্দ করবো কেউ আর বাঁধা দিবে না।

উপকারভোগী হারুণ হাওলাদার বলেন, তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মচারীর কাজ করেন। অন্যের বাড়িতে ভাড়া করে স্ত্রী, ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। তবে বাড়িটিও ভাঙ্গাচুরা। থাকার অনুপযোগী হয়ে আছে। কিন্তু সাধ্য না থাকায় কষ্ট করে পড়ে আছেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ও। তিনি বলেন আমার জীবনতো শেষ থাকার ব্যবস্থাটুকু করতে পারি নাই। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ পেয়ে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে তার। তিনি আরো বলেন জন্মের পর থেকে ঈদ আনন্দ যে কি তা ভাগ্যে জুটেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণে আজ ঈদ আনন্দ পরিবারের সবাই মিলে করবো। এ যে কী আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না বলে জানায়।

মৃত আবু তাহের মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন আমরা নিতান্তই একজন অসহায় ভূমিহীন গরিব মানুষ। আজ থেকে ১০ বছর আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখেছি। সামান্য আয়ের সংসারে ভাঙ্গাচুরা ভাড়া বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিনানিপাত করতে হয়েছে। তাছাড়া ভাড়া ঘরটি খুবই ঝরাঝির্ণ, সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ায় আর শীতের সময় এই ভাঙ্গা ঘরে ছেলে সন্তান নিয়ে তাদের থাকতে খুবই কষ্ট করতে হয়। কখনো কল্পনা ও করতে পারেনি তার পাকা ঘর হবে । পাকা ঘরে থাকতে পারবে। সব কিছু যেন এখন তার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

দীর্ঘ বছর পযর্ন্ত ঈদের যে কী আনন্দ শুধু সন্তানদের নিয়ে তিনি শুধু দুচোখে দেখছেন তিনি। কিন্তু আনন্দে তারা শামিল হতে পারেনি। ছিলনা কোন ঘর বাড়ি, অন্যের বাড়িতে ভাঙ্গাচুরা ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতে হতো। তাদের মধ্যে অনেকে অন্যের বাড়িতে করতো কাজ। কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে খাবার নিয়ে পরিবারের লোকজন মিলে খাওয়া হতো। সবাই সবারমতো করে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের দিনে আনন্দ করতো তারা শুধু দেখেই যেতো। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে মাথা ঘুছার ঠাঁই করে দেওয়ায় এই খুশির ঈদ সবাই মিলে আনন্দ উৎসব করতে পেরেছে বলে জানায়।

জানা যায়, যাদের মাথার উপরে ছাদ ছিলোনা, ঘরে খাবার ছিলো না, প্রতিদিন যাদের চিন্তা করতে হতো কোথায় থাকবে; সেই মানুষগুলো এখন মাথার উপরে একটি ছাদ পেয়েছে। এর ফলে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেকটি ঘরের মালিক আলমগীর মিয়া বলেন, আমাদের মতো গরিবের জীবনতো পথে পথেই শেষ হয়ে যায়। কেউ হয়তো বিপদের সময় চাল, ডাল, কাপড় দেয় কিন্তু জমির সঙ্গে ঘর দেওয়ার কথা শুনিনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমরা তার প্রতি চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে আরো অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখুন। আমাদেরকে ঘর তৈরী করে দেওয়ায় আজ ঈদের আনন্দের স্বপ্ন দেখছি।

এদিকে কেন্দুয়াই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সাতটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলোতে এরইমধ্যে অনেকেই বসবাস শুরু করেছেন। সেখানকার বাসিন্দারা কেউ ঘর গোছাচ্ছেন, কেউ রান্না-বান্নায় ব্যস্ত। আইরিন ও রাহেলা বলেন, জন্মের পর ভালো করে ঈদ পালন করতে পারি নাই। ঈদ আনন্দ যে কী ছিল তা কখনও বুঝিনি। এক হলো থাকার মতো কোনো ঘর ছিল না। ঈদের দিন বাড়ির পাশের ছেলে মেয়েরা কত আনন্দ করতো তা শুধু দেখতাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে একটা ঠিকানা দিয়েছেন যার কারণে এবার আমরা স্বাধীন ভাবে ঈদ আনন্দ করতে পারবো। সারা দিন মনের আনন্দে খেলাধূলা করব আনন্দ উৎসব করবো। কেউ আমাদের বাঁধা দেবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads