• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় শখের বসে পেঁপে চাষ করে আরমানের সফলতা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিক ভাবে পেঁপে চাষ শুরু হয়েছে। আর এই পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের মৃত কাজী তালেব আলীর ছেলে কাজী. আরমান মিয়া।

পেঁপে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ফল ও সবজি হিসেবে সর্বমহলে এখন বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো ফলটি। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাষ করে অনেকেই নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। এরইমধ্যে কৃষক আরমান তার বাড়ি সংলগ্ন জায়গার মধ্যে পেঁপে চাষ করে এলাকায় এক চকম সৃষ্টি করেন।

গত ১ মাস ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষই হচ্ছে না। এ পযর্ন্ত তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে একটি গাছ থেকেই ১২ হাজার টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করেন। তার এই উন্নত সুইট লেডি জাতের পেঁপের চোখ ধাঁধানো ফলনে যেন রাজ্যের হাসি ফুটে উঠেছে। পরিবারে ৩ ছেলে ২ মেয়েসহ ৭ জন সদস্য রয়েছে।

আরমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্য ৯৬ সনে তিনি সৌদি আরবে চলে যান। এক পর্যায়ে ৪ বছরের মাথায় তিনি দেশে চলে আসেন। দেশে এসে কি ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে চলবে এ চিন্তায় তিনি অস্থিও হয়ে পড়েন। কোন উপায় না পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ি সংলগ্ন ৮ বিঘা জায়গার মধ্যে সবজিসহ নানা প্রকার ফল ফলাদি করার সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক ভাবে বেগুন, কাকরোল, ঝিঙ্গা, টমেটো, লাল শাখসহ নানা প্রজাতির সবজি শুরু করলে এতে তিনি ভালো সফলতা পেতে শুরু করেন। পর্যায় ক্রমে ওই জায়গায় লাগানো হয় মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে,কাঁঠাল, নানা প্রজাতির আম গাছ।

এরমধ্যে গত ৩ মাস পূর্বে উন্নত সুইট লেডি জাতের ৩০০টি পেঁপে গাছ লাগান তিনি। জমি তৈরি, চারা, সার, বালাইনাশক, রোপণ, আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিকের টাকাসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা তার খরচ হয়। চারা রোপণের প্রায় তিন মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি করে পেঁপে ধরে। একেকটা পেঁপের ওজন দুই থেকে ৩ কেজি।

এখানে কাঁচা পেঁপে পাইকারি মূল্যে কেজিতে ২০-২৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকাররা এসে সকালে তার বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়। কোন কোন সময় স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপে বিক্রি লাভজনক। প্রতিটি পাকা পেঁপে গড়ে দেড়শ থেকে ২শ টাকা করে বিক্রি করা যায়। এ পযর্ন্ত ৬০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি হয়েছে বলে জানায়। তিনি আরো বলেন তার পেঁপে বাগান করার জন্য বহু দিনের শখ ছিল। কিন্তু নানা কারণে এতোদিন তিনি বাগান করতে পারেনি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পেঁপে চারা লাগিয়ে প্রথমবারেই তিনি এ সফলতা পান।

এদিকে নতুন জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। প্রতিদিন লোকজন আসছেন পেপে বাগান দেখতে। অনেকেই এখন পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনার করছেন।

আরমান কাজী আরো বলেন মাকড়সা ও ছত্রাকনাশক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় নি। প্রতিদিনই কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে। ফলন ভালো রাখতে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই বাগান থেকে ২লাখ টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। তাছাড়া পেঁপে ও অন্যান্য সবজি বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি মাসে তার আয় হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

তিনি আরো বলেন পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি এ চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।

পেঁপে বাগান দেখতে মো: ইব্রাহীম ভূইয়া লিটন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আরমান কাজী এলাকায় একজন সফল কৃষক। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বাড়ি সংলগ্ন জায়গার মধ্যে সবজিসহ বিভিন্ন রকমারি ফল চাষ করছেন। তবে প্রথমবারের মতো পেঁপে বাগান করে তিনি বাজিমাত করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এখন উৎসাহ পাচ্ছেন পেঁপে চাষ করার। পরিশ্রম ও লক্ষ্য অটুট থাকলে কৃষিকাজে সফল হওয়া সম্ভব। উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বেল্লাল হোসেন বলেন সুইট লেডি পেঁপে জাতটি নতুন। এতে যেমন পোকার আক্রমণ হয় না তেমনি ফলন ও হয় বেশি। তাই বেকার যুবকরা এই পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে সহজেই। তার প্রমাণ আরমান মিয়া। তার সফলতা দেখে অনেকেই এখন আমাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পেঁপে একটি উৎকৃষ্ট সু-স্বাধু ফল, এটি সারা বছরই উৎপাদিত হয়।‘পেঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কৃষকের জন্য খুবই উপযোগী একটি ফসল, কারণ বার মাসই এ ফসলটি হয়ে থাকে। তিনি বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। পেঁপে চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আরমান মিয়াকে দেখে অনেকেই পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনমতো সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।’ বেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসেন তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা কৃষি সবসময় প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads