• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিধ্বস্ত সেন্টমার্টিন জেটি, সংস্কারের উদ্যোগ নেই

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

বিধ্বস্ত সেন্টমার্টিন জেটি, সংস্কারের উদ্যোগ নেই

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী থেকে ভরা পূর্ণিমাসৃষ্ট জোয়ারের প্রভাবে টেকনাফের সেন্টমার্টিনের একমাত্র পর্যটক জেটিটি ভেঙে যায়। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে দৈনিক পাঁচ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই জেটি দিয়ে জাহাজে উঠানামা করেন। সম্প্রতি ভারি বৃষ্টির ফলে জেটির অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উত্তাল ঢেউ একের পর একে জেটিতে আঘাত করতে থাকে। ফলে জেটির পন্টুনে ছোট-বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। এরপর উত্তাল সাগরের ঢেউ আঘাত হানার পর জেটির অধিকাংশ অংশ, রেলিং ও সিঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বর্তমানে একদিকে করোনা মহামারিতে দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাছাড়া দ্বীপে ব্যবসা সময়কালীন বলতে মূলত চার মাসকেই বুঝানো হয়। প্রতিবছরই অক্টোবর থেকেই পর্যটকের দ্বীপে আগমন ঘটে। ইতোমধ্যেই সেপ্টেম্বর মাস চলমান। বেশ কয়েকটি বছর ধরে পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই মেতে উঠে পরিবেশের তালবাহানা। করোনায় আর্থিক সংকটে পড়া ও মানবেতর জীবনযাপন থেকে উত্তরণ পেতে দ্রুত এই জেটি নির্মাণ করা না হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর জীবনযাপনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও আর্থিক সংকটের হুমকিতে পড়বে। এই জেটির ওপর নির্ভর করে দ্বীপের দশ হাজার মানুষের জীবন, কক্সবাজারের ১৫০টিরও ঊর্ধ্বে ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান, ঢাকা-টেকনাফ ট্রান্সপোর্টের কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, স্পিডবোট, ট্রলার, ফিশিং, দিনমজুর, রিক্সা ভ্যানসহ শত শত ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। দেশের একমাত্র এ প্রবালদ্বীপের জেটিতে নোঙর করে শত শত ফিশিংবোট, পণ্যবোঝাই ট্রলার, যাত্রীবাহী নৌকা ও পর্যটকবাহী নৌযান এবং ছোট-বড় অনেক জাহাজ। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে দিবারাত্রি সেন্টমার্টিন জেটিতে নোঙর করে শত শত নৌযান। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় এই জেটি ঘাট। এই জেটি ঘাট থেকে বছরে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় করে সরকার।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, আগামী পর্যটন মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে পর্যটকদের। এমন অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে জেটি মেরামত বা সংস্কার না করলে পর্যটন ব্যবসা ও মানুষের আসা-যাওয়া করা সম্ভব হবে না।

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা ও দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে ২০০২-০৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই জেটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির পার্কিং পয়েন্ট সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি গাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই জেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রতিবছর জেলা পরিষদ এই জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোনো ধরনের মেরামতকাজে হাত দেয়নি। তিনি বলেন, দ্বীপের মানুষের কষ্টের কথা ভেবে জেটি সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশাকরি, পর্যটক ও দ্বীপবাসীদের কথা চিন্তা করে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, জেটিটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে একদম ভেঙে হয়ে গেছে। জেটি বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads