• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সেই নীলগাই যুগল হলো যমজ সন্তানের মা বাবা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সেই নীলগাই যুগল হলো যমজ সন্তানের মা বাবা

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দেশের একমাত্র  নীলগাই জুটি পার্কের আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীর সবুজ অরণ্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক বছরের একটু বেশি সময় ধরে। এ দেশে বিলুপ্তির আট দশক পরে দেশের দুই সীমান্ত এলাকার মানুষের জবাইয়ের কবল থেকে উদ্ধারের পরে তাদের নিরাপদ আশ্রয় হয় সাফারি পার্কে। তবে তাদের টিকে থাকা নিয়ে ছিল দারুণ সংশয়।  তবে সব সংশয়কে পেছনে ফেলে সেই নীলগাই যুগল জমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে হইচই ফেলে দিল দেশে। স্বপ্ন বেড়ে গেল প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। তবে কি আবারও বনে ফিরতে পারে বিলুপ্ত নীলগাই নামের অপুরুপ সুন্দর এ প্রাণীটি ? মাস দেড়েক আগে নীলগাই যুগল দুটি শাবকের জন্ম দিলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ নিবির পর্যবেক্ষণ আর নিরাপত্তার কথা ভেবে তা গোপন রাখে। ইতোমধ্যে শাবক দুটি বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে দুরন্তপনায় বেড়ে উঠছে পার্কের কোর সাফারির আফ্রিকান সাফারিতে। এমনি বিষয়ে শুক্রবার সাংবাদিকদের ডেকে এ সুখবর দেন সাফারি পার্কে  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৪০ সালের পর এ দেশে নীলগাই দেখা যায়নি। এর পর বহু সময় অপেক্ষা করে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় নীলগাই নামের এ প্রাণীটিকে। দেখতে গরু বা গাইয়ের মতো না হলেও শরীরের নীলচে রঙের জন্যই ঘোড়ার মতো দেখতে প্রাণীটিকে নীলগাই বলা হয়। এ দেশে এ প্রাণীটি বিলুপ্ত হওয়ার কথা না থাকলেও কি করে হলো সেটাই বিস্ময় প্রাণী গবেষকদের। 

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, সাফারি পার্কের আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীর একটি অংশে আলাদা নিরাপদ বেষ্টনী তৈরি করে রাখা হয়েছিল নীলগাই দুটিকে। প্রথমে উদ্ধার হওয়া নারীটিকে রাখা হয় সে বেষ্টনীতে। এর পর দিনাজপুরের জাতীয় উদ্যান রামসাগর থেকে পুরুষ নীলগাইটিকে এনে একই বেষ্টনীতে রাখা হয়। তারা আরো জানান, দুটি নীলগাই মানুষ ধরে জবাই করার প্রস্তুতির সময় উদ্ধার হয়। ২০১৯ সালে শুরু দিকে নঁওগার মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকা থেকে পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করা হয়। পরে সেটি দিনাজপুরের রামসাগর উদ্যানে রাখা হয়েছিল। এ দিকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মামুদপুর ঠুঠাপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে একটি নারী নীলগাইটি উদ্ধার করা হয়। সেটি পার্কে আনা হয়েছিল সে সময়। পরে  উদ্ধার হওয়া এ দুটি নীলগাই (নারী পুরুষ) সাফারি পার্কে এনে একত্রিত করা হয়েছিল। 

গাজীপুর শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের প্রাণী নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তা সোহেল রানা সৈকত বলেন International Union for Conservation of Nature (IUCN) এর লাল বুক তালিকা (Red Data Book) অনুসারে নীলগাই ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো প্রাকৃতিক বনে নীলগাই অবশিষ্ট নেই। ১৯৪০ সালে সর্বশেষ প্রাকৃতিক অবস্থায় পঞ্চগড়ে নীলগাই চোখে পড়েছিল। 

সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সরোয়ার হোসেন খান বলেন, প্রকৃতিতে নীলগাই দশ থেকে এগার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এশিয়ার এন্টিলোপ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো নীলগাই। যা আমাদের দেশে বিলুপ্ত। এ প্রজাতির পুরুষদের শিং হয় ও কালচে রঙের হয়ে থাকে আর নারীদের শিং থাকে না আর গাঢ় বাদামি রঙের হয়ে থাকে। নীলগাই এক থেকে তিনটি পর্যন্ত বাচ্চা একত্রে জন্মের রেকর্ড রয়েছে। নয় মাস গর্ভকালিন সময় পরে বাচ্চার জন্ম হয়। নারী নীলগাই দুই বছরে আর পুরুষ পাঁচ বছরে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। নীলগাই ৫০% জমজ শাবকের জন্ম দেয়। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম ফিরোজ জানান, সকল বন্য প্রানিকেই উপযুক্ত পরিবেশে রাখতে পারলে বংশবৃদ্ধি করবে। নীল গাইয়ের ক্ষেত্রেও একই সূত্র। উপযুক্ত পরিবেশে এ সুখবর এলো। 

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান  জানান, সাফারি পার্কে এক জোড়া নীলগাই বসবাস করছে আফ্রিকান বেষ্টনীর একটি অংশে। তাদের একত্রিত করার কিছু দিন পরেই তাদের ব্রিডিং চোখে পড়ে। সেই থেকে নিবির পর্যবেক্ষনে ছিল নীলগাই যুগল। এ বছরের আগস্টের ১ তারিখে পার্কে নীলগাই রাখা বেষ্টনীতে জমজ দুটি শাবকের জন্ম হয়। একটি শাবক পুরুষ তা নির্ণয় করা গেলেও অন্যর লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়নি। এ দেশে আট দশক পর এমন বিস্ময়কর সুখবর পার্কের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের মিলিত কর্মের গৌরব। আশা করি, আমাদের সম্মনিত কাজে এ গৌরব অব্যাহত থাকবে আগামীতেও। এ মৌসুমে পার্কে বেড়াতে আসা দর্শনাথীদের ভিন্ন আনন্দ মিলবে নীলগাই শাবক দর্শনে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads