• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এক বছরের কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

আখাউড়া-বনগজ সেতু নির্মাণ কাজে ধীরগতি

এক বছরের কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে একটি সেতু নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে। এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলে ও প্রায় ৪ বছরে অর্ধেক কাজ ও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এখনো বাকি রয়েছে অর্ধেকের ও বেশী কাজ।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণ কাজে ধীরগতি হওয়ায় প্রায় ১০ কিলোমিটার পথপারি দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়াগুনে তাদের প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অন্তত ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দূর্ভোগ যেন শেষ নেই। দ্রুত সেতুটি নির্মাণে স্থানীয় লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানায়। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লেঅকজন বলছেন, সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন এবং বর্ষার কারণে নির্মাণ কাজ শেষ করতে তাদের কিছুটা সময় লাগছে।

জানা যায়, পৌর শহরের বড় বাজার থেকে উপজেলার ধরখার পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার একটি সড়ক পথ রয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন, ধরখার ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে।

বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের বনগজ এলাকায় একটি খালে কুড়ের (বড় গভীর গর্ত) কারণে সেতু না থাকায় যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে তাদের খাল পারাপার করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ওইসব এলাকার লোকদের যেন দু:খের যেন সীমা থাকে না।

এদিকে এলাকাবাসীর এ দুর্ভোগ লাঘবের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুড়ের উপর একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। যার দৈর্ঘ ৯৬ দশমিক ১০ মিটার দীর্ঘ ও প্রস্থ সাড়ে ৫ মিটার। সেতুর দরপত্র মূল্য পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ ৪১ হাজার ৯২৭ টাকা। নির্মাণ কাজের সময় ধরা হয়েছে এক বছর। কিন্তু গত প্রায় চার বছর অতিবিহিত হলেও অজ্ঞাত কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে ওই সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, পথচারী কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তাদের যেন দু:খের সীমা নেই।

স্থানীয় লোকজনরা জানায়, বনগজ এলাকাটি হচ্ছে একটি কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে নানা প্রকার সবজি চাষ করা হয়। সেইসাথে করা হচ্ছে ধান ও। তবে সবজির জন্য এলাকা বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার সবজি উপজেলার আশপাশসহ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রেলওয়ে স্টেশন, স্কুল-কলেজ মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ বনগজ-আখাউড়া সড়কটি ব্যবহার করে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের বনগজ এলাকায় একটি খালে কুড়ের (বড় গভীর গর্ত) কারণে যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে কৃষিপণ্য বিক্রিতে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তাছাড়া সেতুটি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ না করায় এই গ্রামসহ আশপাশের মানুষদের যাতায়তের সুবিধার চেয়ে বর্তমানে অসুবিধা হচ্ছে বেশী। কবে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কে উইং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে ছয়টি পিলার নির্মাণ করা হয়। সেতুর পূর্ব দিকের একটি অংশের তিনটি গাডার ডালাই করা হয়েছে। সেতুটির বেশী ভাগ অংশই কাজ বাকী রয়েছে। শুস্ক মৌসুমে পায়ে হেটে নিচে দিয়ে চলাচল করলে ও বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চড়ে নদী পারাপার হতে হয়। বর্তমানে নানা অজুহাতে কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বনগজ এলকার মো. আবু তাহের মিয়া বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হলে প্রথমে তিনি খুশি হয়ে ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি অবশেষে সেটি পুরণ হতে চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সেতুটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ায় তাদের ভোগান্তি যেন শেষ নেই।

কৃষক মো. তামসু মিয়া বলেন, সেতু না থাকায় তাদের কষ্টার্জিত ফসল ভালো দাম পাচ্ছেন না। তাছাড়া ধান কাটার সময় অনেক দুর দিয়ে কষ্ট করে ধান বাড়িতে আনতে হয়। এ জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়।

গৃহিণী আয়েশা আক্তার বলেন, এ সেতুটি নির্মাণ না হওয়ার ফলে সহজে আমরা স্বল্প সময়ে উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করতে পারছি না। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে অনেকদুর ঘুরে শহরে যেতে হচ্ছে। মো. কাশেম মিয়া বলেন, সেতুর কারেেণ সব চেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী নিয়ে। ইচ্ছে করলে সহসায় হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা যাওয়া করা যায় না। ১০ মিনিটের রাস্তা এক ঘন্টা লেগে যায়। তবে রাতের বেলায় কষ্টের যেন সীমা নেই।

আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, এক বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ করার কথা থাকলেও প্রায় ৪ বছর হয়ে গেছে। এখনও অর্ধেকৈর বেশী অংশ বাকী আছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতু নির্মাণে তাল বাহানা শুরু করায় কাজের গতি নেই।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বাবুল মিয়া বলেন, সড়কটি নির্মাণ হলে আখাউড়া থেকে ধরখার পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে যেতে পারতাম। এতে আমাদেরও আয় রোজগার বেশি হতো, যাত্রীদেরও অনেক সুবিধা হতো।

এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন বনগজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর। তিনি বলেন, এ সেতুটি বনগজ এলাকার দু:খ। এ এলাকায় তিনটি সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে শিক্ষকরা এখানে আসতে চায় না। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীরাও কষ্ট করে যাতায়াত করে।

মো. ইকরাম হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠালে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সেতু থাকলে এ চিন্তা হতো না। সেতুর কাজে নিয়োজিত নির্মাণ শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, সেতুর মূল কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন গাডার ঢালাই এবং ছাদ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তিনটি গাডার ঢালাই হয়ে গেছে। নয়টি গাডারের উপর তিনটি ছাদ দেওয়া হবে। তাহলেই সেতুর কাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে সেতুর ঠিকাদার মো.খাইরুল হাসান ও আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বৃষ্টিপাত ও সেতুর ডিজাইনে ত্রুটির কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা অসুবিধা হয়। তবে এখন কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। আশা করি, ৫/৬ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads