• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
থামছে না সবজি মাঠে বিষপ্রয়োগ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

থামছে না সবজি মাঠে বিষপ্রয়োগ

  • প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি ২০২২

দেলোয়ার কবীর, যশোর থেকে ফিরে

’৮০-এর দশকে যশোরের বাঘারপাড়া থেকে শুরু হয়েছিল বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন কর্মযজ্ঞ। বৃহত্তর যশোরের কৃষকরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে যখন ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে, মানব সম্প্রদায় পড়ে বিরাট স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এমন সময় কৃষক সংগঠক আয়ুব হোসেনের নেতৃত্বে যশোর সদর, বাঘারপাড়া, মাগুরা সদর ও শালিখা উপজেলার ৬২টি গ্রামের হাজারো কৃষক শুরু করেন বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম গবেষণাকেন্দ্র, ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলসহ বাংলাদেশ, মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউট এবং আন্তর্জাতিক কৃষিবিষয়ক সংস্থাগুলো এগিয়ে আসে বিশাল এ কর্মযজ্ঞে। কৃষি তথ্য সার্ভিস এলাকার কৃষকদের আধুনিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে তথ্য দিতে স্থাপন করে একটি কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের একজন সিনিয়ির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে চালিয়ে যেতে থাকে ফেরোমেন ট্র্যাপ কর্মকাণ্ড। মাত্র ৬-৭ বছরের মধ্যেই কৃষকরা সরে আসেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক থেকে আর মাঠে মাঠে প্রয়োগ হতে থাকে প্রাকৃতিক বালাইনাশক, গোবরসার ও কেঁচোকম্পোস্ট। কিন্তু বাঘারপাড়ার বন্দবিলা নিমটা, কোটরাকান্দি ও পাঠানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠে দেখা গেল উল্টোচিত্র। কৃষকরা সমানে ছিটাচ্ছেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, আর এর বিকট গন্ধ ঢুকছে নাকে-মুখে। ফুলকপি, বাঁধকপি, সিম, উচ্ছে, করলা, মুলা কোনো ক্ষেতই বিষমুক্ত নয়। ওসব গ্রামের কৃষকরা জানালেন, কৃষক সংগঠক আয়ুব হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সংবাদকর্মী লক্ষণচন্দ্র মণ্ডল, আব্দুস সামাদ মণ্ডল, যশোরের আব্দুর রাজ্জাক ও কতিপয় প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন মানুষের সহযোগিতায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রাণ ফিরে আসে কৃষকদের মধ্যে। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন কর্মকাণ্ড যেন তাদের সাধনায় পরিণত হয়। ওই এলাকার ফসল বিশেষ করে সবজি ঢাকা, কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরসহ দেশের বেশ কিছু বাজারে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিক্রি হতে শুরু করে। আর কৃষকদের ভাগ্যও দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করে। কিন্তু ২০১৭ সালে ১৬ জানুয়ারি আয়ুব হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে কৃষকদের সেই উৎসাহ উদ্দীপনায় যেন ভাটা পড়তে শুরু করে।

কৃষকদের মতে, তারা নিজেদের খাবারের জন্য উৎপাদিত সবজির ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেন না। তবে বিক্রির জন্য উৎপন্ন করা ফসলের ক্ষেতে তা দেন। তবে বিক্রির দিনে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেন না। তাদের মতে, ফসলকে বিষমুক্ত রাখতে ফেরোমেন ট্র্যাপ অপরিহার্য হলেও তা স্থানীয় পর্যায়ে পাওয়া কঠিন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও ফেরোমেন ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে ততটা আন্তরিক নন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাঘারপাড়া উপজেলা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বাজারে প্রচুর পরিমাণে ফেরোমেন সরবরাহের কথা বললেও ওই অধিদপ্তরের যশোর জেলার উপপরিচালক বাদলচন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে তিনি ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কথা স্বীকার করে বলেন, ফেরোমেন ট্র্যাপ এখনো বাজারে প্রতুল নয়। তিনি জানান, কৃষকদের প্রাকৃতিক কৃষিতে ফিরিয়ে আনতে তারা প্রতিটি কৃষককে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। গোবরসার ও ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহারে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন যেহেতু একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কৃষকরা তাৎক্ষণিক লাভের আশায় আবার তাদের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ শুরু করেছেন, তবে তারা এতে তেমন লাভবান হতে পারছেন না। কৃষক ও কৃষির স্ব্বার্থে তিনি ফেরোমেনসহ সব কৃষি উপকরণ স্থানীয় পর্যায়ে সহজলভ্য করা, বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আমদানি হ্রাস, ওইসব বিক্রেতা ডিলারদের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রাকৃতিক বালাইনাশক ও সার ডিলারদের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন। এতে যশোরসহ সারা দেশে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন কার্যক্রম বাড়বে এবং দেশবাসী নিরাপদ সবজি এবং অন্যান্য ফসল ভোগ করতে পারবেন বলে উপপরিচালক বাদলচন্দ্র বিশ্বাস মনে করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads