• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
২০ টাকায় সূর্যমুখী দর্শন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

২০ টাকায় সূর্যমুখী দর্শন

  • সুজন বর্মণ, নরসিংদী
  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০২২

সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা মুখের এক ফুলের নাম সূর্যমুখী। আর তা যদি হয় দিগন্তবিস্তৃত মাঠজুড়ে হাজার হাজার এ ফুলের সমাহার। তবে তো কথাই নাই। সূর্যমুখীর হলুদের আভায় চারিদিকে যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতায়। ফুলের পাঁপড়িগুলো বাতাসে দোল খেয়ে খেয়ে দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এর সৌন্দর্য উপভোগে। এমনই এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের দেখা মিলছে নরসিংদীর শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী সূর্যমুখী ফুলের বাগানে। এর মায়া পড়ে অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ভিড় করছে এই ফুলের বাগানে। তবে বাগানের এউ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে গুনতে হবে মাত্র ২০ টাকা।

জানা যায়, নরসিংদী সদরের কামারগাঁও এলাকায় ৯ বিঘা জমির ওপর তৌহিদুল ইসলাম মাসুম ও মিনহাজ মোল্লা ফাহিম সূর্যমুখী ফুলের বাগান গড়ে তোলেছেন। ৯ বিঘা জমি চাষে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্জাশ হাজার টাকা। তবে মাসুম ও ফাহিমের সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি তার অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে দিনকে দিন মানুষের কাছে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে নরসিংদীসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসছে। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসছে। কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। এবং অনেকে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মাঝে ছোট মৌমাছিগুলোও থেমে নেই, ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত তারা। সকালে থেকে বিকেল পযর্ন্ত জায়গাটি নানা বয়েসের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

সরেজমিনে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদীর শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন মেঘনা তীরবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে বাগানটি গড়ে উঠেছে। প্রধান সড়ক থেকে নামলেই দৃষ্টিনন্দন গেটের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হয়েছে। বাগানে প্রবেশ করতে হলে টিকিট কউন্টার থেকে ২০ টাকার টিকিট কিনে নিতে হবে। বাগানে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে নান্দনিক গেট, সেলফি বুথ ও ওয়াচ টাওয়ারের। যার মাধ্যমে বাগানের সৌন্দর্য আর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেঘনার তীরে সূর্যমুখী বাগানে কেউ এসেছে প্রিয়জনের সঙ্গে, আবার কেউ পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছে। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সকলকেই মোবাইল ফোনের ছবির মাধ্যমে নিজেদের বন্ধী করতে দেখা গিয়েছে। নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দ্রী থেকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছে সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পরীক্ষার কারণে অনেকদিন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া হয়নি। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তাই বন্ধুদের নিয়ে সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে এসেছি। মেঘনা নদী আর সূর্যমুখী বাগানের অপরূপ দৃশ্য একসঙ্গে উপভোগ করতে ভালোই লাগছে। পাশেই সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তোলছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র নয়ন খান। তিনি বলেন, আমরা শহরে থাকার কারণে প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্য থেকে বঞ্জিত। শুধু সূর্যমুখী বাগান এত সুন্দর হবে এখানে না আসলে জানতাম না। আর বাগানটিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। যার কারণে সময়টা ভালোই কেটেছে।

এদিকে ফেসবুকের টাইমলাইনে ভাসছে সূর্যমুখীর হলুদের আভায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া অপার মুগ্ধতার ছবি। সকলেই সূর্যমুখী ফুলের রাজ্যের সৌন্দর্যের কথা জানিয়ে ঘুরাঘুরির ছবি পোস্ট করছে। যার ফলে অন্যরা ও বাগানে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করছে। বাগানে কথা হয় নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নিহারীকা মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ফেসবুকে বান্ধবীদের সূর্যমুখী বাগানের ঘোরার ছবি দেখে আমি ও ঘুরতে এসেছি। ছবিতে যা দেখেছি বাস্তবে বাগান তার চেয়েও বেশি সুন্দর। মেঘনার মৃদু বাতাসের সঙ্গে সূর্যমুখী বাগান আমাদের মনকে বিমোহিত করেছে।

তবে দর্শনার্থীরা বলছে নরসিংদী শহরে চিত্তবিনোদনের খুবই অভাব। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা চিত্তবিনোদনের অভাবে মোবাইল ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট আর গেম খেলার দিকে ঝুঁকছে। এর আগে শহরবাসী নিজেদের ছুটির দিনে নরসিংদী শেখ হাসিনা সেতুতে ঘুরাঘুরি করে সময় কাটাত। এখন সূর্যমুখী বাগানের কথা জানতে পেরে সকলেই বাগানে ভিড় জমাচ্ছে। শহরের সংগীতা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছে আকবর হোসেন। তিনি বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করার মতো বিনোদন কেন্দ্রের খুবই অভাব। আর তারা ঘরে বসে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য বাগানে ঘুরতে নিয়ে এসেছি।

সূর্যমুখী বাগানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের কাছে প্রতিদিন ৫০০ টিকিট বিক্রি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে বাগান মালিক। তবে ছুটির দিন আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়। বাগানটিকে দর্শনার্থীরে জন্য ফুড কোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে। আর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নদীর কিনার ঘেঁষে বেঞ্জের ব্যবস্থা রয়েছে। বাগানটি পরিচর্যা ও দেখাশোনা করার জন্য প্রায় ২৫ জন কর্মচারী রয়েছে।

সূর্যমুখী বাগানের উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম মাসুম বাংলাদেশের খবকে বলেন, সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল উৎপাদনের উদ্দেশে বাগান করা হলেও দর্শনার্থীদের আগ্রহের কারণে বাগানটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে রূপ দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাগানটিতে নান্দনিক গেট, সেলফি বুথ ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। আমরা টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ফুল বিক্রি করে প্রতি বিঘা প্রতি এক লক্ষ টাকা আয় করতে পারবো বলে আশা করছি। আর চলতি বছর ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় আগামী বছর বড় পরিসরে পরিকল্পিত সূর্যমুখী বাগান করার পরিকল্পনা করেছি।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ বলেন, চলতি বছর জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও বীজ দিয়ে সাহায্য করে থাকি। বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষের জানার কারণে চাষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সূর্যমুখী বাগানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকায় অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য চাষ করছে। তবে কৃষকদের ফুল ও বাগান নষ্ট না করে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের অনুরোধ করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads