• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১৪ মার্চ ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ভুট্টার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই এখন সবুজের সমারোহ। মাঠ জুড়ে ঝিলমিল করে বাতাসে দোলছে ভুট্টার সবুজপাতা। সহজ চাষ পদ্ধতি , পোকার আক্রমণ রোগবালাই কম হওয়া, কম সেচ , বাজারে ভালো চাহিদা থাকা, কম খরচে বেশী মুনফা অর্জন করায় দিন দিন এ চাষ বেশ জনপ্রিয়তা হয়ে উঠছে । বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবছর কৃষকরা এ চাষ করেছেন বেশি। অনুকুল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এদিকে উপজেলায় অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টার আবাদ করছেন বলে জানায়। বর্তমানে আটার বিকল্প ও গো খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে কৃষকরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর শহরের তারাগন, উপজেলার আমোদাবাদ, আদমপুর, নিলাখাত, জয়পুর, ইটনা,রানী খার ধরখার, রুটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভুট্টার চাষ হয়েছে। গ্রামগুলোর চারদিকে সাড়ি সাড়ি হয়ে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রয়েছে কিছু সবুজ আবার কিছু বাদামি রঙের। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। গাছে ঝুলছে ভুট্টার মোচা। ইতিমধ্যে অনেক গাছ থেকে চলছে মোচা কেটে নেওয়ার কাজ। কৃষকেরা মাঠ থেকে ভুট্টা কেটে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। কেউ বা সেগুলো মাড়াইয়ের কাজ করছেন। সবমিলিয়ে এ উপজেলার কৃষকেরা ভুট্টা নিয়ে এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা ভুট্টার উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ভুট্টায় রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন। যা রক্তের লোহিত কণার প্রয়োজনীয় খনিজের চাহিদা পূরণ করে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে, ভুট্টায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল শরীরে ইন্সুলিনের শোষণ ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন বলে এখানকার কৃষকেরা জানান। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় কৃষকরা দিন দিন এখন ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভুট্টা সাধারণত সেদ্ধ ও পুড়িয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া ভুট্টার পাতা গো-খাদ্য হিসেবে, মোচা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত বেলে ও ভারি এটেল মাটি ছাড়া অন্য সব মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। সরকার এ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেন। দিন দিন বাড়ছে এ চাষের আবাদ। তাছাড়া রোগ-বালাই এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষের আবাদ।

উপজেলার ধরখার এলাকার কৃষক মো: বাবুল মিয়া বলেন, তিনি গত দুই বছর ধরে কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতক জায়গায় ভুট্টা আবাদ করেন। এ চাষে বীজ ও সার বিনা মূল্যে সরকার থেকে পেয়েছেন বলে জানায়। ভুট্টা আবাদ করতে পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানোসহ তার ৮ হাজার টাকা তার খরচ হয়। আগামী সাপ্তাহের মধ্যে ভুট্টা কাটা শুরু হবে। বর্তমানে জমিতে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কোন দুর্যোগ না ঘটলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

কৃষক মো: ঈদন মিয়া বলেন, সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সরকার কর্তৃক পাওয়ায় ২৫ শতক জায়গায় তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। বোরো ধান চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ফলে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম দামও তেমন বেশি থাকে। এ জন্য তিনি গত কয়েক বছল ধরে ভুট্টা আবাদ করছেন।তিনি আরো বলেন এই জমিতে যদি ধান চাষ করা হতো তাহলে ৭-৮ হাজার টাকার বেশী ধান পাওয়া যেতো না। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৫শ টাকায় । ভুট্টা আবাদে খরচ বাদে অন্তঃত ১৩-১৫ হাজার টাকা তার আয় হবে জানায়।

কৃষক আসমান খাঁ বলেন, তাঁর বাড়ি সংলগ্ন ১ বিঘা জমিতে এ বছর ভুট্টা চাষ করেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে ভুট্টা কাটা হবে। তিনি আশা করছেন যাবতীয় খরচ বাদে এ চাষ থেকে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হবে। তিনি আরো বলেন ভুট্টার কোন কিছুই ফেলে দেওয়া হয় না। এর পাতা গরুকে খাওয়ানো হয়, তাছাড়া ডাটা, মোচা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে করে কৃষকরা সহজভাবে কৃষি উপকরণ পেয়ে ফলন বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে ভূট্টা চাষ করতে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের ভূট্টার বিজ ও সার বিনামূল্যে দেয়া হয়। বীজ, সার ও তেলের জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। গত বছরের চেয়ে এবার লাভজনক ভুট্টা চাষাবাদ কিছুটা বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads