• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অ্যাম্বুলেন্স আছে চালক নেই, দুর্ভোগ চরমে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

অ্যাম্বুলেন্স আছে চালক নেই, দুর্ভোগ চরমে

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। গত প্রায় দেড় বছর ধরে কোন চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স দুটি কোন কাজে আসছে না রোগীদের। এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হচ্ছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটো রিকশার ওপর। ফলে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়তে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা জানায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকার কারণে তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় কয়েকগুন বেশী টাকা গুনে রোগী নিয়ে যেতে হচ্ছে জেলাসহ অন্য জায়গায়। তাইতো দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার দাবি জানান রোগী, রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ ৪টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩টি ও ভারতের দেওয়া একটি রয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে এটি হস্তান্তর করা হয়।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩টির মধ্যে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে দুটি অ্যাম্বুলেন্স অনেক আগেই অচল হয়ে গ্যারেজ বন্দী হয়ে আছে। বাকী দুটি থাকলেও চালকের অভাবে অনেক দিন ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৬ ফেব্রয়ারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো: তাজুল ইসলাম পেনশনে চলে যায়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি চালক আবু বকরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে বকর যখনই তার মূল দায়িত্বে ফিরে যাওয়ায় নতুন করে শুরু হয় চালক সংকটের এ জটিলতা। তাছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে পড়ে থাকায় যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় সুযোগ নিচ্ছে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স । তারা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চাইতে কয়েকগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় তাও পাওয়া যায় না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

উপজেলা দক্ষিণ ইউনিয়নের মো: মাহফুজুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন,গত রাত হঠাৎ করে তার মায়ের বুকের ব্যাথা শুরু হয়। তাই সকালে চিকিৎসা নিতে তার মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতলে নেয়ার পরামর্শ দেন। মাকে এম্বুলেন্সে নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ চালক নেই বলে জানান। পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট কারের মাধ্যমে মাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এতে করে তাকে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

মো: ইব্রাহিম ভূইয়া নামে এক রোগীর স্জন জানায়, গত ৩ দিন আগে তার স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় মাইক্রো নিয়ে তাকে যেতে হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাখায়াত হোসেন নয়ন জানান, রাতে আমার এক নিকট প্রতিবেশী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের লোকজন আমাকে একটি অ্যাম্বলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক চেষ্টা তদবির করি। হাসপাতালে কোনো চালক না থাকায় কর্তৃপক্ষ রোগীর জন্য অ্যাম্বলেন্সের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি।

আবুল কালাম নামের এক ব্যবসায়ি জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে স্থানান্তরিত রোগীদের ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বলেন্স, মাইক্রোবাস ও সিএনজি চালিত অটো রিকশার ওপর। এতে বাড়তি ভাড়াসহ ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় এ রোগীদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার -পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো: হিমেল খান বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর পরেই অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌরসভার মেয়রকেও অবগত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন দ্রুত সময়ে শূন্যপদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স চালক পদায়ন হলে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads