• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
তিন বছরে মৃত্যু ৩০, নিখোঁজ ৫০

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

শরীয়তপুরে মানব পাচার

তিন বছরে মৃত্যু ৩০, নিখোঁজ ৫০

  • শরীয়তপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২২

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, জাজিরাসহ ৬টি উপজেলায় ৩ বছরে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ৫০ জন। পুলিশ বলছে, মানব পাচারের মামলাগুলো দায়ের হওয়ার পর দালালদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তরা আপোষ মীমাংসা করে ফেলে। ফলে এদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নেয়া যায় না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, উচ্চ আয় ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে স্থানীয় দালালরা জেলার তরুণ-যুবকদের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যেতে রাজি করাচ্ছেন । পথে পথে দালালদরে হাতবদল হয়ে কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলওে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। সন্তান-সম্পদ খুইয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে পরিবার।

নড়িয়া উপজেলার মুলপাড়া গ্রামের কামরুল হাসান (বাপ্পী)। গত নভম্বেরে ইতালি যাওয়ার উদ্যেশে দেশ ছাড়েন ২২ বছরের এই তরুণ। ওই মাসেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান তিনি। কিন্ত কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছানো হয়নি তাঁর। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালীর লাম্পেদুসা দ্বীপে যাওয়ার পথে গত ২৫ জানুয়ারি ঠান্ডায় জমে মারা যান তিনি।অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে গত তিনি বছরে কামরুল হাসানসহ শরীয়তপুর জেলার ১৫ তরুণ মারা গেছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ৩০ জন। মৃত্যু ও নিখোঁজ দুটোই বেশী নড়িয়া উপজেলায়।ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যুর প্রধান কারণ নৌকাডুবি প্রচণ্ড গরম ও ঠাণ্ডা।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে নড়িয়া উপজেলার ১০ তরুণ নৌকাডুবিতে মারা যায়। এ ছাড়া ২০২১ সালে নৌকাডুবিতে সদরে দুজন, গরমে অসুস্থ হয়ে নড়িয়ার দুজন, এ বছরের জানুয়ারিতে ঠাণ্ডায় নড়িয়ার আরেক তরুণ মারা যায়।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি নড়িয়ার ১৫ জন। এ ছাড়া সদর উপজেলার পাঁচজন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চারজন ও জাজিরার ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে এসব নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।পরিবারগুলো নিঃস্ব গত ২৫ জানুয়ারী ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় মারা যাওয়া কামরুল হাসান ছিলনে আবুল বাশার ও লাভলি বাশারের একমাত্র ছেলে। তাকে ইতালি পাঠাতে স্থানীয় এক দালালের সঙ্গে আট লাখ টাকায় চুক্তি হয় এ পরিবারের। এখন একমাত্র ছেলে ও অর্থ হারেিয় অসহায় কামরুল হাসানের বাবা আবুল বাশার কাজী। তিনি প্রথম বলেন, ছেলে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছিল । অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিপদ জেনেও ছেলেকে সমুদ্রপথে ইতালি পাঠাই। কিন্তু ছেলে আমার লাশ হয়ে গেল।

২০১৯ সালে ১৫ মে নড়িয়ার ১০ তরুণ ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়িা উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যান। তাদের একজন পারভজে মৃধা। তার মা পারভীন আক্তার বলনে, স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ৯ বন্ধুর সঙ্গে পারভজে সমুদ্রপথে ইতালি রওনা হয়। সমুদ্রে নৌকা ডুবে সবার সঙ্গে তার ছেলে ও মারা যায়। ছেলের লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, জমি বিক্রি করে ছেলেকে পাঠাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেই। ছেলে ও সম্পদ দুটোই হারিয়েছি। শোকে আমার স্বামীও মারা গছেনে।

পুলিশ জানায়, ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনায় গত তিন বছরে মামলা হয়েেছ ৪৭টি। এর মধ্যে ২৫টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ১২টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদেন দিয়েছে পুলিশ। ১০টি মামলার তদন্ত কাজ চলছে।

অভিযোগপত্র দেওয়া ২৫টি মামলার মধ্যে ৯টির নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলার আসামীরা খালাস পেয়েছেন। আর বাকি ১৬টি মামলার বিচার কাজ চলছে। মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে স্বজন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে মীমাংসা করে ফেলছেন।

শরীয়তপুররে পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান বলেন, মানব পাচারের মামলাগুলো হওয়ার পর দালালচক্র ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মীমাংসা করে ফেলে। এতে সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে মামলাগুলো বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া যায় না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads