• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা

  • নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০২২

১২ লাখ টাকা ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছে স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পেশায় রং মিস্ত্রি। একই সাথে মাদকাশক্ত ও জুয়ারী। জুয়ার টাকা যোগার করতে নিহত রাহিমা বেগম এর নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা,শ্বশুর-শ্যালক ও শ্যালকের (বিয়াই) কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও সুদে আরো দুই লক্ষ টাকা সহ সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নেন। এই সকল ঋণ নিহত রাহিমা বেগমের নামে আনা হয়। সুদে আসলে ঋণের টাকা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য নিহতের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের উপর চাপ ছিল। সর্বশেষ জুয়া খেলার মতো কোন টাকা তার হাতে ছিল না। তাই বাড়ির আঙ্গিনা থেকে কয়েকটি গাছ বিক্রি করেন। তা নেওয়ার সময় প্রতিবেশি চাচাতো ভাই রেনু মিয়ার সাথে ঝগড়া হয়। এরই মধ্যে সে জানতে পারে ঋণ গ্রহিতা ব্যক্তি মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এই চিন্তা চেতনা থেকে গিয়াস স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত গিয়াস রাতে বাড়ি ফিরে সন্তানদের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত আড়াইটার দিয়ে স্ত্রীকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও গরু জবাই করা ছুড়ি দিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। স্ত্রীকে হত্যার পর সন্তানরা সবাইকে বলে দেবে, এই ভয়ে গিয়াস সন্তানদেরকেও হত্যা করে। হত্যার পর পুলিশ ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরে সকালে তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনে।

এ হত্যার ঘটনায় রোববার রাতে নিহতের রাহিমার ভাই মোশারফ হোসেন বাদি হয়ে অজ্ঞাত নামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পিবিআই এর কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার বিকালে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই সময় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের বিচারক রাকিবুল হক এর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্ধিতে হত্যার নেপথ্যের কারণ সহ নানা দিক উল্লেখ করা হয়। জবানবন্দি শেষে গিয়াস উদ্দিন শেখকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো: এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, গিয়াসের আচরণ দেখে প্রথমেই আমাদের সন্দেহ হয়। সে আমাদের যেসব তথ্য দিয়েছে তা তথ্য - প্রযুক্তি মাধ্যম ব্যবহার করে যাচাই করলে সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরে তাকে আটক করে জিঞ্জাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যে হত্যায় ব্যবহ্নত ছুরি ও ব্যাট উদ্ধার করা হয়। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে ও সব স্বীকার করেছে। পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

উল্লেখ্য: রোববার দিবাগত রাতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের শেখবাড়ি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও ঋনের বোঝা থেকে বাঁচতে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫),তার ছেলে সন্তান রাব্বি (১৩) ও মেয়ে রাকিবা আক্তার (৬) হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর গিয়াস পালিয়ে যায়নি। বাড়িতে থেকেই পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিথ্যে তথ্য দেয়া শুরু করেন। একই সাথে ঝগড়ার রেশ ধরে প্রতিপক্ষ রেনু মিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বেলাব থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সহ সাংবাদিকেদের নিকট অভিযোগ করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় পিবিআই । নানা বিচার বিশ্লেষণ শেষে নিহতের স্বামী গিয়াসের অসংঙ্গতিপূর্ন আচরণে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো: এনায়েত হোসেন মান্নান এর সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই এর কাছে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads