• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
লিচু বাগানে সেলফি ছবিতে ব্যস্ত দর্শনার্থীরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

লিচু বাগানে সেলফি ছবিতে ব্যস্ত দর্শনার্থীরা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০২২

সকাল দুপুর, বিকাল লিচু বাগানে বাগানে উপচেপড়া ভিড়। কেউ আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে, আবার কেউ বা আসছেন বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয় স্বজন নিয়ে। সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউবা করছেন ক্রয়। আগত লোকদের মধ্যে আবার অনেকেই ফ্রেমে বন্দী করতে লিচু বাগানে তুলছেন সেলফি কেউ বা ছবি। প্রতিদিন নানা বয়সি লোকদের বাড়ছে ভিড় ও। এ কারনে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাগান মালিকদের। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে। কারণ এখন লিচুর ভরা মৌসুম চলছে। মৌসুমি ফল লিচুকে কেন্দ্র করে বেড়ে গেছে এলাকায় দর্শনার্থীদের সমাগম। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় নিত্যদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত লোক লিচু বাগানে ঘুরতে আসছেন । ইতিমধ্যে লিচু পাকতে শুরু করায় দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠছে এলাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া ও বিজয়নগর এ দুই উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাজারে চলছে লিচুর বিকি কিনি। বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে এখানকার লিচু রসালো,মিষ্টি ও স্বাধে অুুলনীয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এর কদর রয়েছে বেশ ভালো।

দুই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের নারী পুরুষ সভাই লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন ভরা মৌসুম থাকায় লিচুতে মেতে উঠেছে পুরো এলাকা। প্রতিদিন গড়ে স্থানীয় বাজারে অন্ত:ত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে চাষিরা জানায়।

এদিকে আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাত, বিজয়নগরের পাহাড়পুর, সেজামুড়া, কামালমুড়া, গিলামুড়া, জলিলপুর, মুকুন্দপুর,চানপুর,ভিটিদাউদপুর,খাটিংগা, বিষ্ণুপুর, ছতুরপুর, কালাছড়া, বক্তারমুড়া, শ্রীপুর, নোয়াগাও, পত্তন, আদমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর এলাকায় লিচু নিয়ে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাগানে বাগানে চলছে লিচু সংগ্রহের কাজ। গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে মহিলাসহ সব বয়সের লোকজন কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ দিন মজুর হিসাবেও কাজ করছেন।

এখন লিচু ভরা মৌসুম হওয়ায় বাগানগুলোতে নানা বয়সি লোকদের উপচে পড়া ভিড়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রাইভেটকার, সিএনজি অটো রিকসা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন করে লিচু বাগানে তারা আসছেন। এরমধ্যে

কেউ স্ত্রী, পুত্র নিয়ে, কেউ বা এসেছেন পরিবারের সদস্য নিয়ে ,আবার কেউ বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন নিয়ে ওইসব জায়গায় লিচু বাগানে আসছেন। আর এই আনন্দগন সময় স্মৃতিময় করতে অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বা ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ লিচু ক্রয় করছেন।
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কসবা এলাকা থেকে লিচু বাগান ঘুরে দেখতে এসেছেন স্ত্রী, মেয়েসহ একই পরিবারের ৪ জন সদস্য। প্রবাসী মো. মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকার লিচু বাগান দেখা হয়নি। গত ১৫ দিন আগে বাড়িতে আসা হয়। তাই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে এখানে আসা। বাগানে ছবি তুলেছি, লিচু খেয়েছি এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কেনা হয় বলে জানায়।

আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকা থেকে আসা প্রভাষক সমীত্র সাহা বলেন, দীর্ঘ দিন নানা কারনে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে বাড়ি থেকে কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই লিচু বাগান দেখতে আজমপুর এলাকায় আসা হয়। লিচু বাগান দেখে সবাই খুবই মুগ্ধ হয়েছে। এখানে লিচু খাওয়ার পাশাপাশি সবাই মিলে ছবি তুলেছি । বাগান থেকে পাড়া লিচু পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয় স্বজনের জন্য কেনা হয় বলে জানায়।

সরাইল এলাকা থেকে স্বস্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আজহার উদ্দিন। তিনি বলেন, যে পেশায় আছি ইচ্ছে করলে দুরে কোথাও বেড়ানো সম্ভব হয় না। তাই কয়েকজন বন্ধ মিলে লিচুর বাগান দেখতে বিজয়নগর এলাকায় আসা। বাগানে থোকায় থোকায় লিচু দেখে তাদের খুবই ভালো লেগেছে । বাড়ির জন্য প্রতি একশ লিচু ২৫০ টাকায় করে ৪শ লিচু কেনা হয়।

বাগান মালিক মো. ফরিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, তার ৪ টি বাগানে ৯০ টি গাছ রয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। এ জন্য তার সব সময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এক দিকে দর্শনার্থী অন্য দিকে পাইকাররা লিচু ক্রয় করতে আসায় ব্যস্ত সময় পার করতে হয় বলে জানায়।

বাগাম মালিক মো. আলম মিয়া বলেন, দর্শনার্থীরা অনেক সময় ঝুলে থাকা লিচুতে ধরে ছবি তুলতে গিয়ে নষ্ট করছে। এতে করে আমাদের ক্ষতি হয়। আগে এতো মানুষ লিচু বাগানে আসতো না । গত কয়েক বছর ধরে লিচু মৌসুমে অসংখ্য মানুষ আসছেন লিচু বাগান দেখতে। তবে যারা লিচু বাগান দেখতে আসছেন তাদের মধ্যে বেশীভাগ লোকজনই ক্রয় করছেন। সব মিলিয়ে এলাকা যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বিজয়নগরে ৩৭৫ হেক্টও ও আখাউড়ায় ৯০ হেক্টর রয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আবহাওয়ার কারণে লিচুর কিছু ক্ষতি হলে ও শেষ পযর্ন্ত তুলনামুলক ভাবে ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন । তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে সার্বিক ভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads