• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ঘর পেয়ে খুশি মুছেনা বেগম

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

মানব কল্যাণে কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ সংঘ

ঘর পেয়ে খুশি মুছেনা বেগম

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০২২

স্বামী পরিত্যাক্তা মুছেনা বেগম (৩৮)। একমাত্র মেয়ে ছাড়া দুই কুলের তার কেউ নেই। নেই তার নিজের কোন জায়গা জমি আর বসতঘর। অন্যের বাড়িতে করছেন কাজ। সেই সাথে অন্যের ভাঙ্গা ভাড়া বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিন কাটাতে হয়েছে তার। তাছাড়া ঘরটি খুবই জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরে পানি পড়ত। আর শীতের সময় থাকতে খুবই কষ্ট করতে হতো তার। কখনো কল্পনা ও করতে পারেনি তার একটি ঘর হবে । ওই ঘরে স্বাধীনভাবে তিনি থাকতে পারবেন। সব কিছু যেন এখন তার কাছে এখন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এসব কথা বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর বড় কুড়ি পাইকা গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা মুছেনা বেগম। দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রবাসী কল্যাণ সংঘ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে একটি দুচালা একটি টিন শেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

এদিকে সংগঠনের সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নারীকে টিন শেড ঘর বুঝিয়ে দেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংঘের সভাপতি মো: মাছুম মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো: শামীম মিয়া, সহ-সভাপতি মো: জুয়েল ভূইয়া, উপদেষ্ঠা মো: রুবেল আহমেদ প্রমূখ।

ঘর পেয়ে ওই অসহায় দরিদ্র নারী খুবই খুশি। এই প্রথম কোন সামাজিক সংগঠন অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ঘর তৈরী করে দিয়েছেন।

ওই অসহায় নারী দীর্ঘ ৭ বছর ধরে খুবই কষ্টে দিনানিপাত করছিল। দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রবাসী কল্যাণ সংঘের সদস্যরা খবর পেয়ে দুর্দিনে তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের এই মহানুভবতায় ঘর পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনে।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় কুড়িপাইকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রায় দুই শতক জায়গার মধ্যে দোচালা একটি টিন শেড ঘর তৈরী করা হয়েছে। দূর থেকেই ঘরটি চক চক করছে। ওই ঘরে সাইনবের্ডে লেখা প্রজেক্ট স্বাবলম্বী গৃহহীন মানুষের পাশে দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রবাসী কল্যাণ সংঘ। ওই সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটি টিন শেড দুচালার ঘর নির্মাণ করে দেন। এই ঘর নির্মাণ করে ওই অসহায় নারীকে দেওয়ায় এলাকায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এই সংগঠনটি।

মুছেনা বলেন, আজ থেকে ৭ বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর তার স্বামী তাকে ফেলে অন্যত্র চলে যায়। তার কোন খোঁজ খবর রাখেনি। কয়েকমাস পর তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। মেয়ে নিয়ে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ঘর পাব তা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তায় প্রবাসী কল্যাণ সংঘ নামে এই সংগঠনটি গড়ে উঠে। সংগঠনটি শুরু থেকে এলাকার গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা, বিয়ে শাদি, মসজিদ মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক সহায়তা, টিউবয়েল স্থাপন, কর্মসংস্থানে অসহায়দেরকে সেলাই মেশিন, দুর্যোগকালে খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ নানা প্রকার সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করে আসছেন।

তাছাড়া যৌতুক ,বাল্য বিবাহ, মাদকসহ সকল প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোদ্ধে সচেতনতা তৈরীতে নিরলস ভাবে কাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ যখন যে ভাবে খবর পাচ্ছেন তারা মানব কল্যাণে কাজ করতে সাধ্যনুযায়ী এগিয়ে আসছেন। গত প্রায় ৫ বছর ধরে এই সংগঠনটি সামাজিক কাজ করে আসছেন।

আনন্দপুর গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র গফুর মিয়ার স্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন । টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা নিতে পারছেন না। সংগঠনের লোকজন খবর পেয়ে তাকে নগদ আর্থিক সহায়তা করায় চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন কখনও ভাবিনি এ ভাবে সংগঠনের লোকজনরা সাহার্য করবে। আর্থিক সহায়তা পেয়ে তিনি খুবই সন্তোষ প্রকাশ করেন।

হীরাপুর কলোনির মো. নূরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী-মেয়েসহ তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে চলে তার সংসার। টাকার অভাবে মেয়েকে বিবাহ দিতে পারছেন না। খবর পেয়ে ওই সংগঠন আর্থিক সহায়তায় তার মেয়ের বিয়ে হয়।

একই কথা বলেন মো. সেন্টু মিয়া ও। তার ৯ সদস্যের সংসার কৃষি কাজের উপর চলে। কিন্তু সংসারে অভাব অনটন থাকায় মেয়ের বিবাহ দিতে পরছেন না। এ অবস্থায় সংগঠনটি আর্থিক সহায়তায় তার মেয়ের বিবাহ হয়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় প্রবাসী কল্যাণ সংঘকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মামুন মিয়া বলেন, অভাব অনটনের সংসার যখন চলছিল না, তখনই প্রবাসী কল্যাণ সংঘ একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে। তা দিয়ে সংসারের কিছুটা হাল ধরেছি।

দক্ষিণ ইউপি প্রবাসী কল্যাণ সংঘের সহ-সভাপতি জুয়েল ভূইয়া বলেন, গত প্রায় ৫ বছর পূর্বে এই সংগঠনটি করা হয়। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন । প্রবাসীদের সামর্থ অনুযায়ী অসহায় মানুষের কল্যাণে এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন, বিভিন্ন মসজিদে আর্থিক সহায়তা, অসহায় হতদরিদ্র পরিবারে নগদ অর্থ প্রদান, অসহায় শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা, অসুস্থ রোগীকে নগদ অর্থ প্রদানসহ সামর্থ অনুযায়ী তাদের শীতবস্ত্র, খাদ্য, শিক্ষা, উপার্জনের ব্যবস্থা, রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এলাকায় অসহায় মানুষের কল্যাণে সামান্য উপকার করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে বলে জানায়।

দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল হোসেন বলেন, এলাকার সামাজিক উন্নয়নে সংগঠনের মাধ্যমে প্রবাসীরা যে ভাবে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সত্যি প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads