• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আখাউড়ায় কমছে ভুসির দাম, খামারিদের স্বস্তি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আখাউড়ায় কমছে ভুসির দাম, খামারিদের স্বস্তি

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সব ধরনের গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছিলেন । তবে সম্প্রতি কমতে শুরু করেছে পশুখাদ্য ভুসির দাম। আগে যেখানে এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ৯৫০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। বস্তাপ্রতি ভুসির দাম কমেছে ৪০০ টাকা। এতে করে খামারিরা অনেকটাই যেন স্বস্তিবোধ করছেন। তবে,ভুট্টা, চালের খুদ, খৈলসহ আনুষঙ্গিক পশুখাদ্য দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে একাধিক খামারিরা জানায়, ভুসির মতো অন্য সব গো-খাদ্যের দাম যদি কমানো না যায় তাহলে বিপাকে পড়বে ছোট-বড় খামারি ও পারিবারিক ভাবে পশু লালন পালনকারিরা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৬ শতাধিক খামার রয়েছে। ওইসব খামারসহ পারিবারিকভাবে লালন পালন করছে প্রায় ২৭ হাজারের উপর গবাদিপশু । ওই সব গবাদি পশুর জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গো-খাদ্য প্রয়োজন।
বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিরা বিপাকে পড়লেও ভুসির দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন।

পৌর শহরের লাল বাজার এলাকায় পশুখাদ্যের দোকান গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি বস্তা ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। যেখানে গত ৪ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৯৫০ টাকায় । বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা কমায় খামারিদের স্বস্তি ফিরেছে।

তবে ৫০ কেজি ওজনের সয়াবিন মিলের বস্তা ১৭৫০ টাকার জায়গায় এখন প্রায় ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৫-২৭ টাকার ভুট্টা পাউডার এখন ৪০ টাকা, ২০-২২ টাকার চালের খুদ ৩০ টাকা, মাসকলাইয়ের ভুসি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির খৈল ৪৫-৫০ টাকা এবং ২৫ কেজি বস্তার মিক্সড ফিড ৭৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে ৯৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খামার মালিক মো: ফরিদ মিয়া জানান, পরিবারে সচ্ছলতা আনতে গত ২ বছর ধরে তিনি ছোট বড় ১০টি গরু পালন করছেন। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার খরচও কয়েকগুন বেড়ে যায়। সীমিত আয়ের সংসার হওয়ায় তার পক্ষে খরচের যোগান দিতে কষ্ট হয়ে উঠে। তাই তিনি এরই মধ্যে দুটি ষাড় ও একটি গাভি বিক্রি করেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোরবানির ঈদের বাজারে বাকী গরুগুলো বিক্রি করবেন বলে জানায়।

মনিয়ন্দ গ্রামের কৃষক মো: আবুল হোসেন ভূইয়া বলেন, বর্তমানে তার খামারে বর্তমানে ছোট বড় ১৫টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে ৫টি গাভী থেকে দৈনিক ২০ কেজি দুধ সংগ্রহ করে স্থানীয় ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করছেন। কিন্তু খাদ্যের দাম বাড়তে থাকায় ঠিকমতো খাবার দিতে পারছেন না। ফলে তার দৈনিক দুধ ও অনেক কমে আসছে।

খামারি মো: শামসুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত ৩ বছর ধরে তিনি গরু লালন পালন করছেন। বর্তমানে তার খামারে ১০ট গরু রয়েছে। তবে গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার অনেকটাই বিপাকে পড়তে হয়। এদিকে গত সপ্তাহে ভুসির দাম কমায় তার অনেকটাই যেন স্বস্তি ফিরে আসে। তবে ভুসির সঙ্গে ভুট্টা, চালের খুদ, খৈলসহ আনুষঙ্গিক পশুখাদ্য দাম কমলে তাদের লোকসান অনেক কমে আসবে বলে জানায়।

খামারি মো: সিরাজ মিয়া বলেন, প্রতিবছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তিনি গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করে থাকেন। গত বছর তিনি ২৫টি গরু ৫ মাস ধরে লালন পালন করেছেন। গত বছরের চাইতে এবার গো খাদ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে যা খরচ হয়েছে গরু বিক্রি করে তা তুলতে পারবে কী না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। তবে ভুসির সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক পশুখাদ্য দাম কমলে তাদের লোকসান অনেক কমে আসবে বলে জানায়।

মো: ইব্রাহিম ভূইয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি বাড়িতে ‘দেশি জাতের ৭ টি গরু লালন-পালন করছেন। দুর্বা ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি অন্যান্য গো-খাদ্য গরুকে দিতে হয়। কিন্তু যেভাবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে গরু পালন করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মো: আকবর হোসেন বলেন দীর্ঘ বছর ধরেই তিনি পারিবারিক ভাবে গরু লালন পালন করছেন। ‘গরুর প্রধান খাদ্য ধানের খড়। গত তিন মাস আগে প্রতি মণ খড় বিক্রি হয়েছে ৩শ টাকায় এখন তা ক্রয় করতে হচ্ছে ৪শ টাকার উপরে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে গরু লালন পালন করা খুবই কষ্ট হবে। খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকারকে গো-খাদ্যের ওপর নজর বাড়ানোর দাবি জানায়।

পৌর শহরের লাল বাজার এলাকার গো-খাদ্য বিক্রেতা মো: জাবেদ খান বলেন, বর্তমানে ফিড, খৈল, সয়াবিনসহ সব ধরনের খাবারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভুসির দাম অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে প্রতি বস্ত ভুসি ১ হাজার ৫শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি সামনে ভুসিসহ অন্যান্য গো খাদ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিদের দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমিয়ে খড় ও কাঁচা ঘাসের উপর মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন শুধু দুধ বিক্রি নয়, দুধ থেকে উৎপন্ন হয় এমন খাদ্য যেমন ঘি, দই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে পারলে খামারিরা তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads