• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কোরবানি ঘিরে ব্যস্ত আখাউড়ার খামারিরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কোরবানি ঘিরে ব্যস্ত আখাউড়ার খামারিরা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০২২

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজা করেছে কৃষক ও খামারিরা। তারা খৈল, কুড়া, চালের খুদ, ছোলা, সয়াবিন, ভুষি, কাঁচা ঘাস ও খড় খাওয়ানোর মাধ্যমে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, বন্যা আর দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে পশু কোরবানীর সংখ্যা ও দাম কমতে পারে এমন শঙ্কা থাকলেও নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে খামার মালিকরা পশুর পরিচর্যা করছেন। তারা ছোট বড় গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া চাহিদা অনুযাযায়ী ক্রেতার হাতে তুলে দিয়ে সর্বশেষ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে একাধিক খামারি জানায়, এ বছর যদি ভারতীয় গরু আমদানি না হয় তাহলে কোরবানির পশু বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন ।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৬১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩ হাজার ১৪৫, মহিষ ১০৭ ও ছাগল ৩৯২টি । তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় সদর উপজেলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে আরো ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজারসহ মোট ৭ হাজার পশু আসবে বলে আশা করছেন। তবে এ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ২৯৩টি। যে পরিমান পশু কোরবানি করা হবে তা স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ অফিস জানায়।

একাধিক খামারি জানায়, বর্তমান এ পরিস্থিতিতে পশু লালন পালনসহ প্রস্তুত করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা উঠানো যাবে কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা।

কারণ গত বছরের তুলনায় এবছর গো-খাদ্যসহ অন্যান্য খরচ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে রয়েছে দেশজুড়ে বন্যা ও। এ পরিস্থিতিতে পশু বিক্রিতে তারা নায্য মূল্য না পেলে অনেক লোকসান গুনতে হবে খামারিরা জানায়।

এ উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় পশুর উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে লালন পালন করা পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। পশু পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন। কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাদের মাঝে এক প্রকার শঙ্কা কাজ করছে ।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খামারগুলোর বেশীরভাগেরই উদ্দেশ্য হল ঈদকে সামনে রেখে গরুকে মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ রাখতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ভুষিসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে দেশীয় জাতের গরুই বেশী লালন পালন তারা করে আসছে । বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন তাদের পালনকৃত ওইসব পশু গুলোকে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কেনা বেচাও।

খামার মালিক আজগর আলী বলেন, তার খামারে ছোট বড় মোট ২৫টি গরু রয়েছে। সবগুলো কোরবানির বাজারে বিক্রি করা হবে। ইতিমধ্যে তার বাড়িতে পাইকারদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তবে দরদামে অনেক ঘাটতি থাকায় বিকিকিনি তেমন হচ্ছে না। তিনি আশা বাদি শেষ পযর্ন্ত গরু বিক্রি ভালো হবে।

মো: শফি উদ্দিন মিয়া বলেন আসন্ন কোরবানির জন্যে গত ৭ মাস ধরে ১০টি গরু লালন পালন করছেন। বাজারে গো-খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে গরুর বাজারমূল্য তুলনামুলক ভালো আছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাজারমূল্য নিয়ে এক প্রকার শঙ্কা কাজ করলেও বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে।

খামার মালিক মো.বাছির মিয়া বাংলাদেশের খবরকে জানায়, কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে গত ৪ বছর ধরে এ গরু লালন পালন করছেন। তার খামারে বড় আকৃতির ৫ টি ও মাঝারি আকৃতির ১৫ টি গরু রয়েছে। এ পযর্ন্ত তার ৩ টি গরু বিক্রি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি বাকী গরু নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। শেষ মুহুর্তে যদি গরু বিক্রি করতে না পারেন তাহলে অনেক লোকসান গুনতে হবে।

মো. ইদ্রিস মিয়া মিয়া বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য গত প্রায় ৭ মাস ধরে ২৭টি গরু লালন পালন করেছেন তিনি। পশু মোটাতাজা করতে গমের ভূসি, চালের খুদ, খড় কাঁচা ঘাসসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াচ্ছেন। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে খরচও কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে বাজারে সমাগম বাড়ছে। তিনি বলেন যেহেতু ভারতীয় গরু আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে তাই বাজারে দেশীয় গরুর ভালো চাহিদা থাকায় লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

খামারি মো. ইদ্রিস মিয়া মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য গত প্রায় ৭ মাস ধরে ১৫টি গরু লালন পালন করেছেন। নিজে ঠিকমতো না খেয়ে গরুর পেছনে ব্যয় করছেন অর্থ ও শ্রম। তিনি আরো বলেন গরু কেনা, লালান পালন, খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য খরচে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু যেভাবে গো-খাদ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে এক প্রকার শঙ্কায় আছি।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন পশু মোটা তাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া সকল খামারিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি খামারিদের সচেতন ও তদারকি করছি। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads