• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
হাসপাতালে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়া রুমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

হাসপাতালে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়া রুমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০২ জুলাই ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হাসপাতালে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়া রুমা আক্তারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি আরো বিভিন্নভাবে তাকে সহযোগিতা করা হবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের রেশ ধরে তার এ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম শনিবার দুপুরে বলেন, বিভিন্ন গনমাধ্যমে এই সংবাদটি প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকির নজরে আসে। তিনি বিষয়টি অবহিত করার পাশাপাশি গনমাধ্যম কর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, 'ওই নারীকে উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর দেওয়া হবে। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। তাকে সুবিধাভোগীর আওতায় এনে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। আত্মনির্ভরশীলতার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সর্বোপরি তিনি যেন পিছিয়ে না পড়েন সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। ইতিমধ্যেই আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অ্যাসিল্যান্ড গিয়ে দেখে এসেছেন এবং নগদ দুই হাজার টাকার পাশাপাশি ফল দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে নগদ ১০ হাজার টাকা।'

ভোলার লালমোহন উপজেলার সন্তান রুমা আক্তার। সৎ মায়ের অত্যাচারে ছোট বেলাতেই বাড়ি থেকে বের হওয়া। বেড়ে উঠা এখানে সেখানে। কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের যুবকের সঙ্গে। স্বামীকে নিয়ে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। কয়েক মাস হলো বড় সন্তনকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী আরেকজনকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। রুমা জানেন না তার স্বামী কোথায়।

৩০ বছর বয়সী রুমা আক্তারের কোলজুড়ে এখন ফুটফুটে দুই সন্তন। জিলহজ মাসকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে সন্তনদের নাম রেখেছেন হাসান ও হোসেন। তবে সন্তনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল রুমা আক্তার। নিজে এখানে সেখানে বেড়ে উঠলেও ছেলে সন্তানদের কিভাবে লালন পালন করবেন সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। এ নিয়ে একাধিক গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আখাউড়ার খড়মপুরে আসার সূত্র ধরে দিনমজুর ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে রুমার বিয়ে হয়। এক কন্যাসন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল রুমার সংসার। দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের পর প্রায় ছয় মাস আগে কন্যাকে নিয়ে চলে যান স্বামী ইব্রাহিম। মাথায় বাজ পড়ে রুমার। ভাড়া বাসা ছেড়ে আশ্রয় নেন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। অন্যের কাছে হাত পেতে চলত পেট। সুমি আক্তার নামে এক নারীকে মা ডাকতেন। সেই নারী বুধবার রাত ১১টার দিকে রুমাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুই ছেলেসন্তানের জন্ম দেন রুমা আক্তার।

হাসপাতালের ধাত্রী (মিডওয়াইফ) তানিয়া আক্তার ও রোকসানা আক্তার বলেন, প্রসব করাতে গিয়ে দেখি টুইন বেবি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোয় প্রসূতি নারীরও বিষয়টি জানা ছিল না। সমস্যা দেখা দেয় যখন দেখা যায় ওই নারীর এক সন্তান গর্ভে উল্টো অবস্থায় আছে। আগে এক সন্তান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালোভাবেই প্রসব করানো যায়। রাত ১১টা ১০ মিনিট ও ২০ মিনিটের সময় ওই নারী দুই সন্তান প্রসব করেন।

হাসপাতালের সেবিকা সানজিদা মাহমুদ বলেন, মা ও শিশু দু’জনেই ভালো আছে। এক শিশুর ওজন কম হওয়ায় তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই সন্তানকে নতুন কাপড় দেওয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চিকিৎসক নুরে সাবা বলেন, অসহায় ওই নারীর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসব হওয়ায় আমি আনন্দিত। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতায় এ কাজটি সহজে করা গেছে। এ জন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন।

সুমি আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমাকে মা ডাকে রুমা। বুধবার রাতে আমি একজনের জন্য ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কান্না করতে দেখি। তখন সে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আখাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখানে সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় রুমা দুই ছেলেসন্তানের জন্ম দেয়।

রুমা আক্তার বলেন, মেয়েটাকে নিয়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্টেশনে আশ্রয় নেই। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মা হারা। সৎমায়ের অত্যাচারে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে এক বোন মারা গেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

তিনি জানান, নবজাতকদের নিয়ে কোথায় যাবেন সেটা জানেন না। সবাই মিলে যেন অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন সেই অনুরোধ করেন রুমা আক্তার। হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে সন্তানদের নাম হাসান ও হোসেন রেখেছেন বলে জানান।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হিমেল খান বলেন, হাসপাতাল থেকে ওই নারী ও নবজাতকদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সবাই আন্তরিকভাবে অসহায় ওই নারী ও তার সন্তানদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads