• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
শেষ সময়ে পশু বিক্রির দাম পেয়ে খুশি খামারিরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আখাউড়ায় কোরবানির পশুর হাট

শেষ সময়ে পশু বিক্রির দাম পেয়ে খুশি খামারিরা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২২

রাত পোহালেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এই কোরবানির ঈদের সবচেয়ে বড় আয়োজন পশুকে ঘিরে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঈদের দিন নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের পশু কোরবানি করে থাকেন। ইতোমধ্যে অনেকে কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন। আর যারা এখনো কিনতে পারেনি তারা শেষ মুহুর্তে এসে কেনার চেষ্টা করছেন। এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে পশুর হাটে চলছে এক প্রকার হাহাকার । হাটে পশু কম ক্রেতা বেশি। দামও রয়েছে বেশ চড়া। যে কয়টি পশু হাটে উঠেছে তা নিয়ে রীতিমতো ক্রেতাদের কাড়াকাড়ি চলছে। অন্য যে কোন সময়ের হাট থেকে প্রতি গরুতে অনেক টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালো দাম পেয়ে খামারি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।

পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি কলেজ মাঠে শনিবার গিয়ে দেখা গেছে এখানে প্রচুর পরিমাণ ক্রেতাদের সমাগম। কিন্তু সেই অনুপাতে নেই গরু, ছাগল, মহিষ। বেপারীদের হাতেগোনায় কিছু পশু থাকালেও তা নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি। ক্রেতারা হতাশ হয়ে এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে বেড়ান কাঙ্খিত পশুর খোঁজে। তবে পশু কম থাকার সুযোগে ব্যাপারীরা দামও হাঁকছেন দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় দর কষাকষিরও সুযোগ দিচ্ছে না বেপারীরা।

এদিকে গত কয়েক দিনের তুলনায় পশু কম আর ক্রেতা বেশী হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। তবে শুরুতেই বাজারের দরদাম নিয়ে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন খামারিরা। গো-খাদ্যেসহ নানা বিষয় চিন্তা করে অনেকেই স্বল্প লাভে পশু বিক্রি করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের আশায় যারা ছিলেন হাটে তারা যেন ছক্কা হাঁকিয়েছেন। হঠাৎ হাটে পশুর সংকট দেখা দেওয়ায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে ছুটে চলছেন এক হাট থেকে অন্য হাটে । ছুটে বেড়ান কাঙ্খিত পশুর খোঁজে। ফলে শেষ মুহর্তে এসে খামারি ও ব্যবসায়ীরা কাঙ্খিতের উপর দাম পেয়ে তাদের মুখে ফুটে উছছে আনন্দের হাসি।

পশুর হাটে গরু কিনতে আসা পৌর শহরের মসজিদ পাড়া এলাকার মো: আমির হোসেন বলেন, বাড়িতে গরু রাখার জায়গা সংকটের কারণে শেষ মুহুর্তে এসে গরু কিনে থাকি। কিন্তু বাজারের অবস্থা দেখতে গত দুটি বাজারে তার আসা হয়। তখন মাঠে প্রচুর গরু ছিল । বাজারের দরও ছিল বেশ ভালো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সব কিছু তার যেন উল্টো হয়ে যায়। গত কয়েকটি হাটে যেখানে ৬০ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে এই জাতীয় গরু শেষ মুহুর্তে কিনতে হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। যে যেটার মধ্যে রশি ধরেছে আর ছাড়ছে না।

ক্রেতা মো: নাজির হোসেন বলেন, প্রতি বছরই তিনি গরু কোরবানি দিয়ে আসছেন। বেশীরভাগ সময় শেষ বাজার থেকে তার গরু কেনা হয়। গত মঙ্গলবার তার এক ভাইকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে দেন। কিন্তু শেষ বাজারে এসে দেখতে পান গরু সংকট। যে কয়টা আছে তাও রয়েছে অনেক দাম। আগে যে গরু ৭০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে ওই আকারের গরু কিনতে হয়েছে ৯০ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। বাধ্য হয়ে বেশী দামে কেনা হয়েছে।

মাধবপুর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, তার খামারে ছোট বড় মিলে ৪০ টি গরু রয়েছে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করতে তিনি দুটি ট্রাকে করে আখউড়ায় ২৫টি গরু নিয়ে আসেন। গত দুই দিনে তার ৮ টি গরু বিক্রি হয়। বাকী গরু বিক্রি নিয়ে তিনি এক প্রকার চিন্তায় পড়েন। কিন্তু শুক্রবারে হাটে গরু সংকট থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে এক প্রকার কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ফলে কাঙ্খিত মূল্যের চাইতে আরো বেশী দামে গরুগুলো বিক্রি হয়। গত দুই বছরে যে লোকসান হয়েছিল তা এবার উঠে এসেছে। তাই হাসি মুখে এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

ব্রাহ্মণপাড়ার ব্যবসায়ী মো: সিরাজ মিয়া বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করতে এ বছর তিনি ৩০ টি গরু পালন করেন। এরমধ্যে ১০টি গরু বাজারে বিক্রি হয়। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাকী গরু বিক্রি নিয়ে এক প্রকার শঙ্কায় ছিল। শেষ মুহুর্তে এসে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। আগে যেখানে সামান্য লাভে একটি গরু ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ওই আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ হাজার টাকার উপরে। শনিবার দুপুর পযর্ন্ত তার কাছে বিক্রিযোগ্য আরো ১ টি গরু রয়েছে। তিনি আশা করছেন বলেন স্বল্প সময়ের মধ্যে ওই গরুটি বিক্রি হবে। শেষ মুহুর্তে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

কৃষক মো: আব্দুল আলিম বলেন, গত মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটে তার ঘরে থাকা একটি ষাঁড় বিক্রি করতে হাটে নিয়ে আসা হয়। হাটে গরুটি ৮০ হাজার টাকা দরদাম হয়। বিক্রি না করে গরুটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। শনিবার বাজারে আবার নিয়ে আসলে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে তিনি খুবই খুশি।

গরু কিনতে এসে হতাশ আল-আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, গরু না পেয়ে এই পযর্ন্ত দুটি হাট ঘুরে এসেছি। সব হাটে পশুর একই অবস্থা। যে কয়েকটি গরু রয়েছে তাও আবার লাখের ওপরে দাম। আমার বাজেট এক লাখের নিচে। হাটের যে অবস্থা জানি না শেষ পযর্ন্ত এবার গরু কিনতে পারবো কি-না।

বাজার ইজারাদার মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন, এখানে ক্রেতা বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে তাদের পশু ক্রয় বিক্রয় করছেন। এই হাটে কোন প্রকার হয়রানি নেই। তিনি আরো বলেন গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ পশুর হাটে গরু কম উঠায় ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads