• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
নারীকে পুড়িয়ে হত্যা, ২২ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

নারীকে পুড়িয়ে হত্যা, ২২ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার

  • মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ আগস্ট ২০২২

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আম্বিয়া নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলমকে ২২ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। শনিবার রাতে রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এ তথ‌্য জানান।

র‌্যাব জানায়, আলম ও আম্বিয়া একই গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার প্রায় ৩ মাস আগে ২০০১ সালের জুন মাসে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার আটিপাড়া গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের মেয়ে আম্বিয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আম্বিয়ার বাবা সামর্থ্য অনুযায়ী আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার দেয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার  স্ত্রীকে মারধর করত। একপর্যায়ে  আলমসহ আসামির বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজন স্ত্রীর পরিবারের কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। তার বাবা দরিদ্র হওয়ায় আলমের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় আলম আম্বিয়াকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আম্বিয়ার বাবা বিষয়টি জানতে পেরে ধার দেনা করে আলমকে ১০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু যৌতুকের বাকি টাকা পাওয়ার জন্য আলম নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ঘটনার ১০/১২ দিন আগে আলম আম্বিয়াকে মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এবং যৌতুকের ৪০ হাজার টাকা না নিয়ে আসলে তাকে বাড়িতে উঠতে দেবে না, বরং মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর  রাতে  আলম আম্বিয়ার বাবার বাড়িতে এসে  ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে ফাঁকা রাস্তায় পৌঁছালে  আলম আম্বিয়াকে  চর, থাপ্পর, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। সে একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। তখন আলম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগ্রহ করে রাখা পেট্রোল তার গায়ে ঢেলে দিয়ে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আম্বিয়ার চিৎকার আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিভায় এবং গুরুতর দগ্ধ অবস্থায়  আম্বিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে সিংগাইরের সেবা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আম্বিয়া তার মা-বাবা ও ক্লিনিকে উপস্থিত ডাক্তার-নার্সদের কাছে জানিয়েছিলেন  আলম তাকে মারধর করেছে এবং তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুনি দিয়েছে। রোগীর গুরুতর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ক্লিনিকের চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওই রাতেই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে আম্বিয়ার মৃত্যু হয়। 

আম্নিয়ার বাবা মো. মকবুল হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আলম, তার বাবা মো. রহিজ উদ্দিন, মা আলেয়া বেগম, আলমের বোন জামাই রবিউল, আলমের চাচাতো নানা আফতাবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার পর থেকে আলম আত্মগোপনে ছিল। এজাহারনামীয় বাকি ৪  আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আম্বিয়াকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৩ সালের ৩০ নভেম্বর   আলমকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পরে হাইকোর্ট ও আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads