• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্তানসহ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা এক লাখে রফাদফা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০২২

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গ্রীন ভিউ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভের সন্তানসহ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা মাত্র এক লাখ টাকায় রফাদফা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজা বেগম নামের ওই প্রসূতি মারা যায়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রামের বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী নয়ন মিয়ার স্ত্রী।  প্রসূতির মৃত্যুর পর রাতেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশের উপস্থিতিতে রোগীর স্বজনদের নিয়ে রফাদফা করতে বৈঠকে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে প্রসূতির স্বজনরা হাসপাতালের সামনে দোষীদের বিচার দাবিতে অবস্থান নিয়েছিল। খবর পেয়ে শহরের এক নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির (এসআই) হুমায়ুন কবীর ওই হাসপাতালে যায়।

নিহত খাদিজার ভাসুর শরিফুল হাসান সোমবার দুপুরে রফাদফা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় নিহত খাদিজার পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে এই টাকা দিবেন।

এর আগে রোববার রাতে খাদিজার স্বজনরা জানান, পাঁচ সন্তানের জননী সাড়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা খাদিজার বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শনিবার দিনগত রাত ১১টার দিকে তাকে শহরের কুমারশীল মোড় এলাকার গ্রীন ভিউ স্পেশালাইজড হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জিনিয়া খানের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে তাকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এসময় তার গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করবে বলে আশ্বাস দেন চিকিৎসক। কিন্তু শনিবার রাতভর সন্তান নড়াচড়া করেনি। 

এদিকে রোববার সকাল ১১টায়ও চিকিৎসক খাদিজার কোন খোঁজ না নেওয়ায় তার স্বজনরা চাপ সৃষ্টি করেন। এতে চিকিৎসক তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার কথা বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে খাদিজার গর্ভে থাকা নবজাতক মৃত বলে জানা যায়। এরপর চিকিৎসক মৃত সন্তানটিকে নরমালি প্রসব করানোর কথা তাদেরকে জানান। পরে চিকিৎসক জিনিয়া খান ও তার স্বামী হাসপাতালটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকা ডা. আবু হামেদ বাবু মৃত সন্তানটিকে নরমালি প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে খাদিজার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, খাদিজার মরদেহ হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই চিকিৎসক ও মালিকপক্ষের লোকেরা ঘটনাটির রফাদফা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তারা একাধিকবার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদেরকে হাসপাতালের চেয়ারম্যানের কক্ষে ডেকে নেন। 

খাদিজার ভাসুর শরীফুল হাসান রাতে জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে মৃত নবজাতকটিকে অপসারণের জন্য চিকিৎসককে বারবার অনুরোধ করার পরেও তারা শুনেননি। এক পর্যায়ে খাদিজার শারীরে খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর কিছুক্ষণর মধ্যেই সে মারা যায়। 

তবে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত চিকিৎসক জিনিয়া খানের স্বামী আবু হামেদ বাবু'র দাবি, হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর বয়স সাধারণ প্রসূতির তুলনায় বেশি ছিল। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তার খিঁচুনি ও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। তারা রোগীটিকে বাঁচানোর জন্য সব ধরণের চিকিৎসা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি।'

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads