• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সারা দেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যানবাহনের গ্যাস যাচ্ছে বাসা-বাড়িতে!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২৩

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে অনুমোদনহীন ভ্রাম্যমাণ এলপিজি ফিলিং স্টেশন। সে স্টেশনে সিলিন্ডার থেকে পাইপ দিয়ে ডিস্পেন্সার মেশিনের মাধ্যমে বাসা-বাড়ি ও হোটেল রেস্তোরায় সরবরাহ হচ্ছে রুপান্তিরিত প্রাকৃতিক গ্যাস। যদিও যানবাহন ছাড়া ফিলিং স্টেশন থেকে এ গ্যাস সরবরাহ করা নিষিদ্ধ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ফিলিং স্টেশনের গ্যাস খোলা সিলিন্ডারে ভরে রান্নার কাজে ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় চার মাস পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের উপজেলা বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেনীপাড়া নামক স্থানে মায়ের দোয়া ফিলিং এন্ড কনভার্শন সেন্টার নামে একটি (এলপিজি) ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়। নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে মেয়াদউত্তীর্ণ বোতলে ভর্তি করে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
এদিকে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহের অভিযোগ এনে (১৫ মার্চ) বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি গ্যাস কোম্পানীর নাসিরনগর উপজেলা পরিবেশক মো. খসরু মিয়া একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ওই ফিলিং স্টেশন থেকে দিনের বেলায় যানবাহনে গ্যাস দেওয়া হয়না। কিন্তু রাত হতেই তৎপর হয়ে ওঠে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি। মেয়াদ উত্তীর্ণ বিভিন্ন খোলা সিলিন্ডারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ভরে তা বাসা-বাড়ি ও হোটেল গুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। ১২ কেজি ধারণক্ষমতার সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ৩-৫ কেজি। এতে ঠকানো হচ্ছে জনগনকে আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগের বিষয়টি যাচাই করতে সরেজমিন গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাত ৯টার দিকে মায়ের দোয়া ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা মেলে ১০-১৫ জনের মতো স্থানীয় বাসিন্দা খোলা সিলিন্ডার নিয়ে অপেক্ষায় আছেন গ্যাস ভর্তি করার জন্য। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে গ্রাহকের সংখ্যাও। সে সময় কথা হয় গ্রাহক আব্বাস মিয়ার সাথে। তিনি জানান, আমরা শুনেছি এই ফিলিং স্টেশনে বাজার থেকে কম মূল্যে গ্যাস বিক্রি করা হয়। এবং আমাদের বলা হয়েছে রাত ১২ টার পরে আসার জন্য।
যমুনা গ্যাস লিমিটেড কোম্পানীর নাসিরনগর সেল্স কর্মকর্তা ইলিয়াস ফকির বলেন, দেশে প্রায় প্রতিদিনই গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে দগ্ধ ও প্রাণহানির হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অথচ নাসিরনগরে এই ভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন করে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
বিস্ফোরক আইনে বলা আছে 'স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এলপিজি বিতরণ স্টেশন হতে মোটর যানে বা অন্য কোনো স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযুক্ত জ্বালানি ধারণ পাত্র ব্যতীত অন্য কোনো বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করা যাবে না'। আর এ আইন ব্যাহত হলে ২-৫ বছরের কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাস কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওমেরা গ্যাস কোম্পানির ডিলার খসরু মিয়া জানান, আমরা বাসায় যে গ্যাসের বোতলগুলো ব্যবহার করি সেগুলোতে তরল গ্যাস ভরা হয়। কিন্তু ফিলিং স্টেশনে প্রেসারের মাধ্যমে হাওয়া জাতীয় গ্যাস ভর্তি করা হয়। এতে যে কোন সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।
জানতে চাইলে মায়ের দোয়া ফিলিং এন্ড কনভার্শন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো.কুদ্দুস মিয়া অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কয়েকদিন আগে বাসা-বাড়ির সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়েছিল। পরে কর্মচারীদের মানা করে দিয়েছি। তবে ফিলিংস স্টেশন করতে কৃষি অফিস, ফায়ার স্টেশন, ভূমি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যায়ন নেওয়া হয়েছে।
তার কথার সত্যতা যাচাই করতে কথা হয় কৃষি অফিস, ভূমি অফিস, ফায়ার সার্ভিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে। তাদের দাবী এই ফিলিং স্টেশন প্রশাসনের কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমোদন নেয়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, আমাদের কৃষি অফিস থেকে কোন প্রত্যয়নের জন্য আবেদন করেনি।
নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার হিমাংশু রঞ্জন সিংহ জানান, আমরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনেছি এখানে অবৈধভাবে যানবাহনের গ্যাস রান্নার সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে গ্যাস সরবরাহে মারাত্বক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের কারণে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে। নাসিরনগরে অবৈধভাবে গ্যাস রিফিল করার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads