আকরামুজ্জমান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গত ১৬ মাসে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬৭ টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে ৬৬টি ট্রান্সফরমারই কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ প্যাম্পের। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রাম থেকে পাঁচ কিলো ভোল্ট এ্যাম্পিয়ার (কেভিএ) ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্রান্সফরমারের খোলস ফেলে রেখে কয়েল,মূল্যবান তৈল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন,প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চোর ধরা পড়েনি। মালামালও উদ্ধার হয়নি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কুমারখালী পল্লী বিদ্যুত সমিতির জোনাল কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭ টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে ৫৫ টি ৫ কেভিএ। প্রতিটি প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে যার মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকা। আর ১০ কেভিএ ১২ টি ট্রান্সফরমার। প্রতিটি প্রায় ৬০ হাজার টাকা করে যার মূল্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। চুরি যাওয়া যাওয়া ট্রান্সফরমারের মধ্যে মাত্র একটি আবাসিক এলাকার। আর বাকী সব কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ প্যাম্পের। প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে পল্লী বিদ্যুতের কর্তৃপক্ষ।
জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক মো. আমির ফরায়েজির সেচ প্যাম্পের ট্রান্সফরমারটি বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই। প্যাম্পের পাশে কলাবাগান খোলস পড়ে আছে। কিন্তু ভিতরের কয়েল ও তেল নেই।
এসময় কৃষক আমির বলেন, সকালে মাঠে এসে তিনি দেখেন তাঁর সেচ প্যাম্পে বিদ্যুত নেই। পরে তিনি দেখেন তাঁর ট্রান্সফরমারটি বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই। এরপর তিনি দেখেন পাশের কলাবাগানে ট্রান্সফরমারের খোলস পড়ে আছে, কিন্তু ভিতরের কয়েল ও তেল নেই।
গত ১৪ আগষ্ট রাতে যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে কৃষক মো. আকরাম হোসেনের সেচ প্যাম্পর ১০ কেভিএ একটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে তিনি বলেন, ছয় মাসে দুইবার তাঁর ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। একটি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তাঁর ভাষ্য, চুরির আতঙ্কে রাতে ঘুম হয়না তাঁর। তিনি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।
যদুবয়রা পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, তাঁর এলাকায় চলতি বছরে ৬ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ের কর্মকর্তা(ডিজিএম) মো. আনসার উদ্দিন জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিত ট্রান্সফরমার চুরি করছেন। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছেনা। চলতি বছরে ৩৯ টিসহ গত ১৬ মাসে ৬৭ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাঁর ভাষ্যমতে চক্রটি পরিকল্পিত ভাবে ফাঁকা ও নির্জন মাঠের সেচ প্যাম্পের ট্রান্সফরমার গুলো চুরি করছে। চক্রটির কাছে পল্লী বিদ্যুত ও কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)আকিবুল ইসলাম বলেন,দক্ষ লোক ছাড়া কেউ ট্রান্সফরমার চুরির কাজ করতে পারেনা। বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।