মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি:
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি এবং মেঘনা নদী হতে বালু উত্তোলন কালে ব্যাপকভাবে সমালোচিত জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর রয়্যালিটি হিসাব করা হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ৬’শ ৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫’শ ৮৫ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছেন সেলিম । ৪০ পয়সা ঘটফুট হিসাবে এ পরিমান বালুর রয়ালিটি ২’শ ৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮’শ ৩৪ টাকা সরকারি পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয় । এই রয়্যালটির টাকা অতিসত্বর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
রয়্যালটি আদায়ে সেলিম খানের নিকট গত ৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, সুপ্রিম কোর্টেও সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপিল মোকাদ্দমা নং ৮৬০/২০২২ এর ২৯/০৫/২০২২ তারিখের রায়ে আপনার মালিকানা প্রতিষ্ঠান মের্সার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ০৫/০৪/২০১৮ হতে ০৪/০৪/২০২২ পর্যন্ত সময়ে মামলায় বর্ণিত ২১টি মৌজা হতে উত্তোলিত বালুর রয়্যালটি আদায় করার আদেশ প্রদান করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে সূত্রোক্ত ০২ নং স্মারকে উক্ত রায়ের আদেশ মোতাবেক জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ২৩/০৮/২০২২ তারিখ অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল কমিটির সভায় আপনার মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক উক্ত চার বছরে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ এবং এর রয়্যালিটি নির্ধারণের জন্য কারিগরি সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। উপ-কমিটি বিভিন্ন সময়ে সরাসরি এবং অনলাইনে (জুম অ্যাপে) সভায় মিলিত হন। উক্ত টিমের কারিগরি সদস্যগণ বিআইডব্লিউটিএ , আইডব্লিউএম এবং সিইজিআইএস এর সার্ভে রিপোর্ট/ব্যাথমেট্রিক ডাটা ও স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে সফটওয়ারের মাধ্যমে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ নির্ধারণ করেন।
জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন, অত:পর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ৫০৭৮/২০১৪ মামলার রায়ে উল্লেখিত প্রতি ঘনফুট বালুর মূল্য ভিত্তি ধরে ১৯/০৭/২০২৩ তারিখের সভায় মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ২০১৮ হতে ২০২২ পর্যন্ত বর্ণিত সময়ে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ ৬’শ ৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫ শ ৮৫ ঘনফুট নির্ণয় এবং প্রতি ঘনফুট বালুর মূল্য ৪০ পয়সা হারে মোট রয়্যালিটির পরিমাণ ২’শ ৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৪ টাকা নির্ধারণ সঠিক ও যুক্তিসংগত হয়েছে মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। চিঠিতে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এমতাবস্থায়, সূত্র-০১ এ বর্ণিত মামলার রায়ের নির্দেশনার আলোকে উল্লেখিত মৌজাসমূহ হতে ০৫/০৪/২০১৮ হতে ০৪/০৪/২০২২ তারিখ পর্যন্ত সময়ে উত্তোলিত ৬’শ ৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ লাখব ৫’শ ৮৫ ঘনফুট বালুর রয়্যালিটি বাবদ ২’শ ৬৭ কোটি ৩৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৮’শ ৩৪ টাকা অনতিবিলম্বে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানপূর্বক চালানের মূলকপি নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে জমা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় দাবিকৃত অর্থ আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রেরিত এ পত্রের পর ১৫ দিনেও রয়্যালিটির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।