• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

ফাইনালে বাংলাদেশের সঙ্গী সেই শ্রীলঙ্কাই

শোচনীয় হার মাশরাফিদের

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

ঘরের মাঠে ক্রিকেটের এমন বাজে দিন বছর চারেকের মধ্যে এই প্রথম। সাড়ে সাত ঘন্টার ম্যাচ তিন ঘন্টাতেই খতম। যারা আজ একটু দেরিতে স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন, আফসোসে পুড়েছেন তারা। বসতে না বসতেই ম্যাচ শেষ। লজ্জার হারে ভক্তদের মাঝে ক্ষোভ ছিল অনুমিতভাবে। কারো কাছে হারের চেয়ে খেলা না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপটা বড় হয়ে গেল। আর তাই কেউ কেউ এই ম্যাচের টিকিটে ফাইনাল দেখার আবেদনও জানালো জোর মাত্রায়। তা কি পৌছালো বিসিবির কর্ণকুহুরে?
টানা তিন জয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে বলতে গেলে উড়ছিল বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে এক হ্যাচকায় টাইগারদের মাটিতে নামিয়ে বাস্তবতাটাও দেখালো শ্রীলঙ্কা। ২৪ ওভারে ৮২ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লঙ্কান শিবির জিতেছে দোর্দন্ড দাপটে, ১০ উইকেটে, ২২৯ বল হাতে রেখে। দারুণ এই জয়ে টাইগারদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধটাও নেয়া হলো হাথুরুদের, সঙ্গে নিশ্চিত ফাইনালও। বিদায় জিম্বাবুয়ে। শনিবার মিরপুরেই হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল, ট্রফি জয়ের উপলক্ষ্য।
দ্বিতীয় ম্যাচে এই লঙ্কানদেরই রেকর্ড ১৬৩ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখল মাশরাফি বিগ্রেড। ইটের জবাবে পাটকেল দিয়ে ফাইনালটা জমিয়ে তুলল লঙ্কান শিবির। এমন হার শুধু মাশরাফি কেন, ভাবেনি কেউই। লঙ্কানদের কাছে ১০ উইকেটের হার তৃতীয়বারের মতো, সব মিলিয়ে ১২তম। ৮২ রানের স্কোর লঙ্কানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, সব মিলিয়ে নবম। ওভারের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লজ্জা। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ১১.৫ ওভারের মধ্যে। এর আগে ৬ ওভারের মধ্যে হারার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
একই উইকেট, খুব একটা বোলিং বান্ধবও নয়। তারপরও ২৪ ওভারের মধ্যেই টাইগারদের অসহায় আত্মসমপর্ণ। অথচ সেই ৮২ রান তাড়া করতে লঙ্কানদের রাজসিক ব্যাটিং। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। গুনাথিলাকা (৩৫) ও থারাঙ্গার (৩৯) অবিচ্ছিন্ন ওপেনিং জুটি লঙ্কানদের এনে দেয় ফাইনালে উঠার জয়। বল হাতে একটি উইকেটের দেখাও মিলল না টাইগার শিবিরে। পেস কি স্পিন, সবই যেন দুই লঙ্কান ওপেনারের কাছে ছিল ডাল-ভাত। তবে দিন শেষে ম্যাচ সেরা তিন উইকেট নেয়া সুরঙ্গ লাকমল।
অথচ এই উইকেটেই ব্যাট করতে নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল তামিম-সাকিবদের। ব্যর্থতার মিছিলে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছেন একবার জীবন পাওয়া মুশফিকুর রহীম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ রান এসেছে সাব্বিরের ব্যাট থেকে। বাকিদের রান যেন মোবাইলের ডিজিট, কী লজ্জা। সর্বশেষ এমন চিত্র মিরপুরে দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালের ১৭ জুনে। যেখানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল মাত্র ৫৮ রানে।
ভুতুরে দিনে পরাজয়ের অন্যতম কারণ কী? মাশরাফি সংবাদ সম্মেলনে যা বললেল, তার সারমর্ম হলো, ‘ক্রিকেটে এটা বাজে একটি দিন বাংলাদেশের জন্য। আমরা বাজে ক্রিকেট খেলেছি।’ তারপরও কিছু কিছু জায়গায় ব্যাটসম্যানদের দায়বদ্ধতার অভাব দেখছেন ক্যাপ্টেন, ‘দ্রুতই চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ওখান থেকেও ১৮০ বা দুইশ রান করার মতো অ্যাবিলিটি ছিল। কিন্তু হয়নি। দরকার ছিল উইকেটে আরেকটু সেট হয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ইনিংসটাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করা।’ শ্রীলঙ্কার কাছে হারতে পারে বাংলাদেশ, কিন্তু তাই বলে এভাবে? মানতে পারছেন না মাশরাফিও, ‘শেষ তিন ম্যাচে জয়ের পর এভাবে হারব সেটা হয় না। আসলে কমেন্ট করা খুব কঠিন এভাবে তিন ম্যাচে পারফরম্যান্সের পর। তবে আমাদের ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। এটা হয়তো ফাইনালের আগে সতর্ক বার্তা।’
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল? তাতে অবশ্য মাশরাফির আপত্তি। তার মতে, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও সতর্ক ছিল দল। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তো আরও। শেষের দিকে মাশরাফির কণ্ঠের আহাজারি, ‘এটা বলতে পারি যে একটা বাজে দিন গেছে। বাজে ক্রিকেট খেলেছি আমরা।’
এই ম্যাচে দুটি কীর্তির সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। একটি দলীয় বাকিটা ব্যক্তিগত। কোনটিই হয়নি। টানা দুই ম্যাচে লঙ্কানদের হারানো যায়নি। আর এক উইকেটের অভাবে বাংলাদেশের দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকারি হওয়ার অপেক্ষা বেড়েছে কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজের।
বাংলাদেশের সামনে প্রথমবারের মতো ত্রিদেশিয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। তবে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের ভয়াল স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো মাশরাফি ব্রিগেড?

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads