• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

দেশের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ অর্জন

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ০৬ জানুয়ারি ২০২২

তখনও বাংলাদেশের লোকজন ঠিকমতো ঘুম থেকেই ওঠেনি। শীতের সময় বলে সূর্যের আলোও আকাশের পূর্বকোণে উঁকি-ঝুঁকি দেয়নি। কিন্তু ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটের খেলা টেস্টের সূর্যটা ঠিকই লাল-সবুজের সাথে ভালোবাসায় মিশে গেছে। বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা আরো একবার বিশ্ব ক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দিল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল টাইগাররা। যেখানে দীর্ঘদিন যাবত জিততে পারেনি বিশ্বের সব সেরা সেরা দল। মুমিনুলরা প্রমাণ করলো, আশপাশের প্রায় সব দেশের মধ্যে যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একমাত্র জাতির সন্তানরা হারতে জানে না, হারতে শেখেনি।

টেস্ট হলো ক্রিকেটের আদি ফরম্যাট, ক্রিকেটের ব্যকরণ। এখানে বাংলাদেশ যে কতটাই দুর্বল ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে পাকিস্তানের সদ্যসমাপ্ত সফরে। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে। সেখানে এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়, বিশাল অর্জন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব বড় বড় দলকে হারিয়েছে কম আর বেশি। কিন্তু টেস্টেই বাংলাদেশ ছিল পিছিয়ে। এই জয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে ৫ নম্বরে উঠে এলো।

২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা লাভের পর বাংলাদেশ কখনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজদেরকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়নি। আমাদের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সত্যিকার অর্থে ক্রিকেটের ব্যকরনী ফরম্যাটের জন্য ভালো, জুতসই ও গঠনমূলক কাজের কাজটি করেনি। ফলে বার বার বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। কতবারই তো বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু রক্তে যাদের যুদ্ধ জয়ের নেশা, তাদের কী আর দমিয়ে রাখা যায়? বৃটিশ বিরোধী

আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা পালিত, দেশপ্রেমের লেলিহান শিখা যাদের রন্ধে রন্ধে, তাদের জয়ী হতে শক্তিশালী মারণাস্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না। সেটা মাঠে-ময়দানে কিংবা অন্য যেখানেই হোক, দৃশ্যমান হবেই। যেমনটি এবার মাউন্ট মঙ্গুনাইয়ের ক্রিকেট মাঠে আমরা দেখলাম।

পাকিস্তান আমলে আমাদের অঞ্চলের (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলে সুযোগই পেত না। একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড় হিসেবে পাকিস্তান দলে নাম ছিল রকিবুল হাসানের। যদিও তার একাদশে স্থান হয় নি। রাজনৈতিক, আর্থিক, শিক্ষা, সামাজিক ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়া ক্ষেত্রেও চরম অবহেলিত ছিলাম আমরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাই নতুন করে সবকিছু গঠনের সূচনা হয়। ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম বিদেশি দলের মুখোমুখি হয়, তখন টেস্টের বাইরের দলের সঙ্গেও দুই কিংবা তিন দিনের ম্যাচেও ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) এবং শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কাছে বেশ কয়েকটি ম্যাচে লজ্জায় পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

একুশ বছর আগে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা লাভ করে অনেকটাই অপ্রস্তুত অবস্থায়। তবে সেটা যে আসলেই আইসিসির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, দেরিতে হলেও তা প্রমাণ করলেন মুমিনুল বাহিনী। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেখানে বিশ্বের সব বড় বড় দল টেস্ট ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ এবার দুই টেস্টের প্রথমটিতেই বাজিমাত করলো। এমন সাফল্য কোনো ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা যায় না। কোনো আবেগ দিয়েও এর রেশ টানা যায় না। বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীর রং-তুলি দিয়েও ঐ সাফল্যকে ফুটিয়ে আনা যাবে না। কারণ, এটা যে কোনো সাধারণ সাফল্য নয়, এটা এখন পর্যন্ত দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এই জয়ের সাফল্য ধরে রাখতে হলে আমাদের আরো সজাগ থাকতে হবে। মনে করতে হবে, এটা কেবলই সূচনা, শেষ নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads