• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কিশোর সিয়ামের লেগ স্পিন ভেলকি

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

কিশোর সিয়ামের লেগ স্পিন ভেলকি

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০২২

বরিশালের শিশু আসাদুজ্জামান সাদিদের পর এবার কুড়িগ্রামের এক কিশোরের লেগ স্পিন ভেলকিতে মজেছে দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে কিশোর লেগ স্পিনার সামিউল হক সিয়াম।

নেটদুনিয়ায় সিয়ামকে তুলনা করা হচ্ছে কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্নের সঙ্গে। অনেকে তাকে রশিদ খানের সঙ্গেও মেলাচ্ছেন। কিশোর সিয়াম এখন আলোচনায় তার স্পিন ভেলকিতে। লেগ স্পিনার হিসেবে তার সম্ভবনা দেখছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।

দেশের উত্তরের সবশেষ জেলা কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ছেলে সিয়াম। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ডানহাতি এ লেগ স্পিনার নিজ এলাকা এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বোলিং অ্যাকশন দিয়ে।

মেধাবী এ কিশোরের বড় বাধা আর্থিক টানাপোড়েন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সিয়াম ৭ বছর বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী। অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্নকে অনুসরণ করে স্বপ্ন দেখছে লেগ স্পিনার হবার।

ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে সিয়াম। পশ্চাৎপদ এলাকা আর অভাবের কারণে সিয়াম কতদূর যেতে পারবে তা নিয়ে ভাবনায় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

সরেজমিনে ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মাঠে অনুশীলন করতে দেখা যায় সিয়ামকে। সেখানে সবুজ ঘাসের মাঠে বোলিং করে চলেছে সিয়াম। অপর প্রান্তে ব্যাট করছে একজন ব্যাটার। ডানহাতের কাঁধ বাকিয়ে লেগ স্পিনার কব্জির মোচড় দিয়ে বল করে হতবাক করছে উপস্থিতদের। পিচে তার বলের টার্ন দেখলে চোখ ফেরানো মুশকিল। বল লেগের দিক থেকে অফের দিকে ঘুরে যায় অনায়াসে।

বেশিরভাগ সময়েই বল পিচে পড়ার পর ঘুরে অফ সাইডের স্টাম্প উপড়ে ফেলছে। লেগ স্পিনার হিসেবে সিয়াম সাধারণত লেগ ব্রেক বল করে। টপস্পিন ও সাইড স্পিনের সামঞ্জস্য ঘটাতে পারে এ কিশোর।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন দুলু মাস্টার। নিজের জায়গা জমি তেমন না থাকায় বর্তমানে সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন স্ত্রী কল্পনা বেগম ও সন্তানদের নিয়ে। এ দম্পতির বড় ছেলে ১৬ বছরের ওয়ায়েস কারুনী। তারপর ১২ বছরের সামিউল হক সিয়াম। সবচেয়ে ছোট আয়াতুল্লা রুহানি শুবার বয়স ৭ বছর।

দুলু মাস্টার মূলত শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সে টাকা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া, বাড়ি ভাড়া এবং সংসারের খরচ চালান। তার পৈতৃক বাড়িতে অন্য ভাই-বোনরা থাকেন।

সিয়াম ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। লেগ স্পিনার হবার সুবাদে অল্প বয়সেই এলাকার বিভিন্ন টুর্নামেন্টে তার ডাক পড়ে। জেলার বয়সভিত্তিক অনুর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে কুড়িগ্রাম স্টেডিয়ামে তার খেলা হয়নি। আপাতত ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ মাঠেই অনুশীলন করে সে।

এলাকার মানুষের ভাষ্য, ভালো কোচের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেলে সিয়াম লেগ স্পিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। মানুষের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত সিয়াম বলে, ‘৭ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলি। শেন ওয়ার্ন, রশিদ খানের বোলিং দেখে লেগ স্পিনার হবার ইচ্ছে জাগে। স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলার। সুযোগ পেলে বিশ্বকাপ জয়ে ভূমিকা রাখব।’

সিয়ামের বাবা দেলোয়ার হোসেন দুলু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সিয়াম ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী। আমিও তাকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। কিন্তু অসচ্ছলতার কারণে ছেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারিনি। কুড়িগ্রামে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে তাকে সেখানে পাঠাতে পারিনি।’

খেলার সঙ্গী রাফিক বলে, ‘সিয়াম লেগ স্পিনার হিসেবে খুব ভালো বোলিং করে। ওর বল খেলতে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রশিক্ষণ নিলে সে অনেক বড় ক্রিকেটার হতে পারবে।’

কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার কোচ বিজন কুমার দাস বলেন, ‘সিয়ামকে আমি ওর বোলিং অ্যাকশন দেখে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ডেকেছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে স্মার্টনেস, বোলিং কৌশলে গ্রামের ছেলে হিসেবে কিছুটা দুর্বলতা আছে। এটা থাকা স্বাভাবিক। তবে সিয়ামকে ভালো প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে দেশের লেগ স্পিনারের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।’

কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান লোবান বলেন, সিয়ামের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে সে এখানে আসতে পারেনি। তবে আসলে আমার পক্ষ থেকে তার থাকার ব্যবস্থা ও খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads