• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

নির্বাচন

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও নৌকার ভরাডুবি

ইউপিতে বিদ্রোহীদের দাপট

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০২১

সহিংসতার মধ্যেও স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন ধাপের নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। তবে এবারের ধাপের বেশির ভাগ ইউপিতে ভরাডুবি হয়েছে নৌকা প্রার্থীদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেশিরভাগ ইউপিতে জনপ্রিয়তা মূল্যয়ন কর হয়নি, লবিং-এর ওপর ভিত্তি করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অনেক এলাকায় তৃণমূলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপের ভোটে বেশিরভাগ ইউপিতেই নৌকার বিদ্রোহী প্রর্থী বিজয়ী হয়েছেন।  

এদিকে ইউপি নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যও বিভক্ত লক্ষ করা গেছে, যার প্রভাব পরেছে তৃতীয় ধাপের ভোটে। গত রোববার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে দেশের এক হাজার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হয়। একই দিনে দেশের ১০টি পৌরসভায়ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে  ১০০ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তৃতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট ৫৬৯ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩২ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে আগের দুই ধাপসহ মোট ২৫৩ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। প্রথম ধাপে ৭২ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮১ জন একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হিয়েছেন ১০০ ইউপিতে।

এদিকে ভোটের মাঠে সার্বিক ভাবেই বদলে গেছে অনেক ইউপির হিসাব-নিকাশ। এই ধাপে ৩৩টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ নির্বাচনে অনেক ইউপিতে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। 

প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন সূত্র জানা যায়, সাতক্ষীরায় আবারো আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। জেলার কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭ ইউপির মধ্যে ১১টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। রোববার কালীগঞ্জের ১২ ও দেবহাটার ৫টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬টি করে ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ১টি ইউপিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

বেসরকারিভাবে কালীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন কৃষ্ণনগরে সাফিয়া পারভিন (জাপা), দক্ষিণ শ্রীপুরে গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (নৌকা), তারালিতে এনামুল ইসলাম  (নৌকা), চাম্পাফুলে মোজাম্মেল হক গাইন (নৌকা),  আবুল কাশেম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (নৌকা), রতনপুরে আলিম আল রাজী (নৌকা),  বিষ্ণপুরে বিএনপির জাহাঙ্গির আলম (স্বতন্ত্র), নলতায় বিএনপির আজিজুর রহমান (স্বতন্ত্র), মৌতলায় মো. ফেরদৌস মোড়ল (স্বতন্ত্র), মথুরেশপুরে আবদুল হাকিম (স্বতন্ত্র), ভাড়াশিমলায় নাজমুল হাসান (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) ও ধলবাড়িয়ায় গাজী শওকত হোসেন (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী)।

অন্যদিকে, দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন কুলিয়া ইউনিয়নে মো. আছাদুল হক (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী), পারুলিয়ায় গোলাম ফারুক বাবু (স্বতন্ত্র), দেবহাটায় মো. আবদুল মতিন (স্বতন্ত্র), সখীপুরে সাইফুল ইসলাম (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) ও নওয়াপাড়ায় আলমগীর হোসেন সাহেব আলী (নৌকা)।

দলের এমন বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, কোনো কোনো ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই সঠিক হয়নি। এর মধ্যে দলের কোনো কোনো নেতা অন্য প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। এ জন্য ভোটের ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে।

নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার ৫টি ইউপি ও একটি পৌরসভার মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। নৌকার প্রার্থীদের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে যে ৫ জন বিজয়ী হয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৩ জন এবং ২ জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয় পেয়েছে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- সেনবাগ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু নাছের ওরফে ভিপি দুলাল, ১নং ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রহমান, ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থী শওকত কানন, ৪নং কাদরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন, ৬নং কাবিলপুর ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বাহার, ৮নং বীজবাগ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম উদ্দিন কাজল।

নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবির বিষয়ে জানতে চাইলে সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ চৌধুরী তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, সবাই এখন ক্ষোভ-দুঃখে আছে। আমি আগে খোঁজ খবর নিয়ে পরে এ বিষয়ে কথা বলব।    

পাবনায় নৌকা মার্কার প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জন ২১ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নারিকেল গাছ মার্কার প্রার্থী আব্দুল বাতেন পেয়েছে ৩ হাজার ৬৬০ ভোট। এছাড়া রেলইঞ্জিন মার্কার প্রার্থী এস এম ফজলুর রহমান মাসুদ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৭৯ ভোট, জগ মার্কার এস এম আব্দুল্লাহ পেয়েছে ৮১৭ ও মোবাইল মার্কার প্রার্থী সাদিয়া আলম পেয়েছে ২২৫ ভোট।

কুমিল্লার ৩ উপজেলায় ৩০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬ ইউনিয়নে নৌকা ও ১৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা ৯ টি ইউনিয়নে ৬ টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছে। ২ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় হয়েছে।

নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ যারা করেছেন তারা হলেন, ভবানীপুর ইউনিয়নে মো. খলিলুর রহমান, খোশবাস উত্তর ইউনিয়নে মো. নাজমুল হাসান সর্দার, চিতড্ডা ইউনিয়নে মো. জাকারিয়া, আড্ডা ইউনিয়নে মো. জাকির হোসেন বাদল, পয়ালগাছা ইউনিয়নে সৈয়দ মাহিন উদ্দিন ও লক্ষীপুর ইউনিয়নে মো. আবুল হাসেম। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন মো. মাজহারুল ইসলাম মিঠু, রাকিবুল হাসান লিমন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, পুরুষ সদস্য পদে ৩১৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ৯নং জামাল ইউনিয়নে মোদাচ্ছের হোসেন (নৌকা), ৩নং আলাউদ্দীন আল আজাদ (স্বতন্ত্র), ৪ নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নে রাজু আহমেদ রনি (নৌকা), ৫ নং সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নে নাছির উদ্দীন (নৌকা), ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম রিতু (স্বতন্ত্র), ৮ নং মালিয়াট ইউনিয়নে আজিজুল খাঁ ( স্বতন্ত্র), ১০ নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে আয়ুব হোসেন (নৌকা) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত।

রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হয়েছেন আবু সালেহ মো. তাজিমুল ইসলাম শামীম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বড় ভাইয়ের ছেলে। রোববার এ পৌরসভায় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন শামীম।

নীলফামারী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী দেওয়ান কামাল আহম্মেদ ষষ্ঠবারের মতো জয় পেয়েছেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে ১৩ হাজার ৪৪৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থী।

শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে ফের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মহসিন মিয়া মধু। নির্বাচনে বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৮৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মনসুরুল হক পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৩২ ভোট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও সরাইল উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সরাইলের ৯টি, নবীনগরে ১৩টি এবং বাঞ্ছারামপুরে ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। বাঞ্ছারামপুরের একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ সব পদে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ৫২৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির আহমেদ ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৭৪ ভোট। নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন চশমা প্রতীকে ৩২১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর আলম আনারস প্রতীকে ৫০৪১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফিরোজ আলম পেয়েছেন ৪০৫৯ ভোট। রছুল্লাবাদ ইউনিয়নে খন্দকার মনির হোসেন স্বতন্ত্র পদে লড়ে আনারস প্রতীকে ৫৮৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রীরামপুর ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে ৩৩১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জাকি উদ্দিন।

জিনোদপুর ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে লড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল ৫১২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। লাউরফতেহপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৩৯৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশিকুর রহমান আনারস প্রতীকে ৪৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রতনপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা আনারস প্রতীকে ৬৭২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। শ্যামগ্রাম ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামান খান ৬১৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া নড়াইলের কালিয়ায় ১০ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও দুটিতে নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে পলি বেগমও মাউলী ইউনিয়নে রোজী হক বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী উপজেলার কলাবাড়ীয়া ইউনিয়নে মাহমুদুল হাসান কায়েস, বাবরা-হাচলা ইউনিয়নে মো. মোজাম্মেল হোসেন, চাচুড়ি ইউনিয়নে মেলজার হোসেন ভূঁইয়া, পুরুলিয়া ইউনিয়নে আমিনুল ইসলাম, সালামাবাদ ইউনিয়নে মাহবুবুর মোল্যা, ইলিয়াচাবাদ ইউনিয়নে মল্লিক মানিরুল ইসলাম, বাঐশোনা ইউনিয়নে মো. চুন্নু শেখ, পহরডাঙ্গা ইউনিয়নে মল্লিক মাহামুদুল ইসলাম, জয়নগর ইউনিয়নে কাজী আইয়ুব হোসেন ও খাশিয়াল ইউনিয়নে বিএম বরকত উল্লাহ নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহীর ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ১০টিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। বাকি তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। পবা উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৪টিতে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এরা হলেন- হুজুরীপাড়ায় গোলাম মোস্তফা, দামকুড়ায় রফিকুল ইসলাম ও বড়গাছীতে শাহাদত হোসাইন সাগর। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হরিপুরে জয়লাভ করেছেন বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল।

এছাড়া দর্শনপাড়ায় শাহাদত হোসেন সাব্বির (আনারস), পারিলায় সাঈদ আলী মোরশেদ (ঘোড়া) এবং হড়গ্রাম ইউনিয়নে আবুল কালাম আজাদ (অটোরিকশা) বিজয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে সাব্বির ও মোরশেদ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। আর আবুল কালাম আজাদ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এদিকে মোহনপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের সবকটিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এরা হলেন- মৌগাছি ইউনিয়নে আল আমিন বিশ্বাস, ধুরইলে দেলোয়ার হোসেন, রায়ঘাটিতে বাবুল হোসেন, ঘাষিগ্রামে আজহারুল ইসলাম, বাকশিমইলে আব্দুল মান্নান ও জাহানাবাদ ইউনিয়নে হযরত আলী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের চারটিতে স্বতন্ত্র এবং তিনটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বিজয় লাভ করেন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিতরা হলেন, ১নং মুকুন্দপুর ইউপিতে আবুল কালাম আজাদ (স্বতন্ত্র), ২নং কাটলা ইউপিতে ইউনুছ আলী (আওয়ামী লীগ), ৩নং খাঁনপুর ইউপিতে চিত্ত রঞ্জন পাহান (আওয়া মীলীগ), ৪নং দিওড় ইউপিতে আব্দুল মালেক (স্বতন্ত্র), ৫নং বিনাইল ইউপিতে হুমায়ন কবীর বাদশা (স্বতন্ত্র), ৬নং জোতবানী ইউপিতে আব্দুর রাজ্জাক (স্বতন্ত্র) এবং ৭নং পলিপ্রয়াগপুর ইউপিতে রহমত আলী (আওয়ামী লীগ)। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে নৌকার ভরাডুবি। ৯টি ইউনিয়ের মধ্যে ১টিতে নৌকা ৮টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় লাভ করেছেন।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ৫ ইউনিয়নে ৪ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে আরেক ইউনিয়ের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে পাঁচ ইউনিয়নের সবকটিতে আওয়ামী লীগের জয় হয়েছে এবং তারা সকলেই বর্তমান চেয়ারম্যান।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে জাগীর ও গড়পাড়া ইউনিয়ন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাকির হোসেন ও আফসার উদ্দিন সরকার। অন্য ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ উপজেলায় আওয়ামী বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনি ঘুর্ণিঝড়ে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। দুই উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে আ.লীগ কেবল দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপেজলার দুই ইউনিয়নে জয় হয়েছেন। ৫ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, ২ জাতীয় পার্টি ১ টিতে ও ৯ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নে চশমা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৬০১ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু সাঈদ বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাই সাইকেল প্রতিকের এলিজা সাঈদ পেয়েছেন ২ হাজার ১০৫ ভোট। অন্যদিকে চিরাপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউনিয়নে চশমা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. লাইকুজ্জামান মিন্টু বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাঙ্গামাটি জেলার ৩টি উপজেলার ৮ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ৪ টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্ধতা এবং আজ নির্বাচনে ৩টি আওয়ামী লীগ ও ১টি স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় লাভ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফলে নৌকা ৫টি, স্বতন্ত্র ৭টি ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন।

নওগাঁর মান্দা এবং বদলগাছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১নং ভারশো ইউনিয়ন মোস্তাফিজুর রহমান নৌকা প্রতীকে, ২নং ভালাইন ইউনিয়ন গোলাম মোস্তফা (আ.) বিদ্রোহী, ৩ নং পরানপুর ইউনিয়ন মো. উজ্জ্বল নৌকা, ৪নং মান্দা ইউনিয়ন তোফাজ্জল হোসেন স্বতন্ত্র জামাত, ৫নং গনেশপুর ইউনিয়ন বাবুল চৌধুরী স্বতন্ত্র বিএনপি, ৬নং মৈনুম ইউনিয়ন আনিছুর রহমান (আ.) বিদ্রোহী, ৭নং প্রসাদপুর ইউনিয়ন আ. মতিন স্বতন্ত্র বিএনপি, ৮নং কুসুম্বা ইউনিয়ন নওফেল স্বতন্ত্র বিএনপি, ৯নং তেতুলিয়া ইউনিয়ন এস এম মোখলেছুর রহমান স্বতন্ত্র জামাত, নুরুল্যাবাদ ইউনিয়ন মো. ইয়াচিন স্বতন্ত্র জামাত, ১১নং কালিকাপুর ইউনিয়ন আশরাফুল ইসলাম বাবু স্বতন্ত্র বিএনপি, ১২নং কাশোপাড়া ইউনিয়ন আব্দুস সালাম (আ.) বিদ্রোহী, ১৩নং কসব ইউনিয়ন ফজলুর রহমান নৌকা এবং গোলাম আজম (আ.) বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা),  ৫ জন ও ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads