• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রচার শেষ কাল ভোট

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

নাসিক নির্বাচন

প্রচার শেষ কাল ভোট

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ জানুয়ারি ২০২২

শেষ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। আগামীকাল রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে নির্বাচনি সরঞ্জাম। নির্বাচনে কে জিতবে তা নিয়ে এখন চলছে নানা সমীকরণ। স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন, অতীতের মতো এবারের  সিটি নির্বাচনেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে।

এই সিটি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বিগত দুই নির্বাচনে দেখা যায়নি। তাই উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে গোটা নারায়ণগঞ্জ। তারপরও ভোটের দিন কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বা সংঘাতের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, গতকাল নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিনে ব্যস্ত সময় কাটান প্রার্থীরা। জয়ের জন্য নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এদিন নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা। মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের দিকে। দুজনেরই কর্মী-সমর্থকদের প্রচার প্রচারণা চালায় সমানতালে।

শেষ দিনে প্রচারে নির্বাচনে একটি পক্ষ সহিংসতা চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর চেয়ে লক্ষাধিক ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হবেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন আইভী।

এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী প্রার্থীর অভিযোগসহ সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, প্রশাসনকে বরাবরই বলে আসছি ভোটের দিন যেন উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে, নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে, নতুন প্রজন্মের ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার এবং আমি নির্বাচনে জিতব ইনশাআল্লাহ। সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংসতা করে, তাহলে এটা ঠিক হবে না।

তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় সহিংসতার বিপক্ষে, আমার পক্ষ থেকে কোনো সহিংসতা হবে না। সহিংসতা করবে আমার ওই ধরনের কোনো বাহিনীই নাই এবং আমি কোনো দিন সহিংসতা করিও নাই, কিন্তু সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। আমার ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, আমি আমার জায়গাতেই আছি। প্রথম দিকে যা বলেছি, এখনো তাতেই আছি। বার বার বলছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সতর্ক থাকে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, স্বাভাবিক হয়, কোথাও কোনো কেন্দ্র যদি বন্ধ না হয়, তাহলে আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব এবং এটা আমার চাচা তৈমূর আলম নিজেও জানেন। কারণ আমি খুব শক্ত এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। আমার সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক রয়েছে। আমাকে দুর্বল করা এত সহজ নয়। আমি কোনো কিছুতেই দুর্বল হবো না।

আওয়ামী লীগ নেতাদের নারায়ণগঞ্জে এসে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এর জবাবে আইভী বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনেকেই আসেন। সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হতে পারে অথবা অন্য কেউ হতে পারে। এই ব্যাপারে আমার জানা নেই কারা আসছে আর কারা থাকছে।

আইভী বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, বহিরাগতদের দিয়ে আমি নির্বাচন করছি। উনি (তৈমূর আলম) কী বোঝাতে চাচ্ছেন, সেটা আমার জানা নেই। আমি সব সময় বলেছি জনতাই আমার শক্তি, আমার আগের নির্বাচনের ট্রাডিশন আমি মানুষের কাছেই যাই। বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করব কেন, যেখানে আমার ভিত্তি হলো জনগণ।

কেন্দ্রীয় নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা করেছেন, সেটা জানেন না জানিয়ে আইভী বলেন, আমার যারা নেতা আছে যারা ঢাকা থেকে এসেছেন, তারা জানেন আমার সম্পর্কে। নেতৃবৃন্দ প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে গিয়ে তারা দেখেছেন আইভী কোন অবস্থানে আছে। আমার নেতৃবৃন্দ আমার বিজয় নিয়ে কখনোই শঙ্কিত ছিলেন না।

প্রত্যেকটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে আইভী বলেন, প্রতিটা নির্বাচনে একেক রকম চরিত্র ছিল। এবারের নির্বাচনও অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেটা বিভিন্ন কারণেই, কিন্তু এটা আমার শেষ নির্বাচন কি না, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আর আইভীকে পরাজিত করার জন্য অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে কাজ করছে। সেই পক্ষটি ঘরের হতে পারে আবার বাইরেরও হতে পারে। সবাই মিলে গেছে কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়, কীভাবে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যায়। কারণ সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।

অন্যদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি দলের নেতারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলার সরকার দলীয় নেতারা সার্কিট হাউস, ডাকবাংলোয় অবস্থান করছেন। আইন অনুসারে সরকারি কোনো গাড়ি ও ডাকবাংলো ব্যবহার করার নিয়ম নেই। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অত্যন্ত আস্থার সাথে অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলাম। সে অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং সে সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হাতি মার্কার এ প্রার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না হয়েও তিনি দলীয় সঙ্গীদের নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। এটা আইনগনভাবে অন্যায় এবং তিনি জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন। একজন উচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত নেতার কাছ থেকে যা আমরা আশা করি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তৈমূর বলেন, তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জনগণ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রত্যাশা করে আপনি এ দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক হয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে নির্বিঘ্নে, স্বচ্ছ এবং সুন্দরভাবে করার জন্য ব্যবস্থা নিবেন।

তিনি আরো বলেন, গুজব ছড়ানো হচ্ছে, আমি নাকি বসে পড়ব। বসে পড়ার জন্য নির্বাচনে নামিনি। নির্বাচন করার জন্য নেমেছি। আমি একটা দল করি। আমি বিএনপির একজন সক্রিয় সদস্য। এই দলের জন্য রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। মিডিয়াতে দেখেছেন পুলিশ কতবার শারীরিকভাবে নির্যাতিত করেছে। তখন আমি দলের ক্যান্ডিডেট ছিলাম। নেত্রীর নির্দেশে আমি সরে দাঁড়াই। আজ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করিনি কেন আমাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

নারায়ণগঞ্জ সিটিতে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণ নিয়ে তৈমূর বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নারায়ণগঞ্জের একটি সভায় বলেছিলেন, একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এবং আরেকজনকে পরাজিত করতে আমরা তৈমূরকে বসিয়েছি। সেটাও আমি মাথা পেতে নিয়েছি। ২০১৬ সালে আমাকে মনোনীত করা হলেও আমি নির্বাচন করিনি। শহরবাসীকে দুর্ভোগ লাঘবের জন্যেই আজ আমাকে নির্বাচনে নামতে হয়েছে।

পুলিশ তার ১৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে দাবি করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ঢাকা থেকে বড় বড় লোকরা এসে প্রভাব বিস্তার করছে, প্রশাসনের ওপর চাপ দিচ্ছে; নির্বাচন কমিশনকে এগুলো বন্ধ করতে হবে। গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে নেতা-কর্মী এবং পোলিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তবুও আমি এ নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকব।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৯টি সংস্থার ৪২ পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংস্থাগুলো হলো-জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস।

তবে পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মানার পাশাপাশি এসব সংস্থাকে ভোট শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের শর্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads