• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
সবার নজর আজ নাসিকে

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

সবার নজর আজ নাসিকে

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০২২

নানা জল্পনা-কল্পনা আর হিসেব নিকাশ মেলানোর পালা শেষ। বহুল প্রতিক্ষিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোট আজ। কার গলায় উঠবে বিজয়ের মালা তা ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচন করবে জনতা। যদিও ভোট নিয়ে উৎসবের পাশপাশি রয়েছে শঙ্কাও। তবে এসব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

নাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এর মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাঠ প্রশাসন। গতকাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয় ভোটের সরঞ্জাম। ভোটদানে গোপনীয়তা রক্ষায় সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকলেও নির্বাচনি নিরাপত্তায় পাঁচ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। 

ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো, পরিবেশও সন্তোষজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো নিয়োজিত আছেই। পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স, টহল বাহিনী, সবই থাকবে। র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সবাই থাকবেন।

ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, এ জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন।’

কাউকে কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।

গতকাল শহরের মাসদাইরে এক ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের এই পরিবেশ কেউ ভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন, তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে আসবেন, কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। সারা বিশ্ববাসী দেখবে, ঐতিহ্যবাহী এই নারায়ণগঞ্জের ভোট কতটা সুষ্ঠু হয়। এটা একটি মডেল নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কোনো ধরনের ছাড় এবং অরাজকতা সৃষ্টি করার সুযোগ দেব না। বহিরাগত কাউকে আমরা নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের মেজিস্ট্রেটরা ও র্যাব সদস্যরা থাকবেন। ভোটের দিন জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আপনাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে। ভোটের দিন অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন বহিরাগত কাউকে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ১৮ বছরের ওপরে যারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বের হবেন- তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট সাতজন প্রার্থী। আর ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১৪৮ জন। আর ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৩২। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেয়র পদ ঘিরে। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টানা দুইবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।

এই সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। তবে ভোটের মাঠে এবার সবার নজর নতুন ভোটারদের দিকে। এবারের নির্বাচনে ৪২ হাজারেরও বেশি নতুন ভোটার রয়েছেন। যা মোট ভোটারের প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে অন্যতম ট্রাম্পকার্ড এই নতুনরা।

নির্বাচন ঘিরে কিছু শঙ্কার কথা জানালেও জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী দুই প্রার্থী। আইভী তো বলেই দিয়েছেন সুষ্ঠু ভোট হলে লক্ষাধিক ভোটে জয় পাবেন তিনি। আর তৈমুর জানালেন জনজোয়ার বলে দিচ্ছে তার জয়।

সব শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। ইলেকশন শান্তিপূর্ণভাবে হবে। নির্বাচনের জন্য যারা থ্রেট হতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন নিয়ে জয়-পরাজয়ের নানা বিশ্লেষণ থাকলেও আলোচিত দুই মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার কেউই ইশতেহার নিয়ে আসেননি সাধারণ মানুষের কাছে। ভোটের প্রচারে বেশির ভাগেই ছিল দলীয় রাজনৈতিক নিয়ে উত্তাপ, কাদা ছোড়াছুড়ি। প্রধান দুই প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ইশতেহার আকারে নগরবাসীর কাছে তুলে ধরেননি কেউই। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আক্ষেপও রয়েছে।

ইশতেহার দেওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও না দেওয়াটা দুঃখজনক বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল করিম দীপু বলেন, ইশতেহার হচ্ছে আমাদের দেশের নির্বাচনের একটি সংস্কৃতি। যুগের পর যুগ ধরে ভোটাররা এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। প্রার্থীরা এই নির্বাচনে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছেন। সে জন্য হয়তো ইশতেহার দেওয়ার কথা ভুলে গেছেন।

তিনি বলেন, তরুণ ভোটারদের জন্য এটি কোনো ভালো দৃষ্টান্ত হলো না। কারণ আমরা তাদের ওই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারলাম না।

নারায়ণগঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ইশতেহার বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটি তো আমাদের নির্বাচনি সংস্কৃতি। সব প্রার্থীর ইশতেহার দেওয়া উচিত ছিল। আমার হাতে একটি কাগজ থাকলে আমার মেয়র আমার জন্য কী বলছেন, এবং কী করছেন সেটা মিলিয়ে নিতে সুবিধা হতো।

নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন নাগরিক কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের অনেকে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত। এ অবস্থায় ভোটে জিততে তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে, যা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে সহিংসতা।

পুলিশ বলছে, যেসব সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন তাদের মধ্যে কারো কারো নামে চুরি, মারামারি, চাঁদাবাজি ও মাদক আইনে মামলা আছে। অতীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে এমন ব্যক্তিরাও আছেন। বিভিন্ন মামলায় জেল খেটে জামিনে আছেন কেউ কেউ।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সি সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা কখনো সহিংসতার নির্বাচন চাই না। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার কারণে প্রাণহানি ঘটছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যারা মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন তাদের নিয়ে না থাকলেও কাউন্সিলরদের নিয়ে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। কারণ অতীতে আমরা দেখেছি, যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি করেছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads