• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জয় হোক মানবসভ্যতার

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

করোনা কথা

জয় হোক মানবসভ্যতার

  • মামুন মুস্তাফা
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

২০২০— বিশ্ব একে করোনা-বর্ষ হিশেবেই স্মরণে রাখবে। এ পর্যন্ত পৃথিবীব্যাপী ৯ লাখেরও বেশি (১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) মানুষের প্রাণসংহার ঘটিয়েছে এই কোভিড-১৯ খ্যাত ভাইরাসটি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এটি কত শত লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে তা কল্পনাও আজ দুঃসাধ্য! জাতিসংঘও বলছে করোনার টিকা আবিষ্কার ও বাজারে না আসা পর্যন্ত পৃথিবীতে টিকে থাকবে করোনা ভাইরাস। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আরো দুই বছর পৃথিবীতে করোনা মহামারী থেকে যাবে। এটি খুব আশঙ্কার কথা; যেহেতু এটি সংক্রামক রোগ অর্থাৎ বাংলা ভাষায় যাকে বলে ছোঁয়াচে রোগ আর তাই মাত্র ১০ মাসেই (ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে) পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষের মৃত্যু আমাদেরকে দেখতে হয়েছে।

ইতিহাস বলছে, একশ বছরের ব্যবধানে এরকম মহামারী পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে অতীতেও। ১৬১৬ সালে যার সূত্রপাত। ১৭২০ সালে এশিয়ায় বিশেষভাবে এই ভারতবর্ষে কলেরা ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে উজাড় হয়েছে জনপদ। ১৮২০ সালে প্রথমে ফ্রান্সে এবং পরে পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে ইঁদুরবাহিত রোগ প্লেগ। ধারণা করা হয়, এ রোগে পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। শুধু ফ্রান্সেই মৃতদেহ সরাতে জেলবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল সে সময়ের ফ্রান্স সরকার। আর সবশেষ ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু-তে পৃথিবীতে মৃত্যু ঘটেছিল ৫ লাখ মানুষের। তবে বর্তমানে এসব রোগের ওষুধ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে এগুলো আর আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে না। সুতরাং জাতিসংঘের কথার সূত্র ধরেই বলতে হচ্ছে, করোনার টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।

কিন্তু মানবসভ্যতার বিপর্যয় রোধে আমাদের কী করণীয়? এ কথা সত্য যে, একশ বছরের ব্যবধানে সংঘটিত এসব মহামারী পৃথিবীর মানবসভ্যতায় আঘাত হেনেছে। প্রচলিত জীবনধারার প্যাটার্নকে তছনছ করেছে। রাষ্ট্র তার সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে মানবসভ্যতার প্রচলিত ধারায় পরিবর্তনও এনেছে বা এসেছে। অতীতের সেসব মহামারী নির্মূলে প্রতিষেধক আবিষ্কারের পাশাপাশি টিকে থাকার লড়াইয়ে পৃথিবীর মানুষও তার জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।

বিশ্ব এখন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। প্রথমটি ছিল কৃষির; দ্বিতীয়টি শিল্প-কারখানার; তৃতীয়টি তথ্য-প্রযুক্তির; এবং চতুর্থটি রোবটের। এই রোবটই হবে আগামী পৃথিবীতে মানুষের একাধারে সহচর ও প্রতিদ্বন্দ্বী— দুটোই। চাকরি হারাবে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের দেশে দেশে অসংখ্য মানুষ— এমন দাবি করা হচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে এসে কোভিড-১৯ পৃথিবীর মানবসভ্যতায় ঝড় তুলে গেল। জন্ম দিয়ে গেল অনেক প্রশ্নের। চিহ্ন রেখে গেল সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ক্ষতের। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বলছে, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের মোট চাকরিজীবীর অর্ধেক কাজ হারাবে। কমে আসবে কর্মঘণ্টাও।’ এখনই দেশে দেশে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে আসছে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উদীয়মান অনেক দেশই যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে সবার আগে, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির দুটি খাত হচ্ছে— পোশাকশিল্প ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। কিন্তু করোনার কারণে দুটি খাতই এখন সংকটে। কোভিড-১৯-এর কারণে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী শ্রমিকরা বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরেই হাজার হাজার বেকার লোকের সমস্যা সামাল দিতে অর্থনীতিতে চাপ পড়াটা স্বাভাবিক। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯-এর কারণে এমন সংকটে আগামীতে পড়তে হবে অনুন্নত, উন্নত সব দেশকেই। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে উন্নত দেশগুলোকেও কাটছাঁট করতে হবে তাদের আর্থিক-বাণিজ্যিক কর্মপরিকল্পনায়। তার সুদূরপ্রসারী ফল ভোগ করতে হবে প্রতিটি উন্নয়নকামী দেশকেও। সে লক্ষ্যে আমাদেরও স্থির করতে হবে আমাদের আর্থিক ও বাণিজ্যিক নীতিমালা। বোধহয় সে কারণেই ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, শপিং মল সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সরকারকে। যদিও জীবনের ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে এক্ষেত্রে। বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে হবে। কেননা জীবন ও জীবিকা তো চালিয়ে নিতে হবে!

অথচ জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে! আবার জীবিকা না থাকলে জীবন চলবে না। অর্থাৎ জীবন ও জীবিকা একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে হয়, বাংলাদেশে কখনোই লকডাউন ছিল না। কেবল সপ্তাহের পর সপ্তাহ ছুটি বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক, আর্থিক সংস্থাগুলো থেকে প্রণোদনা ও ঋণ ইত্যাদি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র। ফলে অতি সচেতন মানুষ ঘরবন্দি থাকলেও অনেকেই ছুটি উপভোগ করতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। দীর্ঘ ছুটিতে অনেকেই সপরিবারে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে চলে গেছেন। আর নিম্নআয়ের মানুষ জীবন ও জীবিকার তাড়নায় ধীরে ধীরে ভিড় করেছে সড়কে, অলিতে-গলিতে, দোকানপাটে। বিপরীতে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত সাহায্য-অনুদান লোপাট হয়েছে অসংখ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের যোগসাজশে। যা-ই হোক না কেন, শুরুতেই গোটা দেশকে কঠিন লকডাউনের ভেতর নিয়ে আজকে পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক শিথিল করলে প্রতিদিনের এত মৃত্যু ও করোনা রোগী আমাদের দেখতে হতো না। যদিও সামনে ছিল যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি।

স্বাস্থ্যবিধি কী? আগেই বলেছি মানবসভ্যতার প্যাটার্নে পরিবর্তনের কথা। মানুষের জীবনধারায় রদবদলের কথা। আমরা এখন সে জায়গাটিতেই দাঁড়িয়ে। বলা হচ্ছে, মুখবন্ধ এঁটে, হাতে গ্লাভস পরে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা করতে হবে। অযথা ঘোরাঘুরি না করে যতটা সম্ভব ঘরবন্দি থাকবে মানুষ। ফলে সীমিত পরিসরে জীবন-জীবিকার তাগিদে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দিলেও করোনা সংযমের ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে আজ স্পষ্ট। এমনকি যেখানে এই করোনা রোগের উৎপত্তি, সেই চীনের উহানে দীর্ঘ ৩-৪ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর জনজীবন উন্মুক্ত হওয়ায় এবং চীনের অন্যত্রও জীবনযাত্রা শিথিল করার অব্যবহিত পরে আবারো করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর বিশ্ববাসী জেনেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও লকডাউন শিথিলের পরেই করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হঠাৎই বেড়ে গেছে। সেখানে এখন কেন্দ্রের পাশাপাশি সংক্রমিত এলাকায় রাজ্য সরকারের সপ্তাহে অন্তত দুদিন লকডাউন চলছে। সুতরাং এ থেকে পরোপুরি পরিত্রাণের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে কোভিড-১৯-এর একটি প্রতিষেধক আবিষ্কার পর্যন্ত। কিন্তু তাতেও কি মানবসভ্যতার জীবনাচরণে এই যে পরিবর্তন ঘটে গেল, এর ব্যত্যয় ঘটবে! একুশ শতকের উত্তর-আধুনিক যুগে সামাজিক দূরত্ব আগেই ঘটে গেছে। একই শহরে বসবাস করেও আত্মীয়তার বন্ধন ক্রমশ শিথিল হচ্ছে। উৎসব-পার্বণ ছাড়া অতি নিকটজনের সঙ্গেও দেখা হওয়া দুষ্কর। ‘নেক্সট ডোর নেইবার’ বলতে যা বোঝায়— সেখানেও দূরত্ব। জানা নেই কে বাস করে আমার প্রতিবেশী হিশেবে। সুতরাং এই সামাজিক দূরত্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ‘রোবটের যুগে’ ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এই স্বাস্থ্যবিধিতে আরো বলা হচ্ছে, বার বার সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়ার কথা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কথা। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, সেই ১৭২০ সালে যখন ভারতবর্ষে কলেরা ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিল, তখন থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর তীক্ষ হলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের। ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা, স্যানিটেশন সুবিধা এরপর থেকেই ধীরে ধীরে জনজীবনের অংশ হয়ে উঠল। আবার ইঁদুরবাহিত প্লেগ ১৮২০ সালে কিংবা ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনল। পুষ্টিকর খাবার কিংবা সুষম খাবার জায়গা করে নিল আমাদের খাদ্যতালিকায়, জীবনধারায়। তার মানে কী দাঁড়ায়? শতবছরের ব্যবধানে সংঘটিত মহামারী থেকে পাওয়া দিকনির্দেশনায় উত্তর-আধুনিক মানুষের যথেচ্ছাচার জীবনধারার ফলেই কি আজকের মহামারী কোভিড-১৯? জাতিসংঘ প্রতি বছরের ১৫ অক্টোবর পৃথিবীজুড়ে বিশ্ব হাতধোয়া দিবস পালন করে আসছে। তারপরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলো একুশ শতকের মানুষ।

তবে কি এই মহামারী প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রশ্ন উঠেছে এখানেও। প্রথম থেকে শোনা যাচ্ছিল, চীনাদের যথেচ্ছাচারভাবে বিষধর জীবজন্তু ভক্ষণ থেকে করোনার উৎপত্তি। বলা হয়, বাদুড় থেকে করোনা ছড়িয়েছে, যেমন— ইঁদুর থেকে প্লেগ। অন্যদিকে আরেকদল বলছে, এটি নিশ্চিতভাবেই চীনের উহানের একটি ল্যাবে জীবাণু-অস্ত্র গবেষণার ফল। এমন তথ্য-উপাত্ত প্রমাণের কথাও অনেকে বলছেন।

আর এটি নিয়ে এখন তিন মহাদেশের তিন পরাশক্তির মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। ইউরোপের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় প্রতিদিনই হুঙ্কার দিচ্ছেন চীনের বিরুদ্ধে। চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ, বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি জোর দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সংস্থাটির সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক ছেদের ঘোষণাও দিয়েছেন। যার অর্থ, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটিকে আর একটি কানাকড়িও দেবে না। অন্যদিকে এশিয়া মহাদেশের পরাশক্তি হিশেবে খ্যাত চীন বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এ থেকে স্পষ্ট যে, একশ বছরের ব্যবধানে সংঘটিত এই মহামারী, বর্তমান মানবসভ্যতা এবং বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে ফুলেফেঁপে ওঠা পুঁজিবাদ— এই তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, গত শতকেই সংঘটিত হয়েছিল দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই ১৯২০ সালে দেখা দেয় স্প্যানিশ ফ্লু। ধারণা করা হয়, এতে প্রাণ হারায় ৫ লাখেরও অধিক মানুষ। এর অব্যবহিত পরেই পুঁজিবাদী ঔপনিবেশিক দখলদারিত্ব দেশে দেশে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি করে তা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব ছিল না তৎকালীন বিশ্বমোড়লদের। আর তাই পুঁজিবাদের নতুন আগ্রাসননীতিকে এগিয়ে নিতেই জার্মানির হিটলারের ফ্যাসিজমকে পুঁজি করেই পৃথিবী জড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তির ভেতরে লাভ হয়েছে একটি— তা হচ্ছে, দেশ দখলের ঔপনিবেশিক আগ্রাসননীতি আর ধোপে টেকেনি। কিন্তু উন্নত বিশ্ব ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোকে ব্যবহার করে নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপানে পৌঁছতে সক্ষম হয় এবং এর মাধ্যমে তাদের নতুন অর্থনৈতিক উপনিবেশ গড়ে তোলার স্বপ্নপূরণ বেশ ভালোভাবেই সম্ভব হয়েছে।

এই অর্থনৈতিক উপনিবেশ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে যদি পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো এখন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ হবে উপলক্ষ মাত্র। গত বছর চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগ ইতোমধ্যে এশিয়ার অর্থনীতিসমৃদ্ধ দেশগুলোসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন করোনা ভাইরাস চীনকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চীন সব শক্তি প্রয়োগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। অর্থনীতি চাঙা রাখতে নিত্যনতুন পরিকল্পনাও গ্রহণ করবে। পাশাপাশি শত্রুপক্ষ তাকে দাবিয়ে রাখতে যে কর্মকৌশল গ্রহণ করবে তা থেকে তাবৎ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো কীভাবে স্বকীয়তা বজায় রাখবে, সেটিও এখন ভাবনার বিষয়। আর তাই পৃথিবীর দেশগুলোতে হিটলার-মুসোলিনির মতো কোনো উন্মাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা থাকলে মানবসভ্যতার আরো একবার বিপর্যয় অনিবার্য। তা থেকে উত্তরণে এখন সাধারণ মানুষকেই কাজ করতে হবে। আগামীতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের আসন্ন নির্বাচনে জনগণকেই বেছে নিতে হবে সঠিক নেতৃত্ব। যেমনটি বলেছে জাতিসংঘ— ‘করোনার মহামারী থেকে শিক্ষা নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে বিশ্বনেতাদের।’

এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ঘোষণা দেয় ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘রেমিডিসিভির’ ব্যবহারে। গ্রেট ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ওষুধের গবেষণালব্ধ ফলের অপেক্ষায় বিশ্বমানুষ। রাশিয়াও তার উদ্ভাবিত প্রতিষেধকের প্রয়োগের অপেক্ষায়। চীনের উদ্ভাবন এখন বাংলাদেশেও ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে। এমনকি ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে করোনা ভাইরাসের ওষুধ উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছিল বেশ আগেই। এছাড়াও উন্নত অনেক দেশই করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় রত। তবে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি উদ্ভাবিত ওষুধের আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস। আশা করা যাচ্ছে, অতি শিগগির তা আলোর মুখ দেখবে। জনজীবন রক্ষার মাধ্যমে হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে এমনসব হিতকর কাজের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের সম্ভাবনাময় সূর্যকে ছিনিয়ে আনার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাবে বিশ্ব, এমনটাই আজ বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ। যেন আগামী একশ বছর পরে পৃথিবীর মানুষকে দেখতে না হয় নতুন কোনো মহামারী।

জয় হোক মানবসভ্যতার।

 

লেখক : কবি, সাংবাদিক

  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads