• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে স্মৃতিসৌধ হয়ে’

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে স্মৃতিসৌধ হয়ে’

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১৭ মার্চ ২০২১

একসময়ের প্রমত্ত মধুমতীর তীর ঘেঁষে এক সম্ভ্রান্ত জনপদ টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সাল, ১৭ মার্চ। এই দিনে সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এক শিশু। নাম খোকা। খোকা বাঙালিদের একটি প্রিয় নাম। সেই ছোট্ট খোকা হলো আজ সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনায়কদের মিছিলের প্রথম কাতারের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি হলেন বাঙালিদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতির পিতা। বাঙালি জাতির স্রষ্টা। বাংলাদেশ আজ সুবর্ণ রেখায়। একদা মড়া, খরা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও ঝড়-ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক গরিব জনপদের নাম বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের সম্মতি পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে পদযাত্রা শুরু করার। এমন একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি শোষণহীন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্রভেদী দাপট নিয়ে গর্বিত এক জাতির আত্মপ্রকাশের স্বপ্ন নিয়ে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী একটি বিশাল দেশের পাশে একটি ছোট দেশ কদাচিৎ স্বাধীন। এর একমাত্র ব্যতিক্রম কিউবা। এই অতি ক্ষুদ্র দেশটি বিশাল আমেরিকার পেটের ভেতর অবস্থান করেও মেরুদণ্ড উঁচু করে মাথা নত না করে সম্মানের সাথে, দাপটের সাথে টিকে আছে। তার একমাত্র কারণ, তাদের একজন নেতা আছেন ফিদেল কাস্ত্রো। আমরাও যেমন একজন নেতা পেয়েছিলাম তার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন বলেই দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাসের মাথায় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিল। অথচ আমরা জানি জাপানে, কোরিয়ায় এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর নামে আমেরিকান সৈন্যরা স্বদেশে ফিরে যায়নি। আল্লাহ আমাদের একজন ফিদেল কাস্ত্রো দিয়েছিলেন বলেই আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত থেকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পেরেছিলাম। দীর্ঘ ২৫ বছরের অমীমাংসিত সীমান্তবিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সমাধান করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমাদের অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, বাঙালি জাতির চরম দুর্ভাগ্য, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের এদেশীয় পরাজিত শত্রুদের চক্রান্তে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের চাকা থমকে দাঁড়ায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে। ঘাতকের পিস্তলের নিচে মুখ থুবড়ে পড়ে মানবতা, মানবসভ্যতা। তার পর শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতির পালা। আত্ম প্রতারণার গিলাফ দিয়ে গোটা জাতির আপাদমস্তক ঢেকে দেওয়া হয়। ছলচাতুরির কফিন দিয়ে দাফন করা হয় আমাদের যা কিছু ইতিহাসের, যা কিছু ঐতিহ্যের, যা কিছু গর্বের। এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকেও বিকৃত করা হয়। বঙ্গবন্ধু-সহ জাতীয় নেতাদের চরিত্র হননের মাধ্যমে ইতিহাস থেকে নির্বাসনে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। অপরদিকে কতিপয় খলনায়ককে জাতীয় ইতিহাসের সিংহাসনে অভিষিক্ত করার চেষ্টা করা হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতিপয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ভাড়া করা হয়। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। কারণ মিথ্যা দিয়ে ইতিহাস রচনা করা যায় না। ইতিহাসে মিথ্যার কোনো স্থান নেই। তাই সেই খলনায়করা আজ সবার অগোচরে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আর জাতির পিতা-সহ সব জাতীয় নেতা এদেশে ১৭ কোটি মানুষের হূদয়ে শহীদ মিনার হয়ে, স্মৃতিসৌধ হয়ে বেঁচে আছেন। তারা অমর। তারা মৃত্যুঞ্জয়ী। তাদের মরণ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন অনাগতকাল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads