• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ভিআইপি চলাচলে জনদুর্ভোগের কথা ভাবতে হবে

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

ভিআইপি চলাচলে জনদুর্ভোগের কথা ভাবতে হবে

  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

যানজট যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। মাত্রাতিরিক্ত যানজট নগরবাসীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলছে, সেইসঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দ। জনমত রয়েছে, বর্তমানে জনদুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘ভিআইপি’ সংস্কৃতি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশে প্রতিদিন আসছেন বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি। বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জনজীবন। রাস্তাঘাট বন্ধ ও  তীব্র যানজটের ফলে সাধারণ মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জন-অভিযোগ আছে, শুধু রাস্তাঘাটই নয়, ভিআইপি নিরাপত্তার স্বার্থে ফুটপাত এবং ওভারব্রিজে চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে পায়ে হাঁটা পথচারীও বিপাকে পড়েন।

ভিআইপি চলাচলের ক্ষেত্রে সড়কে অ্যাম্বুলেন্সও আটকে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে অনেক মুমূর্ষু রোগী থাকলেও যেন ভিআইপি চলাচলের ঊর্ধ্বে নয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মুমূর্ষু রোগী বহনকারী আ্য্যম্বুলেন্স আটকে আছে। আমরা অতীতেও লক্ষ করেছি, এই ভিআইপি সংস্কৃতির কারণে খুলনা থেকে এক কিশোর মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকা আনার পথে মাওয়া ঘাটের অপর প্রান্তে ফেরি বন্ধ রাখা হয়। ফলে ফেরিঘাটেই স্কুলপড়ুয়া কিশোর রোগীর মৃত্যু ঘটে। এই হূদয়বিদারক ঘটনার পরও আমাদের মানসিকতার উন্নতি ঘটেনি, যা দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি ভিআইপি চলাচলে রাস্তা বন্ধ হওয়ার ফলে কোথাও অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেও অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। এতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির শঙ্কা থেকে যায়।

বিশিষ্টজনদের অভিমত, সড়কে এখন সবচেয়ে বড় ভোগান্তি ভিআইপি সংস্কৃতি। আমাদের দেশে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চলাচল ও বিভিন্ন জরুরি যান চলাচলের জন্য বিশেষ কোনো লেনও নেই। ফলে জনদুর্ভোগ থামছে না। ভিআইপিদের জন্য বিশেষ  সুবিধা থাকলেও জনসাধারণের ভোগান্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। ভিআইপিদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত রেখে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও যে-কোনো জরুরি সেবাদানকারী যানবাহনকে যে-কোনো পরিস্থিতিতেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ভিআইপি চলাচলের ক্ষেত্রে রাস্তা বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। বিধি অনুযায়ী ভিআইপির জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল থাকবে। কিন্তু তাদের চলাচলের জন্য কোনো সড়ক বন্ধ বা অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় সড়কের এক পাশ খালি করে চলাচলের বিধান আছে। আমাদের দেশে ভিআইপি সংস্কৃতি অনেকটাই অপসংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত যেতে ভিআইপি পরিচয় ব্যবহার করে আমাদের দেশে প্রায়ই এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার গাড়ি রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে যেতে দেখা যায়। রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে যাওয়ার ফলে তীব্র যানজট লেগে যায়।

ভিআইপি ভোগান্তি কমাতে সর্বপ্রথম সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার। মূলত কারা ভিআইপি এবং কারা ভিআইপি সুবিধা পাবে সেটি আইন করে নির্ধারণ করা সবার আগে দরকার। প্রয়োজনে ভিআইপি বিড়ম্বনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ভিআইপি চলাচল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সড়কে আলাদা সার্ভিস লেন তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। তবেই জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads