• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সুপ্রভাত বাংলাদেশ

  • প্রকাশিত ০৩ মে ২০২১

পদ্মা শুধু একটি সেতু নয়, এটি বহুমুখী সেতু। এর শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে মূল সেতুর পুরো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এখন দৃশ্যমান। পূর্ণাঙ্গ পদ্মা সেতুতে এখন বাকি শুধু সড়ক ও রেলপথ স্থাপনের কাজ। স্প্যান বসানোর মতো জটিল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ায় গোটা দেশবাসী এখন স্বস্তিতে।

বর্তমানে এই সেতু তিনটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক। প্রথমত, সেতুর পাইলিং সংক্রান্ত। ১২২ মিটার গভীরে তিন মিটার ব্যাসার্ধের স্টিলের যে পাইল বসানো হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত বিশ্বের যে-কোনো সেতুর তুলনায় সর্বোচ্চ। দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প সহনীয়তা সম্পর্কিত। ১০ হাজার টন সক্ষমতার ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ ব্যবহারের ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করেছে পদ্মা সেতু। আর তৃতীয় রেকর্ডটি হলো নদীশাসন সংক্রান্ত। তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে ১০০ বছর টিকে থাকার শক্তি রয়েছে এই সেতুর। ভূমিকম্প ও মাটির ক্ষয়সহ যে-কোনো ধরনের ঘাত প্রতিরোধী হয়, সেজন্য বাঁকা করে নদীর তলদেশে নিয়ে গাঁথা হয়েছে খুঁটি। সড়ক ও রেল—এই ধরনের যানবাহনের ভার বহনে সক্ষম করে তুলতে খুঁটিগুলোকে ৪২ তলা ভবনের সমান ৪২০ ফুট গভীরে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু আজ বাংলাদেশের মানুষের ‘স্বপ্নের সেতু’। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন। এই সেতু বাস্তবায়িত হলে খুলনা, বরিশালসহ পুরো দক্ষিণবঙ্গের সাথে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই নয়, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই সেতু। জাপানি সংস্থা জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

অথচ এই সেতু নির্মাণের শুরুটা ছিল জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার। তবে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার রায়ে কানাডার আদালত একে নিছক গুজব ও অনুমাননির্ভর বলায় এবং কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক তা থেকে মুক্তি পায় জাতি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি স্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া সাহসী কাজ। সেই সাহসের বিজয় নিশান উড়িয়েছেন বর্তমান সরকার ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের বিশ্বাস আগামী বিশ্বে পদ্মা সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads