• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
সময় এসেছে জাতির অভিভাবক পদে অভিষিক্ত হওয়া

ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

সময় এসেছে জাতির অভিভাবক পদে অভিষিক্ত হওয়া

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২১

আজ ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বেচ্ছায় নির্বাসন কাটিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। সেই দিন ঢাকায় ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিস্নাত দিনে গণমানুষের ভালোবাসায় শিক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতির মঞ্চে পদার্পণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

অন্তত দুটি কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে-এক. এই জনপ্রিয় গণমানুষের রাজনৈতিক দলটির কিংবদন্তি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশই প্রতিষ্ঠা করেননি, তিনি পৃথিবীর বুকে একটি নতুন জাতিরও জন্ম দিয়েছিলেন। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাঙালি জাতি বলে কোনো স্বতন্ত্র জাতির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। দুই. বাংলাদেশের ও বাঙালি জাতির এক চরম অস্তিত্বসংকট সন্ধিক্ষণে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের তথা জাতির কান্ডারি হিসেবে নির্বাচিত করেছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত করার বহু বছর পর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন নথি পাওয়া গিয়েছিল যাতে লেখা ছিল-‘The assassination of Sheikh Mujib rendered the new-born country leaderless.’ বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণ করার পর বাংলাদেশ কী ভয়ংকর নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছিল তা বুঝতে বাঙালি জাতিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন নথি খুঁজতে হবে না। বঙ্গবন্ধুর জীবনটাই বাঙালি জাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ কেমন ছিল এদেশের দেশপ্রমিক মানুষ তা মর্মে মর্মে অস্থিমজ্জায় উপলব্ধি করতে পেরেছিল। জাতি এতিম হয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে।

শেখ হাসিনা স্বদেশ ফিরে আওয়ামী লীগের কান্ডারি হলেন। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরিই ছিলেন না, শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন ও স্বপ্নের প্রতিভূ। শেখ হাসিনার আয়ত মুখে সমুদ্রের স্বপ্নের মতো ভেসে ওঠা চোখের দিকে তাকালে বাংলার মানুষের হূদয়কন্দরে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর ছায়া-সুপুরুষ এক বিশালদেহী মানুষ, ব্যাকব্রাশ করা চুল, আপাদমস্তক সফেদ সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি মোড়ানো, জমকালো মুজিবকোট পরা, গলায় জড়ানো কাঁঠালচাপা রঙের চাদর। শেখ হাসিনার নম্র হাতের দিকে তাকালেই গোটা জাতির স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে দেখা দিত বঙ্গবন্ধুর সেই ঐন্দ্রজালিক শাহাদত আঙুলটি, যার হেলনে এদেশের লক্ষ লক্ষ জনতা হেমিলনের বংশীবাদকের মতো উদ্বেলিত হতো কখনো রেসকোর্স ময়দানে, কখনো পল্টনে, কখনো আরমানীটোলা মাঠে, আবার কখনো বাহাদুর শাহ পার্কে।

সেই সর্বনাশা ১৫ আগস্টে আমাদেরও সবকিছুই ছিল—পুরো আওয়ামী লীগের কেবিনেট, সংসদ সদস্যগণ, দল ও সহযোগী সংগঠন; ছিল আমাদের গোটা প্রশাসন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর। উপরন্তু ছিল আমাদের এলিট ফোর্স, রক্ষীবাহিনী। একমাত্র ছিল না বঙ্গবন্ধু। একমাত্র নেতা ছিল না বলেই সেদিন আমাদের যুদ্ধ শুরু না হতেই আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে, বিনাযুদ্ধে পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। অপরদিকে ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিল জীবন্ত। জেলখানার অভ্যন্তরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এজন্যই ইতিহাসবিদগণ বলেছিলেন, ‘বন্দি মুজিব ছিল মুক্ত মুজিবের চেয়ে লক্ষগুণ শক্তিশালী।’ তাই আমাদের কামান, গোলা, ট্যাংক, বোমারু বিমান না থাকা সত্ত্বেও মাত্র নয় মাসে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কন্যা ‘হাসু’ এসে আবার যখন জাতির হাল ধরলেন, চোখের নিমিষেই পাল্টে গিয়েছিল পুরো দেশ ও জাতির প্রেক্ষাপট। আবার বীর বাঙালি সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল। শেখ হাসিনাকে সিপাহশালারের পদে অভিষিক্ত করে তার সঠিক পরিচালনায়, নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের শক্তিতে বলীয়মান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ২১ বছর পরে হলেও আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিল। যদি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারতেন তবে ২১ বছরই কেবল নয়, ২১শ বছরেও হয়তো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শসিক্ত শক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেত কি না তা হয়তো ইতিহাসই নির্ধারণ করতে পারত।

শেখ হাসিনা কেবল রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হয়েই বসে থাকেননি; তিনি নতুন যুদ্ধেরও শুরু করেছিলেন—সেটা ছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, যে কথা জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই মুক্তির লক্ষ্যেই শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন রূপকল্প-২১ ও উন্নত বাংলাদেশ-৪১। সেই লক্ষ্যেই দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণের অভ্রভেদী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে জাতি শুধু নেতাকেই হারায়নি, জাতি হারিয়েছে তার অভিভাবককে। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কন্যা শেখ হাসিনা জাতির নেতৃত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির নেতৃত্বশূন্যতার অবসান ঘটিয়েছেন। এবার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির অভিভাবকের স্থানটিও পূরণ করতে হবে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads