• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ফিলিস্তিনে মাতৃভূমি রক্ষার সংগ্রাম নাকি ‘ধর্মযুদ্ধ’

  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০২১

জি. কে. সাদিক

 

প্রায় শতাব্দীকালব্যাপী ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন চলছে। ইসরাইলের আগ্রাসনে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এই আগ্রাসনের বড় শিকার হয়েছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবি অনেক জোরদার হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমরা বরাবরের মতোই ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমি রক্ষা ও স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে যে লড়াই করে আসছে তা ধর্মভিত্তিক জেহাদ নাকি মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য সর্বসম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম?

ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রামকে বিশ্বের মুসলিমদের বড় একটা অংশ যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে (অনেক আগে থেকে) তা এই সংগ্রামের শুরুর দিকের অবস্থানের থেকে স্পষ্টতই ভিন্ন। কারণ ফিলিস্তিনে মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, ড্রুজসহ নানা ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে আসছে ঐতিহাসিক কাল থেকে। অন্যদিকে ইসরাইল নামে যে রাষ্ট্র তার জন্ম ১৯৪৮ সালে। মানে মাত্র ৭৩ বছর বয়স। ইহুদিদেরই একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এই ধরনের দখলদারিত্বের বিপক্ষে। নোম চমস্কি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি মূলত ‘স্পোকেন এইথেস্ট’ ও একজন ‘অ্যানার্কিস্ট’। চমস্কি পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে ও জায়েনবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চারদের একজন। একইভাবে মার্কিন ডেমোক্রেটিক দলের নেতা ও গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তুমুল জনপ্রিয় প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স। সেও ইহুদি পরিবারের সন্তান; কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার। বর্তমানে মার্কিন সিনেটরদের অনেকেই ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইহুদিবাদের বিপক্ষে। অতীতে এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। একইভাবে ইসরাইলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিখ্যাত ‘স্যাপিয়েন্স’ বইয়ের লেখক উইভাল নোয়া হারারির মতো মানুষও জায়েনবাদী সন্ত্রাস ও ফিলিস্তিনের দখলদারিত্বের প্রশ্নে সোচ্চার প্রতিবাদী। এছাড়া সংগঠনগতভাবেও ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অবস্থান রয়েছে।

অন্যদিকে ইসরাইলের দখলদারিত্বের বলি কেবল মুসলিমরা নয়, সেখানে বসবাসরত মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষজনও জায়েনবাদী সন্ত্রাসের শিকার। ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম সেটা কেবল মুসলিমরাই করছে তা নয়, এর সাথে ফিলিস্তিনের খ্রিস্টান, ড্রুজ ও ইহুদিদেরও একটা অংশ যুক্ত আছে। বর্তমানে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় যে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ইসরাইলের কমিউনিস্ট পার্টি দেশের অভ্যন্তরে জোর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদের নাম মোটামুটি সবার জানা। তার জন্ম খ্রিস্টান পরিবারে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের ফলে তার পরিবারও উচ্ছেদের শিকার হয়েছিল। সাইদ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে ও প্রাচ্য নিয়ে বিশেষ করে পশ্চিমাদের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির মোড়ক উন্মোচন করেছেন। তিনি পশ্চিমের বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার চরিত্রও উন্মোচন করে গেছেন। বরাবরই সাইদ ছিলেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীন। ২০০১ সালে তিনি জর্ডান সীমান্তে ইসরাইলের সৈন্যদের লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের সাথে পাথর নিক্ষেপ করেন। তার সেই ফটো তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে ‘প্রফেসর অব টেরর’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তাকে সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে বিষোদ্গার শুরু হয়। এরকম অসংখ্য মানুষ রয়েছে, যারা ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম নন; কিন্তু জায়েনবাদী সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। তারাও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধটা যদি ‘ধর্মযুদ্ধ’ হয় তাহলে চলমান আন্দোলনে ফিলিস্তিনের অধিবাসী খ্রিস্টান, ড্রুজ ও অন্যান্য সম্প্রদায় ও ধর্মে মানুষ তো মুসলিম নয়, তাহলে তারাও কেন মুসলিমদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করছে?

আরবের অনেক কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রফেসর যারা ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম নন; কিন্তু ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবির বিষয়ে বেশ সোচ্চার। বিখ্যাত আরবি প্রাবন্ধিক মাইজিয়াদ, যিনি একজন খ্রিস্টান, সেক্যুলার ধারার কবি ও লেখক কাহলির জেবরান প্রমুখ সাহিত্যিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিষয়ে অনেক সোচ্চার। এরকম অনেকেই রয়েছেন। তাদের অনেকের পরিবার ইসরাইলের দখলদারিত্বের ফলে উচ্ছেদের শিকার হয়ে সারাজীবন শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে। কেবল মুসলিম বলেই উচ্ছেদের শিকার এমনটা পুরো সত্য নয়। বরং ইসরাইলের দখলদারিত্বের বলি ফিলিস্তিনের সব ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়াতে তাদের দিকেই ফোকাস বেশি হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য, মাতৃভূমি রক্ষার জন্য যে যুদ্ধ সেটা কেবলই মুসলিমরা করছে এমনটা নয়। তথাপি মাতৃভূমি রক্ষা, স্বাধীনতার দাবি ও জায়েনবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বহু ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম হঠাৎ করে কেবল মুসলমানদের জেহাদের রূপ কীভাবে পেল সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যে হামাসকে কেন্দ্র করে ইসরাইল, পশ্চিমা বিশ্ব ও আমেরিকা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বলে প্রচারণা চালাচ্ছে তার জন্ম ১৯৮৭ সালে। ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর হামাস গাজা উপত্যকায় সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এর আগেও গাজা উপত্যকায় ইসরাইলবিরোধী লড়াই চালু ছিল। হামাস যেভাবে ইসলাম ও মুসলিম রক্ষার নামে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে, পূর্বে সেই ধরনের লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে লড়াইটা হয়নি।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে কঠোর সশস্ত্র শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পিএফএলপি (পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন) নামের একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন। এই সংগঠনের জন্ম ১৯৬৭ সালে। বিশ্বের মনোযোগ কাড়তে ও ইসরাইলকে কিছু শর্তে কাবু করতে ১৯৭৬ সালে তারা একটি ইসরাইলি বিমান হাইজ্যাক করেছিল। ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের বহু উচ্চারিত নাম লায়লা খালেদ এই দলেরই মহিলা গেরিলা যোদ্ধা। আবু আলী মুস্তফা নামে এই দলের একটির সশস্ত্র ব্রিগেডও রয়েছে। দলটি তার জন্মের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। তারা পিএলও’র সদস্যও বটে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে যখন অসলো চুক্তি হয় তখন তারা পিএলও থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে। কারণ তারা পিএলও কর্তৃক ইসরাইলের সাথে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক যে সমাধান সেটার সাথে সম্মত নয়। দলটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সংগঠন। এরা সোভিয়েতপন্থি বলে পরিচিত। এই দলের মূল আদর্শ হচ্ছে—সোশ্যালিজম, ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ, প্যান-আরবিজম, আরব জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, অ্যান্টি-ফ্যাসিজম, অ্যান্টি-ইম্পেরিয়ালিজল। এই দলটি মূলত পিএলও কিংবা ইয়াসিন আরাফাতের ফাতাহর মতো দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে খারিজ করে দেয় (তবে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাদের মধ্যে ঐক্য আছে)। তারা স্বাধীনতার প্রশ্নে ফাতার মধ্যপন্থি আচরণেরও বিরোধী। দলটি এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাদের সাথে যে-কোনো ধরনের আপস-রফারও বিরোধী। তারা একটাই রাষ্ট্র চায় সেটা বহুজাতিক স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, যা আদিতে ছিল। ইসরাইল বা ইহুদি রাষ্ট্র কিংবা ইসলামী রাষ্ট্রের চিন্তা স্পষ্টভাবে নাকচ করে দেয়।

অন্যদিকে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে এবং মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের সহায়তায় ১৯৫৯ সালে গঠিত হয় ফাতাহ। এরাও শুরু থেকে রাজনৈতিক গণপ্রতিরোধের পাশাপাশি নাসেরের সহায়তায় ‘আস সায়িকা’ নামে একটি সামরিক শাখাও গড়ে তোলে। দলটির রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে, ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ, সামাজিক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও দ্বিজাতিতত্ত্ব। দলটি মধ্য-বামপন্থি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনে ফাতাহই হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মূল ভূমিকা পালনকারী। এরপরই রয়েছে পিএফএলপি। ওই দল দুটিই সেক্যুলার রাজনৈতিক চিন্তাকে লালন করে। তাই তারা ইসরাইলবিরোধী যে সংগ্রাম সেটাকে ইসলামী জেহাদ বলে কখনোই চিহ্নিত করেনি। আদতে তা ছিলও না।

পিএফএলপি;র সংগ্রাম মূলত একটি সর্বজনের অংশগ্রহণমূলক সংগ্রাম। এখানে মুসলিম, খ্রিস্টান, ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্য গড়ে উঠেছে। প্রগতিশীল ইহুদিদেরও সমর্থন রয়েছে এই দলের প্রতি। দলটি ১৯৬৮ সাল থেকে তাদের দাবি আদায়ে সশস্ত্র কার্যক্রম শুরু করে। একইভাবে ফাতাহও বিশ্বের কাছে গণতন্ত্রকামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। যারা রাজনৈতিক গণপ্রতিরোধ, সামরিক প্রতিরোধের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে কাজ করছিল। ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় হামাস। দলটি মূলত প্রথমোক্ত দুটি দলের সেক্যুলার চরিত্রের পুরো বিপরীত এবং তারাই প্রথম ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ইসলাম ও মুসলিমদের জেহাদ বলে প্রচারণা শুরু করে। দলটির রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে—ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ, ইসলামবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, জায়েনবাদ বিরোধিতা। এরা মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড, ইরানের ক্ষমতাসীনদের সাথে এবং বিশ্বের অন্যান্য ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল—যাদের সাথে মতাদর্শগত মিল রয়েছে, সম্পর্ক বজায় রাখে। ১৯৯০ সালের পর থেকে গাজায় ও ফিলিস্তিনে যতই হামাসের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে লাগল ততই ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামকে ইসলামের তথা মুসলমানদের জেহাদের রূপ দেওয়া শুরু হলো। এই দলটি ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর ১৩২ আসনের মধ্যে ৭০টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে। তখন ফাতাহ হামাস সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। হামাস তার জন্ম থেকেই জেহাদের নাম করে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে ধর্মের মোড়কে পেঁচিয়ে বিশ্বের সামনে নেতিবাচক বার্তা দেয়। এই সুযোগ গ্রহণ করেছে জায়েনবাদী ইসরাইল। তারাও হামাসকে কেন্দ্র করে মিডিয়া ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মাতৃভূমি রক্ষার লড়াইকে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও জেহাদি তৎপরতা হিসেবে প্রচারণা চালায়।

ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল যে সন্ত্রাস করছে এটা তারা চরিত্রগত কারণেই ধর্মের আবরণের ঢাকতে তৎপর। কারণ পুঁজিবাদ সব সময় ধর্মকে বাহন করে তার যুদ্ধের তৎপরতার রূপ পাল্টে দেয়। আর ‘রাজনৈতিক ধর্ম’ সব সময়ই পুঁজিবাদের স্বার্থে ব্যবহূত হয়। ধর্মীয় আবেগ তাড়িত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা বর্তমানে ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের গায়ে যে লেবেল এঁটে দিচ্ছি তা আখেরে গোটা সংগ্রামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ লড়াইটা ধর্ম রক্ষার নয়, লড়াইটা মূলত মাতৃভূমি রক্ষা ও স্বাধীনতার। গত মাসে প্রায় সপ্তাহব্যাপী ইসরাইল যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে তা এই আন্দোলনকে ধর্মের মোড়কে পেঁচানোরই একটি অপকৌশল। কারণ তারা হামাস নামের সংগঠনের সন্ত্রাসী হামলার দোহাই দিয়েই পাল্টা হামলা শুরু করে। এমনকি ঈদের দিনেও তাদের হামলা অব্যাহত ছিল। এমন হামলা যে কেবল মুসলিমদের উৎসবের দিনেই করছে এমন নয়। গত বছর ক্রিসমাসের দিন যখন গাজার খ্রিস্টানদের একটি দল সীমান্তে প্রতিবাদ করেছিল তাদের ওপরেও হামলা করেছিল। ফিলিস্তিনিরা যে পতাকা হাতে সংগ্রাম করছে সেই পতাকা ইসলামের পতাকা নয়, সেটা কালেমা খোঁচিত পতাকাও নয়। তাই তারা কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে না। তাদের লড়াইটা জেহাদ বা ‘ধর্মযুদ্ধ’ও নয়।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

sadikiu099@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads