• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

মাননীয়দের কথন সমাচার

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০২১

দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্কতার সাথে কথা বলা উচিত-এটি বিজ্ঞজনদের কথা। বিশেষ করে যারা রাজনীতি করেন তাদের বেলায় এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তাদের মুখ নিঃসৃত বাক্য সাধারণ মানুষের কাছে ‘বাণী’ হিসেবেই গণ্য। তাই সচেতন মানুষেরা মনে করেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কোনো কথা বলার আগে তাদের দুবার চিন্তা করা উচিত। কারণ তারা বিশিষ্টজন, সম্মানীয় এবং তাদের কথার  ওজনও আছে। সেই ওজনদার ব্যক্তিদের কথা নিয়ে যখন কথা ওঠে, সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়, তখন তা বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। তবে, এতে আমাদের মাননীয়দের তেমন বিকার লক্ষ করা যায় না। তারা তাদের মতো করে বাক্য নিঃসরণ করে থাকেন, যা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সৃষ্টি করে।

১৯৮০ সালের মার্চ-এপ্রিলে দেশে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। বিরোধী দলগুলো সরকারের সমালোচনায় মুখর। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে সরকারের পদত্যাগও দাবি করছিল তারা। সেই সাথে তাদের ভাষায় ‘আসন্ন দুর্ভিক্ষ’ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। আবদুল মোমেন খান তখন জিয়া কেবিনেটের খাদ্যমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে দেশ বন্ধক রেখে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করব’। ব্যস, আর যায় কোথা! সংসদে এবং সংসদের বাইরে তীব্র বাক্যবাণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। মিতভাষী হিসেবে পরিচিত মোমেন খান ওই একটি কথার জন্য আজো আলোচিত হন। তবে, মোমেন খানকে দেশ বন্ধক রাখতে হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যেই সরকার খাদ্য সমস্যার সমাধান করেছিল, দ্রব্যমূল্যও নেমে এসেছিল সহনীয় পর্যায়ে। তার পুত্র ড. আবদুল মঈন খান বর্তমানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিএনপি সরকারের দুইবারের মন্ত্রী। পিতার মতোই ভদ্র এবং বাকসংযমী হিসেবে তার সুনাম আছে। তিনি অত্যন্ত মেপে কথা বলেন।

১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর। স্বৈরশাসক এরশাদের পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরশাদ কখন পদত্যাগ করছেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব ও এলজিআরডি মন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি কি জিরো পয়েন্টে গিয়ে পদত্যাগপত্র হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে আসবেন?’ না, এরশাদকে পদত্যাগপত্র জিরো পয়েন্টে গিয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে আসতে হয়নি। একদিন পরেই তিনি তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। ৬ ডিসেম্বর তিনি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।

একটি বিষয় আমাদেরকে পীড়া দেয়। আমাদের যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, মানে নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-মিনিস্টার, তারা কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় ব্রেক ফেল করেন। কেন এমনটি ঘটে তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তবে, সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, তাদের (নেতা-মন্ত্রী) মাথার বোঝাটার ওজন বেশি হয়ে গেলেই ভারসাম্যের অভাব দেখা দেয়। কেউ কথা বলার সময় স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখেন না, কেউ নিকট বা দূর ভবিষতের কথা ভাবেন না, আবার কেউ ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে করেন সরাজ্ঞান। আর সেজন্যই দেখা যায়, ক্ষমতায় থাকতে যারা দুনিয়র সব বিষ জিহ্বায় পুঞ্জীভূত করে হরতালের বিরুদ্ধে বাক্য উগীরণ করেন, বিরোধী দলে গেলেই সে হরতাল হয়ে যায় ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’। রাজনীতি জিনিসটা বড় অদ্ভূত। আজ যেটা পরিত্যাজ্য, কাল সেটাই হয়ে ওঠে গ্রহণীয়। ১৯৯৬ সাল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিএনপি সরকাররের ত্রাহি মধুসুদন অবস্থা। বিএনপি নেতাকর্মীরা স্লোগান দিল- ‘তিন পাগলের আবিষ্কার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। তিন পাগল বলতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে বোঝানো হয়েছিল। মাত্র দুই মাসের মাথায় যখন বিএনপি জাতীয় সংসদে বিল এনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করল, অমনি বিএনপির স্লোগান বদলে গেল। তখন তারা স্লোগান দিল- ‘দেশনেত্রীর উপহার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’ রাজনীতির জাদুকরী খেলা বুঝি একেই বলে! সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন আওয়ামী লীগের কাছে ‘তিত করলা’র চেয়েও তিতা। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিকৃষ্ট জিনিস সৌরমণ্ডলে আর আসেনি। অথচ একদিন তারাই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য হেন কাজ নাই যা করেননি। অথচ প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পরে ‘সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক’- এই অজুহাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন। কে জানে আবার এমন কোনো দিন আসে কিনা, যেদিন আজকের আওয়ামী লীগকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। সবই ভবিতব্যের ওপর নির্ভর করে। সেখানে কখন কী নির্ধারিত হয়, মানুষের তা জানা অসম্ভব।

আমাদের দায়িত্বশীলদের কথাবার্তায় দায়িত্ববান হওয়ার অভাব প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে মন্ত্রী মহোদয়দের মধ্যে এ প্রবণতা একটু বেশি। বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ‘আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়া গেছে’ বাক্যটি উচ্চারণ করে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। বর্তমানে এমন কেউ কেউ আছেন, যাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েই মন্ত্রী বানিয়েছেন। তাদের এই অতিকথনের ফাঁকে কখন যে বেফাঁস কথা বরিয়ে যায়, তা বোধকরি তারা মোটেও খেয়াল করেন না। যদি করতেন তাহলে একই ধরনের কথার পুনরুক্তি হতো না। ২০২০ সালে যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলো, তখন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে বলতে শুনলাম, ‘ভয় নেই। আমরা করোনার চেয়ে অনেক শক্তিশালী’। কিন্তু কদিন পরেই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল করোনার কাছে আমরা কত অসহায়! সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, করোনা যখন গোটা পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিল, সেই সংকটের দিনগুলোতে ওই মন্ত্রী মহোদয়কে নিজ বাসা ছেড়ে বের হতে দেখা যায়নি। ঘরে বসেই দাপ্তরিক এবং রাজনৈতিক কাজকর্ম সেরেছেন। করোনার চেয়ে শক্তিশালী ঘোষণা দিয়ে, তার এভাবে ঘরের ভেতর  সেঁধিয়ে যাওয়া হাস্য-কৌতুকের জন্ম দিয়েছিল। আরেকজন মাননীয় মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘করোনা তেমন কোনো মারাত্মক অসুখ নয়। এই সর্দিজ্বরের মতো’। তারপর আমরা দেখলাম করোনার মানবজীবন হরণকারী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। 

এই করোনা নিয়ে আমরা দায়িত্বশীলদের মুখ থেকে নানা ধরনের কথাবার্তা শুনেছি। বিএনপি মহাসচিব একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, করোনা নিয়ে সরকার ব্যবসা করছে। কিন্তু কী ধরনের ব্যবসা সরকার করেছে বা করছে সে ব্যাখ্যা তিনিও দেননি, আমরাও তা চাইনি। আবার সরকারের মন্ত্রীরা এই বলে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন যে, বিএনপি করোনাকে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তবে, সে ষড়যন্ত্রের স্বরূপটা কী তা আমাদের জানা হয়নি। এমন কি সরকার ঘোষিত লকডাউন ভেঙে জনসাধারণের রাস্তায় বেরিয়ে আসার বিষয়ে মন্ত্রীরা বিএনপিকে অভিযুক্ত করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বিএনপির প্ররোচনায় মানুষ লকডাউনের বিধিনিষেধ মানছে না’। আমাদের রাজনীতিকদের এ ধরনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে একটি মহাকাব্য লিখে ফেলা যায়। বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো, এ ধরনের নড়বড়ে ভিত্তির অভিযোগ যারা জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন, তারা আমাদের নমস্য ব্যক্তি এবং মাননীয়।

বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এতদিন অদৃশ্য সিন্ডিকেটের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন। এ প্রবণতা শুধু বর্তমানে নয়, অতীত থেকেই চলে আসছে। কোনো সরকারই সংঘটিত কোনো ঘটনার দায় নিতে আগ্রহী হয় না। যদি ধরেও নিই সিন্ডিকেটই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী, তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, সে সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে দুস্কৃতকারীদের দমন করার দায়িত্ব কার বা কাদের? প্রশ্নটি বহুবার করা হয়েছে। কিন্তু এর জবাব মেলেনি। অবশ্য এবার মন্ত্রী মহোদয়গণ ভিন্নকথা বলেছেন। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সম্প্রতি দুটি কালজয়ী তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। কালজয়ী বললাম এজন্য যে, তার এ তত্ত্ব ভবিষ্যতে যারা মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন, তাদের জন্য সহায়ক সূত্রের কাজ করবে। নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্য পেঁয়াজের সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির দায় তিনি এবার সিন্ডিকেটের ওপর না চাপিয়ে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দেশে প্রতি বছর ২৪ লাখ মানুষ বাড়ছে। জনসংখ্যার এই আধিক্যের কারণে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’(সূত্র : ১৬ অক্টোবরের পত্রিকা)। বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রাক্কালে গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন। আর গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে কৃষি সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত এক কৃষি সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় আমরা দ্বিগুণ চাল খাই। এটাই বড় সমস্যা। অন্যরা দিনে ২শ গ্রাম চাল খায়, আমরা খাই ৪শ গ্রাম। তার মতে এই অধিক পরিমাণ চাল তথা ভাত খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেলেই আমাদের চাল সংকট আর থাকবে না। ভাতের পরিবর্তে মন্ত্রী দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, ফলমূল প্রভৃতি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার উপদেশ খয়রাত করেছেন। পরামর্শ হিসেবে একেবারে মন্দ নয় তার কথা। কথায় আছে- ‘ঊনাভাতে দুনা বল, অতি ভাতে রসাতল’। অর্থাৎ পেট ঊনা রেখে, মানে একটু খালি রেখে ভাত খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে। আর বেশি ভাত খেলে শরীরে শর্করা বাড়ে। যার ফলে এক ধরনের অবসাদ শরীরকে গ্রাস করে। আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের তো ভাত খাওয়া একরকম নিষেধ। শুধু দুপুরে একবেলা এক কাপ ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরিবর্তে নানা ধরনের শাক-সবজি খেতে বলেন। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী মহোদয় ভাতের পরিবর্তে আমাদেরকে যেসব খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, সেসব খাবার এদেশের নব্বই ভাগ মানুষের কাছে মহার্ঘ বস্তু। আমি জানি না কৃষিমন্ত্রী মহোদয় বাজারে যান কিনা। যদি যেতেন তাহলে তার কাছে খবর থাকত বাজারে দুধের দাম কেমন, গরু-খাশির মাংসের কেজি কত। তিনি জানতেন মুরগির কেজি কত, ডিম কত করে হালি। আর ফলমূল? নিম্ন এবং মধ্যবিত্তের মানুষ এখন ফলমূলের দোকান সযত্নেই এড়িয়ে চলে। সুতরাং শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয় যে, কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের এই পরামর্শ এদেশের দরিদ্র মানুষদের সাথে এক ধরনের মশকরা ছাড়া কিছু নয়।

কবি বলেছেন, ‘সে কহে বিস্তর মিছা, যে কহে বিস্তর’। কবির বাণী আমরা যদি একটু ঘুরিয়ে বলি— ‘সে কহে বিস্তর ভুল, যে কহে বিস্তর’, তাহলে বোধকরি তা অসংগত হবে না। আমরা অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করে চলেছি যে, আমাদের মাননীয়রা কথা বলতে গিয়ে প্রায়শই নিজেদের নাম এবং অবস্থানের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। ভাত খাওয়া কমালে খাদ্য সংকট হ্রাস পাবে এটা ঠিক। তারচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের মাননীয়রা যদি বাক্য বর্ষণ কমিয়ে দিয়ে দায়িত্বের দিকে অধিকতর মনোযোগী হন, তাহলে তা দেশ ও জাতির জন্য হিতকর হবে।

 

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads