• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

নতুন বর্ষ আনুক নতুন প্রত্যয় প্রতিটি প্রাণে

  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২২

আজ ১ জানুয়ারি, ২০২২ সালের নববর্ষ। যা গেছে তা যাক, যা পেয়েছি সেটুকু জাতির ভান্ডার সমৃদ্ধ করুক। নতুন বর্ষে জাতির ভাগ্য ললাটে ফুটে উঠুক রঙিন স্বপ্ন। জাতির ললাট থেকে মুছে যাক বািবতণ্ডা আর হানাহানি।

গেল বছরটি আমাদের জাতির জন্মলগ্ন থেকে সবচেয়ে ঐতিহ্যমণ্ডিত, সবচেয়ে গৌরব, উজ্জ্বল ও সবচেয়ে অহংকারের ছিল। এই বর্ষে আমরা যুগপৎ পালন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ। অন্যদিকে গৌরবে-সৌরভে-অহংকারে পালন করেছি মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একইসাথে তলাবিহীন ঝুড়ির কলঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসে আমরা উন্নয়নশীল দেশের সোপনে পা রেখেছি। বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখেছে আমাদের অগ্রগতির ধারা। যদিও একটি সংকটময় বছর শেষ করলাম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনা মহামারির বিরুদ্ধে বছরজুড়ে লড়াই চালিয়ে গেছে বাংলাদেশও। করোনার কারণে সব খাতের অগ্রগতি কমেছে। তা সত্ত্বেও অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলে রপ্তানি, রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং বেসরকারি খাতের স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়।

একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে পরিচিত বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য সাহস ও চেতনায় জেগে উঠেছে, যা প্রথমবার ঘটেছিল যুদ্ধোত্তর বছরগুলোতে আর এবার ঘটল মহামারির সময়ে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যেটা করতে পারেনি। যে দেশে একসময় ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অভাব ছিল, সেই দেশ এখন অনেক দেশে চাল রপ্তানি করে। বেশিরভাগ দেশের নামি হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট এখন ভাত, ডাল, মাছ থেকে শুরু করে সবজিসহ বাংলাদেশি খাদ্যসামগ্রী পছন্দ করে।

একটি বিষয় লক্ষণীয়, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রেখেছে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ ভালো করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি এবং তা মহামারির কারণে সৃষ্ট নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। গত অক্টোবরে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) মাথাপিছু আয়ের তালিকায় বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এ ছাড়া দেশের রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবাহ বেড়েছে।

আশ্চর্যজনকভাবে হলেও সত্য, বর্তমানে অনেকেই বাংলাদেশকে ৩ কোটির বেশি মধ্যবিত্ত ও উচ্চশ্রেণির মানুষের বাজার বলে বিবেচনা করে। এদিকে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর দেশের এক প্রান্ত অন্য প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত করতে আরো সেতু নির্মাণ নিয়ে ভাবছে সরকার। তবে আমাদের শক্তি মূলত সামাজিক মূল্যবোধ এবং জনগণের আস্থা। এর সঙ্গে ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে যুক্ত হয়েছে সাহসী রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

এখানেই শেষ নয়, আমাদের অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ বছর হাল ধরে রেখেছেন। বিশ্ব এটাও দেখেছে, কীভাবে জাতি হেনরি কিসিঞ্জারের ঝুড়ির বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও আমাদের সমৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।

আশার কথা হলো, বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদনের বাইরেও দ্রুত একটি উচ্চ সমাজে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যা-ই হোক, গত ৫০ বছরের ধারাবাহিক প্রতিকূলতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের এই যাত্রা যথেষ্ট কঠিন ছিল।

পরিশেষে, বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর সাফল্যের চূড়ান্ত ফ্যাক্টর হলো-একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় মানসিকতার প্রতি আস্থা অর্জন করা। তিনি প্রায়ই নানা প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে এটা করেছেন।

আমরা যখন নববর্ষে পা দিতে যাচ্ছি, ঠিক তখন আরো কিছু পূরণ হয়েছে। এখন সময় হয়েছে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য জাতি গঠনে আমাদের প্রতিশ্রুতি নবায়নের। একটি জাতি হিসেবে আমরা সুবর্ণ দিগন্তে আছি, আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপন করেছি। আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। ‘মধ্যম আয়ের’ দেশের মর্যাদা অর্জন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বপ্ন ‘ভিশন-২১’ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আমরা একইসঙ্গে দ্রুতগতিতে ‘উন্নত বাংলাদেশ ৪১’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যখন আমরা সোনার বাংলা নিয়ে গর্ব করব। এ স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। আসুন, আমরা এই প্রত্যাশা করি, ২০২২ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে কলতান বয়ে আনুক।

পরিশেষে, আমাদের অগণিত পাঠক ও শুভ্যানুধায়ীর প্রতিও রইল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো ক্ষুদ্র নিবেদন- 

‘পুরাতন অপরাধ যত।

নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন

বর্ষ হয় গত!

আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন

করিলাম নত।

বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,

ক্ষমা করো আজিকার মতো

পুরাতন বরষের সাথে’

 

সম্পাদক, বাংলাদেশের খবর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads