• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

একুশকে আমরা যেন ভুলে না যাই

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। রক্তাক্ষরে লেখা একটি দিন। বাঙালি তথা বাংলাভাষীদের জন্য এ দিনটি একদিকে যেমন শোকের, অন্যদিকে তেমনি গৌরবেরও বটে। গৌরবের এ জন্যে যে, এদিনে এমন এক দ্রোহের আগুন জ্বলেছিল, যার আলোকচ্ছটায় আমরা দেখতে পেয়েছি মুক্তির পথ, স্বাধীনতার পথ। আর শোকের এ জন্যে যে, এদিন ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বরকত, সালাম, রফিক, শফিউর, জব্বারের মতো দামাল ছেলেদের জীবন-প্রদীপ নিভে গিয়েছিল স্বৈরশাসকের বন্দুকের গুলিতে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এদেশের ছাত্রসমাজ অকুতোভয়ে রাজপথে নেমেছিল শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। উদ্যত বন্দুকের নলের মুখে বুক পেতে দিতে তারা এতটুকু দ্বিধা করেনি। কবি হেলাল হাফিজ তাঁর নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতায় লিখেছেন- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। কবিতার এ পিক্তর সার্থক রূপায়ণ আমরা দেখি বায়ান্নর একুশের ইতিহাসে। সেদিন যারা রাজপথে নেমেছিল তারা সবাই ছিল যুবক। যৌবনের উন্মাদনা তাদেরকে সাহস জুগিয়েছিল সমস্ত ভয়-ভীতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে। ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর রণসজ্জার বিপরীতে শুধু ঊর্ধ্বপানে উত্তোলিত হাতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল বাঙালি ছাত্রসমাজ। সে যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েছিল। অমর্যাদার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে বাংলা ভাষা আসীন হয়েছে মর্যাদার সিংহাসনে। সেদিন পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। বিশ্ব ইতিহাসে অনেক বিদ্রোহ-বিপ্লব-যুদ্ধের নজির আছে। কিন্তু নিজেদের মাতৃভাষার অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জীবন উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া বিরল। সেদিক দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই একটি অবিস্মরণীয় দিন।

আমাদের গর্বের সে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য এক আত্মশ্লাঘার ব্যাপার। একসময় যে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা পালন করেছি শহীদ দিবস হিসেবে, আজ তা একই সঙ্গে বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষ মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। তবে একটি বিষয় অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ডামাডোলে মহান শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য অনেকটাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি যে কেবলই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নয়, মহান শহীদ দিবসও, সে কথা আমরা যেন বিস্মৃত হতে চলেছি। এক স্কুলছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলো তো একুশে ফেব্রুয়ারি কেন স্মরণীয় দিন? সে উত্তর দিল, সেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জিজ্ঞেস করলাম, কেন ওই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো? সে চটপট উত্তর দিল, জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে, তা-ই। হতভম্ব আমি ওর কথা শুনে। বললাম, তুমি কি জানো, এই একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের দেশে কী ঘটেছিল? মাথা নেড়ে সে জানালো ওটা ওর জানা নেই। আমি তাকে সংক্ষেপে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি স্মরণীয় হয়ে ওঠার ইতিহাস শোনালাম। ওকে বললাম, এই যে আমরা আজ বাংলা ভাষায় কথা বলি, লিখি, পড়ি, এটার অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন। চোখ বড় বড় করে সে তাকিয়েছিল আমার দিকে। ওকে বললাম, আরো একটু বড় হও সব জানতে পারবে। মনে রাখবে, যে ব্যক্তি তার জাতির ইতিহাস জানে না, সে যত বড় ডিগ্রিধারীই হোক না কেন, সে সুশিক্ষিত নয়। শিক্ষার অন্যতম মাপকাঠি জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানা এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির প্রতি নিজের কর্তব্য নির্ধারণ করা।

এটা আমাদের জাতীয় জীবনের এক বড় ট্র্যাজিডি যে, আমাদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে চান, কিন্তু দেশ ও জাতির ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করার প্রয়োজন বোধ করেন না। তাদের এই অবজ্ঞার ফলে দেশে জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অসচেতন এক অদ্ভূত প্রজাতি এখন বেড়ে উঠছে। জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এরা প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছে। মানুষ হিসেবে, দেশের নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য পালনীয় দায়িত্বও যে তাদের রয়েছে, এটা তাদের বোধের অগম্যই থেকে যাচ্ছে। এজন্যই জ্ঞানীজনেরা সবসময় নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা একাডেমিতে একুশের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বিশিষ্ট সাহিত্যিক বশীর-আল-হেলাল বলেছিলেন, ‘এখন আমাদের দেশের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলেন না। ফলে এমন দিন হয়তো আসতে পারে, পরবর্তী প্রজন্ম জানবে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা নামের দুষ্কৃতকারীরা দেশের স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিল।’ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে শোনা তার সে কথার হুবহু উদ্ধৃত করা এ মুহূর্তে আমার পক্ষে সম্ভব হলো না। তবে তিনি সেদিন যা বলেছিলেন, তার সারমর্ম ছিল এটাই। বশীর-আল-হেলালের আশঙ্কা পুরোপুরি বাস্তব রূপ নেয়নি এটা সত্যি। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি যে চরম আকার ধারণ করেছে তা কি অস্বীকার করা যাবে? আমাদের জাতীয় ইতিহাস এখন রাজনীতির দাবার ছকের  ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে। যে যার মতো ইতিহাস নির্মাণের চেষ্টা করছে। সত্যি-মিথ্যার সংমিশ্রণে তৈরি সে ইতিহাস পড়ে আমাদের আগামী প্রজন্মের হূদয়ে দেশপ্রেম কতটা জাগবে সে হিসাব কেউ করছে না। রাজনৈতিক দলগুলো ইতিহাস দখল করতে গিয়ে কাউকে নিয়ে যাচ্ছে অতিমানবের পর্যায়ে, আবার কাউকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করছে ভাগাড়ে। তাদের এই অপরিণামদর্শী তৎপরতা যে আমাদের আগামী প্রজন্মের মনে ইতিহাস সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির করছে এটা ভেবে দেখার ফুরসত তাদের নেই।

প্রচলিত একটি কথা হলো আমরা বিস্মৃতপ্রবণ একটি জাতি। অনেকটা মাছের মতো। মাছের নাকি স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ। যে জন্য বড়শির টোপ গিলে আটকা পড়তে পড়তে সে ছাড়া পেয়ে পরক্ষণে ওই টোপই সে আবার গিলে ফেলে। একটু আগের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তার স্মরণে থাকে না। আমরা অতটা না হলেও বিস্মৃতিরোগে বেশ ভালোভাবেই আক্রান্ত। তার সাথে রয়েছে মনগড়া ইতিহাস তৈরির এক নিচু মানসিকতা। ফলে  আমরা ভুলে যেতে বসেছি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবহমান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের কথা। তাই হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হয়েও আজ আমরা ভিনদেশি বিজাতীয় সংস্কৃতির কাঙালিপনায় আক্রান্ত। আমরা আজ বিভ্রান্তির নিগড়ে বন্দি। এই বিভ্রান্তি বিস্মরণের প্রকোপ বৃদ্ধি করছে। এজন্যও দায়ী আমাদের রাজনীতিকরা। তারা ইতিহাসকে তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন, সাধারণের সামনে তুলে ধরেন। ফলে ইতিহাসের সত্য সম্পর্কে আমরা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ি সঙ্গত কারণেই। সত্যাশ্রয়ী রাজনীতির অভাবে আজ আমরা তাই ক্রমশ দুর্বল একটি জাতিতে পরিণত হচ্ছি। রাজনৈতিক কারণে ইতিহাসের বিকৃতি বা অপব্যাখ্যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারপরও এই নেতিবাচক প্রক্রিয়া থেকে কারো সরে আসার লক্ষণ নেই।

রাজনীতির কথা বাদ দিয়ে আসল কথায় ফিরে যাই। আগে যখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা শুধুই মহান শহীদ দিবস হিসেবে পালন করতাম, তখন তার ব্যঞ্জনা ছিল ভিন্ন রকম। একুশ এলেই আমাদের ধমনীতে জ্বলে উঠত দ্রোহের আগুন। আমাদের জাতীয় অর্জনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে একুশের অসামান্য অবদান। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে একুশে আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। শুধু তা-ই নয়, একুশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় দেশপ্রেমের কথা, জাতির প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। আশির দশকের গোড়ার দিয়ে আমরা যখন স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার সংগ্রামে অবতীর্ণ হই, তখন ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ স্লোগানটি ব্যাপক জনসম্পৃক্তি লাভ করেছিল। স্লোগানটির মর্মার্থ বলে বোঝানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না। কেননা অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার অনমনীয় প্রত্যয় থেকেই একুশের জন্ম। আমরা যদি আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে এই মাথা নত না করার বিষয়টি সূর্যালোকের মতোই প্রতিভাত হয়ে উঠবে। বায়ান্ন থেকে একাত্তর, কোথাও নেই মাথা নত করার গ্লানি। আমরা তো সেই জাতি, যে জাতিকে কেউ পরাভূত করে রাখতে পারেনি। যুগে যুগে এ জাতি বিদ্রোহ করেছে দুঃশাসক আর জালিমদের বিরুদ্ধে। আর এসব ক্ষেত্রে সবসময় প্রেরণা জুগিয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি।

একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মহান শহীদ দিবস আমাদের কাছে এক আলোকবর্তিকা, যা আমাদের পথ দেখিয়েছে সামনে চলার, দিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক দিশা। কিন্তু আজ আমরা যেন অনেকটাই দিগ্ভ্রান্ত। আমরা যেন কোনো এক অজানা কারণে সঠিক লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারছি না। আপাতদৃষ্টিতে তা অজানা মনে হলেও আমরা সবাই তা জানি না তা নয়। এর কারণ একুশের মূল চেতনা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া। এ দূরে সরে যাওয়া একদিনে হয়নি। আমরা আমাদের স্বকীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে ভিনদেশি বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে তথাকথিত আধুনিকতার গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। এর ফলে সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যবান এক জাতি থেকে আমরা পরিণত হচ্ছি হতদরিদ্রে। কেউ কেউ বলতে পারেন, তাই বলে কি আমরা আধুনিক হওয়ার চেষ্টা করব না? বিশ্বের অগ্রগতির সাথে তাল না মেলালে যে আমরা পিছিয়ে পড়ব! দ্বিমত করার অবকাশ নেই, বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলানোর বিষয়ে। তবে নিজস্ব স্বকীয়তাকে বিসর্জন বা অবজ্ঞা করে নয়। আমরা বাংলাদেশের বাঙালি, আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। কারণ ওটাই যে আমাদের শেকড়। আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডারে রয়েছে জারি-শারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া। আছে রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্য আর সংগীতের সমৃদ্ধ দৌলত। রয়েছে হাসন রাজা, লালন সাঁই, রমেশ শীলদের মতো আধ্যাত্মিক সাধকদের রেখে যাওয়া সংগীতের মজুত। আমাদের রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণবিরোধী সংগ্রামের শত শত বছরের উত্তরাধিকার। তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ, হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর দুদু মিয়ার মতো সমাজ সংস্কারকদের উত্তরাধিকার আমরা। আমাদের মতো সমৃদ্ধ উত্তরাধিকারের জাতি এ পৃথিবীতে আর ক’টা আছে?

কিন্তু আজ আমরা যেন সব ভুলতে বসেছি। আমরা নিজেরা ভুলে যাচ্ছি, সন্তানদেরও জানাচ্ছি না সেসব কথা। তারা অজ্ঞাত থেকে যাচ্ছে সেসব ইতিহাস, যার আগামী উত্তরাধিকার হিসেবে তারা বেড়ে উঠছে। এই অবজ্ঞা, এই স্বেচ্ছাবিস্মৃতি সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমাদেরকে একটি অতিশয় দরিদ্র জাতিতে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত করছে। এই সর্বনাশা অধোগতি রুখতে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে শেকড়ের কাছে। আর সে শেকড় প্রোথিত আছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে; যা আমাদের দেখাতে পারে সঠিক পথের দিশা।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads