• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হ্যাঁ, আমরাও পারি

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

সংবাদ ভাষ্য

হ্যাঁ, আমরাও পারি

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০২২

শাবাশ বাংলাদেশ, অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়। সত্যিকার অর্থেই গত শনিবার রাতে যে অসম্ভব ধৈর্য ও নান্দনিক কারুকার্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুধু পরাজিতই করেনি, আইসিসির তিন ম্যাচ একদিনের খেলায় (ওডিআই) হোয়াইট ওয়াশও করেছে। বিশ্বের ক্রিকেট-প্রেমিকদের কাছে তা ছিল এক বিস্ময়। সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঘা বাঘা প্লেয়ারদের নিজস্ব মাটিতে হাজার দর্শকের সামনে নাস্তানাবুদ করেছে তা ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড হয়ে থাকবে। আমাদের ক্রিকেট লেখেইয়েরা হোয়াইট ওয়াশের নাম দিয়েছে ‘বাংলা ওয়াশ’। গত তিন খেলার ওডিআইতে আসলে টাইগাররা উপযুক্তভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলা ওয়াশের শিকারে পরিণত করেছে। এই অসামান্য বিজয়ের ফলে আন্তর্জাতিক রেটিংয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট বেড়ে যাবে।

এরপরই বাংলাদেশ ৩-ম্যাচ ওডিআই খেলবে জিম্বাবুইয়ের সাথে। এ পর্যন্ত একদিনের ৭৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে ৫০টি আর জিম্বাবুয়ে জিতেছে ২৮টি। রেকর্ডের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ এবারই চমক দেখাবে এবং জ্বলে উঠবে হারারের মাটিতে। এর পরপরই বাংলাদেশ ৩-ম্যাচ হাই প্রোফাইল ওডিআই খেলবে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সাথে। বাংলাদেশ কোনো উড়িয়ে দেওয়া দেশ নয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৯৭টি ম্যাচ খেলে ১৪৩টি ম্যাচে জিতেছে। তবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান ও ভূতপূর্ব ওডিআই চ্যাম্পিয়নসহ ওডিআই খেলা দেশগুলোর মধ্যে এমন কোনো একটি দেশ নেই, যাকে বাংলাদেশের কাছে হারতে হয়নি। এমনকি ২-৩ বারের চ্যাম্পিয়ন টিমও বাংলাদেশের কাছে ৯ বার পর্যন্ত হেরেছে।

ক্রিকেট একটি এলিট গেম। আসলেই সম্ভ্রান্ত খেলা। কোনো কোনো বোধ্যা ক্রিকেটকে বলে থাকেন অনিশ্চিতের গেম। অম্ল-মধুর অনিশ্চয়তার খেলা। শেষ বলটা না করা পর্যন্ত কোনো কোনো খেলার ক্ষেত্রে বোঝার উপায় নেই কে জিতবে। ওডিআইতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও টেস্ট ক্রিকেট ও টি-২০ ফরমেটে বাংলাদেশের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তবে ঘোর আঁধার কেটে যেমন অত্যুজ্জ্বল সূর্যালোক পৃথিবীকে উজ্জ্বল করে তোলে মুহূর্তের মধ্যেই, আশা করবো আমরাও একদিন ওই দুই ফরমেটেও জ্বলে উঠবো।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করার মতো। বেশ কিছুদিন আগে একটি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করে দেশে ফিরে তার সরকারি বাসভবনে একটি প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করেন। কতশত প্রশ্ন রেখে সাংবাদিকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জেঁকে ধরেন ক্রিকেট নিয়ে। কেন ক্রিকেটের এ দুরবস্থা, ক্রিকেট একেবারে গোল্লায় গেল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুবই ক্রিকেটপ্রিয় একথা সকলেরই জানা। বিদেশে আমাদের টাইগাররা যখন গুরুত্বপূর্ণ খেলায় মাঠে নামেন, শেখ হাসিনা তখন খাওয়া-দাওয়া-ঘুম হারাম করে তসবি হাতে দুরুদ শরিফ পড়তে থাকেন বাংলাদেশ যাতে সাফল্য অর্জন করতে পারে। সেই ক্রিকেট-প্রেমিক প্রধানমন্ত্রী অতি স্পোর্টসম্যানসুলভ অ্যাটিচ্যুড নিয়ে হেসে হেসে বলেছিলেন, আরে ক্রিকেট একটি অনিশ্চয়তা ও ভাগ্যের খেলা। একজনে বল করল, আরেকজনে জোরে পেটালো, ব্যাটে-বলে লাগলে ছক্কা, আর না লাগলে অক্কা। তবে ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

এখানে আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, সব বিষয়ে আমাদের অধৈর্য হলে চলবে না। চঞ্চল হলে চলবে না। যখন তারা ভালো খেলে দেশে আসে তখন সে কি উল্লাস, যে কোনো জাতীয় উৎসবকে ছাড়িয়ে যায়। আর যদি কপালের দোষ বা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একটু খারাপ খেলে, তখন সকলেই একই সুরে তাদের মুণ্ডপাত করতে থাকে-বেটারা বিদেশে গেছে খেলতে, না ফাটাফাটি মার্কেটিং করতে-আরে ওদের  মাথা খেয়েছে প্রধানমন্ত্রী। একটু ভালো খেলল, ব্যস গাড়ি, বাড়ি, প্লট, কোটি টাকা উপহার-ওদের গায়ে চর্বি জমে যায়। খেলবে কী!

আসলে খেলাধুলাসহ সব ব্যাপারে আমাদের সুস্থির হতে হবে। নুড়ি বা শবদেহের মতো নয়। তারা স্থির বটে, একই সাথে তারা স্থবিরও বটে। আমাদেরকে সুস্থির হতে হবে অস্তাচলগামী সূর্যের মতো, নিষ্কম্প প্রদীপ শিখার মতো। তারপরই আমাদের জাতীয় জীবনে আসবে সাফল্যের বরমাল্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads