• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অনলাইন ক্লাসে সফল হতে করণীয়

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

অনলাইন ক্লাসে সফল হতে করণীয়

  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২১

কোভিড-১৯ এর বিস্তারে ক্লাসরুম, ক্যাম্পাস থেকে দূরে আছে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস বা বেঞ্চে বসে ক্লাস নেওয়া বন্ধ থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন শিক্ষাকার্য পরিচালনা করছে। অনলাইন ক্লাস হলো ইন্টারনেট সংযোগে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রক্রিয়া। অনলাইন ক্লাস অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন, বিশেষ করে তরুণদের জন্য। বন্ধুদের সাথে ফেসবুকের আড্ডায় যুক্ত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় বসতে না চাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাস করতে অনিচ্ছুক। তবে বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন ক্লাসই মহামারীর মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। তবে আপনি কী জানেন, কীভাবে অনলাইন ক্লাসে সফল হতে হয়? ডিজিটাল ক্লাসে সফল হওয়ার প্রয়োজনীয় করণীয় বা কৌশল তুলে ধরছেন অরণ্য সৌরভ

লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

জীবনে যতই ঝড়ঝাপটা আসুক তাই বলে থেমে থাকতে নেই। সব সময় কোনো না কোনো কাজে থাকুন। করোনাভাইরাসের মতো জীবনে কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে, যা পড়াশোনা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে লক্ষ্যচ্যুত হওয়া যাবে না। যে-কোনো পরিস্থিতিতে আপনার লক্ষ্য মাথায় রাখতে হবে। তবেই সফলতা ধরা দেবে। যখন লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, তখন সফল হওয়ার জন্য দৌড়ান। মনে রাখুন, কেন আপনি পড়াশোনা করছেন? কেন ডিগ্রি অর্জনের পেছনে দৌড়াচ্ছেন? অবশ্যই লক্ষ্য বা কারণ রয়েছে। হয়তো পরিবারের জন্য করছেন, নয়তো ভালো একটি পেশার জন্য করছেন। অনলাইনে ক্লাসের সময় সেই লক্ষ্য মাথায় রাখুন। দেখবেন ক্লাসের সফলতা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অনলাইন ক্লাস আপনাকে শৃঙ্খলাবোধ, সময়ানুবর্তিতা এবং ধৈর্যশীল হতে শেখায়।

চাকরির মতো ভাবুন

এই মুহূর্তে সব সময় মনে রাখবেন, পড়াশোনাই আপনার কাজ। সচেতনভাবে পড়াশোনা শুরু করুন, নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করুন, অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করুন। লক্ষ্যের সীমানা নির্ধারণ করুন। সাফল্যের মানসিকতা রাখুন। আর দৃঢ়তার সাথে লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিয়মিত কাজ করুন। অনলাইন এবং অফলাইনে সারাদিনের শিডিউল তৈরি করুন। অনলাইন ক্লাসকে চাকরি বা অফিসের মতো ভাবতে পারেন। প্রতিদিন একই সময় শুরু এবং শেষ করতে হবে। আর অফিসে যেমন নির্দিষ্ট কাজ করতে হয় তেমনি ক্লাসেও আপনাকে তেমনটাই করে নিতে হবে। প্রতিদিন এভাবে করতে শুরু করলে দেখবেন লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে গেছেন। তখন যে-কোনো কাজে উৎসাহ পাবেন।

স্টাডি প্ল্যান তৈরি করুন

একটি স্টাডি প্ল্যান তৈরি করুন। প্রতিটি কাজেরই একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। যে কাজের পরিকল্পনা যত ভালো সে কাজ তত শীঘ্রই সফলতার দেখা পায়। নিয়মিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে যে-কোনো পরিস্থিতিতে সেই প্ল্যানই আপনাকে ট্র্যাকে রাখবে। একটি সুন্দর পরিকল্পনা করুন এবং কিছু সময় ছুটি রাখুন। ক্লাস এবং পড়াশোনার জন্য প্রতিদিন সর্বাধিক সময় নির্ধারণ রাখুন। প্রয়োজনে দিনক্ষণসহ সময় দিয়ে সাপ্তাহিক একটি ডাটাবেজ বা রুটিন লিখুন।

সময়ের সঙ্গে খামখেয়ালি নয়

নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে সব কাজে সেটা বজায় রাখুন। শিক্ষার্থীরা খামখেয়ালি করে অনেক কিছু হারায়। খেলতে বা আড্ডা দিতে দিতে ক্লাসের সময় পাড় করে দেওয়া শিক্ষার্থীদের বাজে অভ্যাস। অনলাইন ক্লাসে এমনটা করা যাবে না। নির্ধারিত সময়েই সব কাজ করতে হবে। খামখেয়ালির জন্য কখনো কখনো অনেক পড়া, অ্যাসাইনমেন্ট জমা হয়ে যায়, তখন মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু যখন সময়ের কাজ সময়ে করবেন দেখা যাবে সব কাজেই গতি পাচ্ছেন। ক্লাস এবং পড়াশোনার জন্য আপনার কত সময় লাগবে তা নির্ধারিত করে পরিবার ও বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সে সময় যেন তারা ডির্স্টাব না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যাদের সাথে জীবন চালাচ্ছেন এ বিষয়ে তাদের সমর্থন জরুরি। তাদের এও বলুন, যদি তারা সমর্থন না করে তবে আপনি সফল হতে পারবেন না।

শান্ত জায়গা খুঁজুন

এমন একটি জায়গা চিহ্নিত করুন যেখানে ঝুটঝামেলা নেই। এমন জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় বাড়ির কেউ সেখানে থাকবে না। আপনি সেখানে পড়াশোনা এবং বিশ্রাম নেবেন। শান্ত জায়গা না থাকলে পড়াশোনা বা বিশ্রাম ঠিকমতো করা যায় না। যার জন্য লক্ষ্য পৌঁছান অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। প্রয়োজনে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে শান্ত স্থান নিয়ে আলোচনা করুন। কারণ শান্ত জায়গা আপনার একাডেমিক সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিভ্রান্তি দূর করুন

ক্লাসের সময় নিজেকে শুধু ডিভাইজের স্ক্রিনে রাখুন। আশেপাশের আর কিছুই যেন আপনার মনোযোগ আকর্ষণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। অনেক সময় বাইরের গোলমাল, চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজে ক্লাস থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিতে পারে। গান, টিভি বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, মুক্ত পরিবেশ চিন্তাকে মন্থর করে। কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ফিরিয়ে আনে। আর পড়াশোনায় মনোযোগ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কমিয়ে দিন সোশ্যাল মিডিয়া

ফেসবুক দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়া অবশ্যই মজার। কিন্তু সর্বপ্রথম ডিগ্রি অর্জন জরুরি। ফেসবুকের সবুজ বাতি পড়াশোনার পথে বড়োসড়ো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পড়াশোনায় মনোযোগী থাকার প্রধান উপায় হচ্ছে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট লগ অফ/লগ আউট করে রাখা। বাস্তবজগতের কাজেই সময় পাওয়া কষ্টকর। তাই ভার্চুয়াল জগতকে যুক্ত করার দরকার নেই। আপনার বন্ধুর ছবি অথবা অভিনেতাদের ছবি, সংবাদে পড়াশোনায় মনোযোগ হারানো খুবই সহজ।

নিজের জন্য নিজেই নিয়োজিত হোন

যা পড়ছেন তা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। এটা আপনার জ্ঞান বা ধারণ ক্ষমতা পরীক্ষা করতে সাহায্য করবে। এছাড়া ক্লাস বা বোর্ড পরীক্ষার সময় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। ক্লাস করার সময় মনোযোগী হোন। প্রয়োজনে ক্লাসটি রেকর্ড রাখুন। আবার ভিডিওটি দেখুন, অধ্যায়টি বা টপিকটি আবার পড়ুন। যতক্ষণ না আপনি বুঝতে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত চর্চা অব্যাহত রাখুন। বুকের ভেতর সাহস ও আশা রাখুন যে অবশ্যই পারবেন। পড়ার সময় টিভি, রেডিও এবং ফোন বন্ধ করুন। লক্ষ্যে মনোযোগ দিন।

নোট লিখুন

সরাসরি শ্রেণিকক্ষের মতোই ভিডিও ক্লাসের সময় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো লিখুন। সব সময় নোট করার অভ্যাস তৈরি করুন। এটি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করবে। আপনি যখন এক ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ধরে স্ক্রিনে থাকবেন তখন সবকিছু মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ভিডিও রেকর্ডকৃত ক্লাসকেও বিভিন্ন টপিকের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিতে পারেন। ফাইলগুলো নির্দিষ্ট তারিখ ও নামে সেইভ করে রাখতে পারেন।

বিরতি নিন

একনাগাড়ে ঘণ্টাখানেক স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় মন কিছুটা নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। তাই ঘনঘন, ছোট ছোট বিরতি নিন। স্ক্রিন থেকে কয়েক মিনিট দূরে সরে থাকলে মস্তিষ্ক আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। কিছু সময় বিরতি এবং বাইরে হাঁটা সত্যিই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহস জোগাবে। তাই নিয়মিত বিরতি নিন, হাঁটুন।

সুস্থ থাকুন

সুস্থ শরীর সুস্থ মন। মস্তিষ্ক যদি সুস্থ থাকে তবেই মস্তিষ্ক তার পূর্ণাঙ্গ কাজ করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুষম খাবার খান। নিয়মিত জগিং করতে বেরুতে পারেন। কারণ চারপাশ থেকে বিভিন্ন আইডিয়া খুঁজে পেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর খাবার, পরিমিত ঘুম, ব্যায়াম দেহকে নতুন উদ্দামে কাজ করতে সহযোগিতা করে। খেয়াল রাখুন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কি না। যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে আপনি হাসপাতালে থাকবেন। মন-মেজাজ ঠিক থাকবে না। তখন অনলাইনে ক্লাস করতে পারবেন না, লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। তাই সব সময় সুস্থ থাকুন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads