• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
প্রস্তুত নয় প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা

প্রতীকী ছবি

শিক্ষা

গুগল মিটে ক্লাস্টার ক্লাস

প্রস্তুত নয় প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২১

দীর্ঘমেয়াদি করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গুগল মিট’ প্ল্যাটফরমে অনলাইন ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিটি ক্লাস্টারে আইসিটি পুল গঠন করে নির্বাচিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ক্লাসে ৩০ জন করে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এ ক্লাস নেওয়া হবে। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম এগিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদপ্তর। শিগগির এই প্রক্রিয়ায় ক্লাস শুরু করতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট।

কিন্তু সারা দেশে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে ‘গুগল মিট’ প্ল্যাটফরমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ এসব শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকেরই বসবাস শহরের বাইরে অর্থাৎ গ্রামে, যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ট্যাব ও ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই উদ্যোগ কিছু শিক্ষার্থীর কাজে লাগলেও বঞ্চিত হবে অধিকাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চল অর্থাৎ হাওন, পাহাড়ি এলাকাসহ গ্রামের শিক্ষার্থীদের কীভাবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা সম্ভব সেটা একটি বড় প্রশ্ন থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ তাদের নেই কোনো কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোন। নেই কোনো ইন্টানেট সংযোগ। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবিব জানান, আমার দুই সন্তান প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। লেখাপড়ায় তাদের মন নেই। স্কুলের চাপ না থাকায় সারাক্ষণ বাইরের দিকেই ঝোঁক। তবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এ সম্পর্কে কিছূই জানেন না তিনি। তিনি বলেন, তাদের একটি কম দামের বাটন মোবাইল আছে, তাতে আবার প্রায়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকে। ইন্টারনেটও এই মোবাইলে সাপোর্ট নেই না। সে ক্ষেত্রে ‘গুগল মিট’ প্ল্যাটফরমে অনলাইন ক্লাস চালু হলে তার সন্তানদের কোনো কাজে আসবে না বলেই মনে করেন তিনি। কেননা দামি মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট কিছুই তাদের নেই। এ ছাড়া নতুন এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণাও নেই তাদের। এ সমস্যা শুধু আহসান হাবিবের নয়, প্রায় ১০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এ সমস্যা আছে। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল গুগল মিট ক্লাসের গাইডলাইনসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা পাঠানো হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে আইসিটি পুল করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার নেতৃত্ব দেবেন। ক্লাস্টারের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইতোমধ্যে যারা গুগল মিটে কাজ করেছেন তারা আইসিটি পুলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ক্লাস্টারের কোনো শিক্ষকের গুগল মিট ওরিয়েন্টেশন না হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষককে ওরিয়েন্টেশন দিতে হবে। আইসিটি পুলের সদস্য ও অরিয়েন্টেশন নেওয়া শিক্ষকরা অভিভাবকদের মধ্যে যাদের স্মার্টফোন বা ডিভাইস আছে তাদের গুগল মিট ব্যবহার শেখাবেন।

সূত্র আরো জানায়, কোনো একটি বিদ্যালয়ে কেন্দ্র স্থাপন করে গুগল মিটে ক্লাস নেওয়া হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এভাবে ক্লাস করানো হবে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু হবে। প্রতিটি স্কুলকে ওয়াইফাই-এর আওতায়ও আনা হবে। শিক্ষার্থী বেশি হলে কেন্দ্রও বাড়ানো হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স), উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি অনলাইন ক্লাস বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। বিভাগীয় উপপরিচালক সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন।

গুগল মিট প্ল্যাটফরমে ক্লাস চালুর বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, সারা দেশে প্রতি ক্লাস্টারে গুগল মিটে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে তারা ক্লাস নেবেন। যদি প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা প্রশিক্ষণ দেব। প্রতি বিদ্যালয় থেকে একজন করে শিক্ষার্থী অংশ নিলে একটি ক্লাস হিসেবে পরিচালনা করা যাবে। যদি কোনো ক্লাসে ৩০ জনের বেশি হয় সে ক্ষেত্রে আমরা আলদা করে আরেকটি অনলাইন ক্লাস চালু করব। তিনি বলেন, অভিভাবকের যদি ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা স্মার্টফোন থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা তা ব্যবহার করে গুগল মিটের ক্লাসে অংশ নিতে পারবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণমূলক এই ক্লাস নেওয়া হবে প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি ক্লাস্টারে। গ্রাম অঞ্চলের ক্লাস্টারভিত্তিক একটি কেন্দ্র করে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হলেও শহরের প্রতিটি বিদ্যালয়ে গুগল মিটে ক্লাস হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের যেসব বিদ্যালয়ে ইন্টারন্টে সুবিধা আছে সেখানে ডাটা সরবরাহের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন ফোরজি ডাটা সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এটি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে ডাটা সংগ্রহ করবেন। পিটিআই ইনস্ট্রাক্টররা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবেন। পাঠ্যক্রমের কনটেন্ট কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া একই পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করে সারা দেশে অনলাইন ক্লাস হবে। একটি ক্লাসে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী হলে একাধিক ক্লাসের আয়োজন করতে হবে। অনলাইন ক্লাসের সময়সূচি সংসদ টিভি, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে পরিচালিত ‘ঘরে বসে শিখি’ পাঠ সমপ্রচারের সময় বাদ দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পাঠের অগ্রগতির খোঁজ নেবেন। এ ছাড়াও তিনি সংশ্লিষ্ট অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকের কাছ থেকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে এখন বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হয়। তবে গুগল মিট-এ সারা দেশে সব ক্লাস্টারে একই ক্লাস নেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাস করাবেন। এ নিয়ে অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গুগল মিট-এ সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার টার্গেট রয়েছে। গ্রামে গুগল মিটে ১০ লাখ এবং শহরে ২০ লাখ মিলেয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইল ফোনেও ক্লাস করার সুযোগ পাবে। যেসব এলাকায় অনলাইন নেই, সেখানে টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকরা সরাসরি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ সরবরাহ করবেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হয়। এ ছাড়া ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা করা হয়েছে এবং হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে ১৭ মে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির পরবর্তী ঢেউ জোরালোভাবে আক্রমণ করায় কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা সম্ভব হবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউই। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গুগল মিট’ প্ল্যাটফরমে অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads