• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার চায় সরকার

গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান

প্রতীকী ছবি

উদ্যোক্তা

গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার চায় সরকার

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৩ এপ্রিল ২০১৯

তৃণমূল অর্থনীতির গতিসঞ্চার করতে চায় সরকার। এ জন্য উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সরকার মনে করছে, তৃণমূলের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করা গেলে দেশের সার্বিক অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। বাড়বে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। নতুন কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে। তা ছাড়া আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে বলেও মনে করছে সরকার।

বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো আমার গ্রাম-আমার শহর, যেখানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই অঙ্গীকার পূরণে সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছে, তারা ভিশন-২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। নতুন সরকারের শেষ মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। বাজেটের আকার দাঁড়াবে ১০ লাখ কোটি টাকা, যা সর্বশেষ বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার করবে এই সরকার। আর জিডিপির ৩৭ শতাংশ হবে বিনিয়োগ হার। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারকে গ্রামের দিকে যেতেই হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাইরে নতুন সরকার গঠন করে কয়েকটি অনুষ্ঠানে কথাও বলেছেন।

জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের অর্থপ্রবাহ বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য। এ ছাড়া ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নত পরিবেশ তৈরি, সুপেয় পানি এবং উন্নতমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। সুস্থ বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য জেলা-উপজেলায় কলকারখানা গড়ে তোলা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র পৌঁছে যাবে। গ্রাম উন্নত হলে শহরে জনসংখ্যার চাপ কমবে। কর্মসংস্থান বাড়ানো গেলে ধনী-দরিদ্র্য বৈষম্য কমে আসবে।

জানা গেছে, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত-এসএমই। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে এসএমই শিল্পকে গণ্য করা হয়ে থাকে। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিতকরণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই খাত ভূমিকা রাখে। তাই গ্রামে এসএমই খাতকে প্রসার করতে হবে। এটি করা গেলে গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হবে। নারীর ক্ষমতায়ন হবে।

এর আওতায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে, যাতে করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়বে। মৎস্য ও গবাদিপশুর উৎপাদন বাড়ানো হবে।

সূত্র জানিয়েছে, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করছে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকগুলো কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থায়ন করেছে, তার বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে কোন খাতে অর্থের চাহিদা রয়েছে এবং কোথায় সম্ভাবনা রয়েছে তার তথ্যও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো যাতে গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে আসে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রামের মানুষকে আগের থেকে অনেক সামনে নিয়ে এসেছে। তারা এখন ব্যাংকে আমানতের জোগান দিচ্ছে। বর্তমানে গ্রামে শাখার সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক, শহরে একটি শাখা খুললে গ্রামে একটি শাখা চালু করতে হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, প্রবাসীরা প্রতি মাসে বিদেশ থেকে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু এই অর্থ তারা প্রতিদিনের খরচে ব্যবহার করেন। কিংবা ব্যাংকে জমা থাকছে। কিন্তু পুঁজি হিসেবে এই অর্থ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়ে আসা গেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে।  

তবে এসএমই খাতে এই অর্থের জোগান আনতে শুধু যাতে বাণিজ্যনির্ভর বিনিয়োগ না হয়, সেটি খেয়াল রাখা হবে। যতটা সম্ভব উৎপাদনশীল খাতে তাদের সম্পৃক্ত করা হবে। পুঁজির জোগান দিতে সরকার একটি বিশেষ নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যার আওতায় গ্রামের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে মূলধন জোগান দেওয়া হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য ব্যাংক, বীমা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রামাঞ্চলে অর্থায়ন ও কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে একটি ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ও পল্লির কোন খাতে কত পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং কী কী সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তার তথ্য সংগ্রহ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন আকারে কৃষিঋণ এবং ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বিতরণ করা ক্ষুদ্রঋণ, বর্গাচাষিদের জন্য দেওয়া ঋণ ও ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ শাখা কতটা বাড়ানো হয়েছে তার তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ, নারী গ্রহীতাদের পল্লি ও কৃষিঋণ, রেয়াতি সুদ হারের কৃষিঋণ, দারিদ্র্য বিমোচন খাতে ঋণ ও মৎস্য চাষে ঋণসহ বিভিন্ন খাতে বিতরণ করা ঋণের চিত্রও ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একটি ব্যাংকের ব্যবসায়িক সম্মেলনে যোগ দিয়ে বলেন, আমাদের এখন গ্রামের দিকে যেতে হবে। দেশকে উন্নতির দোরগোড়ায় নিতে এর বিকল্প নেই।

গ্রামের মানুষকে ক্ষুদ্রঋণের চাপ থেকে রেহাই দিতে এর কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এক ছাতার নিচে আসছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি বিশদ নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১৯-এর খসড়া করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও তাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে এক ছাতার নিচে আনতে চায়। এজন্য একটি নীতিমালার খসড়া করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরবে। বর্তমানে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেগুলো দূর হবে। খসড়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে আমার গ্রাম-আমার শহর অঙ্গীকার করে। নির্বাচনের এই প্রতিশ্রুতি অর্জনে সহায়ক হবে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা। জানা গেছে, সরকারের হয়ে বর্তমানে ৯টি সংস্থা সারা দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেগুলো হলো, সমাজসেবা অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, মহিলাবিষয়ক অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-বিআরডিবি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন একটি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads