• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ইউরোপ

মরিপোল ‌‘পুরোপুরি’ দখলের দাবি রাশিয়ার

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২২

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মরিপোল পুরোপুরি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান এই বন্দরনগরীর শহুরে এলাকা দখলে নিয়েছে। তবে শহরের একটি ইস্পাত কারখানার ভেতরে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের একটি ছোট দল এখনো রয়ে গেছে।

মরিপোলে ইউক্রেনের সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে রাশিয়া বলেছে, যারা অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। আজ রোববার বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরাসহ একাধিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরিপোলে জীবন রক্ষার সুযোগ হিসেবে ইউক্রেনের সৈন্যদের আজ রোববারের মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, এ সময়ের মধ্যে অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল তাদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এ জন্য তারা কিয়েভের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউক্রেনের সৈন্যদের।

তারা বলছে, ইউক্রেনের যেসব সৈন্য ও বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধারা মারিউপোলে এখনো লড়াই করছে, তারা স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যারা এটা করবে তাদের বন্দি হিসেবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করবে না তাদের বিষয়ে কী হবে সে সম্পর্কে দেশটি তাদের বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করেনি।

আলজাজিরা বলছে, মরিপোল শহর ‘পুরোপুরি’ দখলে নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার করা দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে আসলেই শহরটি মস্কোর দখলে চলে গেলে তা হবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর পর রুশ সামরিক বাহিনীর হাতে পতন হওয়া ইউক্রেনের প্রথম বড় কোনো শহর।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকভ বলেছেন, ‘মরিপোলের পুরো শহুরে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে দখলে নেওয়া হয়েছে ... ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের অবশিষ্ট একটি অংশ বর্তমানে আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।’

ইউক্রেনীয় এই যোদ্ধাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইগোর কোনাশেনকভ বলেন, ‘তাদের (আটকে পড়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের) জীবন বাঁচানোর একমাত্র সুযোগ হলো স্বেচ্ছায় অস্ত্র ফেলে দেওয়া এবং আত্মসমর্পণ করা।’

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘মরিপোলকে স্বাধীন করার অভিযানে’ ইতোমধ্যেই এক হাজার ৪৬৪ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।

রুশ বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, মরিপোলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কোর স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) যেসব ইউক্রেনীয় যোদ্ধা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবন রক্ষা করা হবে।

এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা আরও জোরদার করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ কারণে কিয়েভের মেয়র আরও হামলার আশঙ্কায় শহরে না ফিরতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভেও বিস্ফোরণ শোনা যাচ্ছে। তবে সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে চারটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

ইউক্রেনের এই বড় বন্দরনগরীটির পতন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছয় সপ্তাহ ধরে সেখানে রাশিয়ার হামলা চলছে এবং এতে মারা গেছে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক। যারা বেঁচে গেছে তারাও কনকনে ঠাণ্ডায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বোমায় শহরটি তছনছ করে দিয়েছে রুশরা। ফলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পানি ও ঔষধের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ শহরটির আরও উত্তরে সরে গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও স্বীকার করেছেন যে শহরটির অল্প অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, মরিপোলে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার অর্থ হলো আলোচনার সমাপ্তি টেনে দেওয়া।

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মরিপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads