• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

পোশাক ও ছবি: রঙ বাংলাদেশ

ফ্যাশন

লাল—সবুজের বসনে

  • অরণ্য সৌরভ
  • প্রকাশিত ০৫ ডিসেম্বর ২০২১

লাল—সবুজের সঙ্গে বাঙালির সখ্য রক্তে মিশ্রত। সবুজের বুকে লাল যেন বিজয়ের হাসি। লাল—সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকে তরুণ—তরুণীরা নিজেদের রাঙিয়ে তুলে দেশপ্রেমের চেতনায়। দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ পোশাকের নকশায় ফুটিয়ে তুলেছেন ডিজাইনাররা। বিজয়ের সাজপোশাক নিয়ে লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ


লাল—সবুজ আমাদের পতাকার রঙ, আমাদের বিজয়ের প্রতীক। বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা, হাসি—কান্না ঘিরে যে শব্দগুলো রয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা। দেশীয় ফেব্রিকের নিপুণ ছন্দবদ্ধোতায় আবেগ, প্রেম ও ভালোবাসার এক বন্ধনের প্রেক্ষাপট হাজির করেছেন দেশিয় ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বাঙালির সম্মুখে মেলে ধরেছেন ভিন্নমাত্রার নতুন আঙ্গিকে রূপায়িত বাংলার এক ফ্যাশন। যা বাঙালীর মনকে ছুঁয়ে যায় চেতনায় ও দেশপ্রেমে। এভাবেই ফ্যাশনে বাঙালীর ইতিহাস, সংস্কৃতি আর দেশাত্মবোধের স্ফুরণ হয়ে ওঠেছে লক্ষণীয়।

বিজয়ের চেতনা বহনের জন্য পোশাক উপযুক্ত মাধ্যম বলে মনে করেন রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস। তিনি বলেন, রঙের মাধ্যমেই আমরা আনন্দ—বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা বিজয়ের পোশাকে আমাদের পতাকার রঙ লাল—সবুজের ব্যবহার করেছি। আর সুতার কাজ দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছি। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস এদেশের স্বাধীনতার মানুষের বীরত্বের ইতিহাস পৌঁছে যাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে—এমনটাই আমাদের চাওয়া।

বসনে লাল সবুজের উল্লাস ছড়ি্য়ে দিতে ফ্যাশনপ্রেমী অনেকেই বিজয়ের দিনে পোশাকে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। ফ্যাশন ডিজাইনাররাও পোশাকে নিজস্ব উইভিংয়ে করা ডিজাইন, টাই অ্যান্ড ডাই, স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশপ্রেমের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। বিজয় উৎসবের বিভিন্ন প্রতীককে নকশায় প্রাধান্য দিয়ে পোশাকগুলো ডিজাইন করা হয়। বিজয়ের পোশাকে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি, লেখা, কবিতার পঙক্তি ফুটিয়ে তুলেছেন ডিজাইনাররা।

বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, দেশের স্বাধীনতার গৌরব এবং সৃজনশীল শিল্পের স্বাধীনতা এ দুয়ের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ। বিশ্বরঙের ফ্যাশনের মূল ভাবনা গড়ে উঠেছে দেশীয় আত্মপরিচয়কে ঘিরেই। বিজয় দিবসের পোশাকগুলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বরঙ দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে পোশাকের নকশায়।

সবুজ শাড়ির জমিনের মাঝে টকটকে লাল সুর্যের মাধ্যমে দেশাত্ববোধক গানের টাইফোগ্রাফি ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রাধান্য পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কবিতা, স্লোগান, মিছিল, স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি, গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন মুহূর্ত, দেশাত্মবোধক গানের লাইন ও বর্ণমালা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বরঙের লাল সবুজের উৎসব আয়োজনে দেশীয় রং, দেশীয় কাপড়কে মূল উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শীতের আগমনে বিজয় উৎসবের পোশাকগুলোতেও মোটা সুতি ও খাদি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।

পোশাকে মূল রং হিসেবে সাদা, লাল, সবুজ ও টিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নকশায় সবুজের বিভিন্ন শেড, সাদা, টিয়া, গোল্ডেন হলুদ সহযোগি রং হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। অনেকেই লাল—সবুজের পাশাপাশি সাদা, কালো, হলুদ, নীল, কমলা ইত্যাদি রঙের সংমিশ্রণের পোশাকও বিজয় উৎসবে নিয়ে এসেছেন। শাড়ি, থ্রি—পিস, সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তি, শাল, ওড়না, ব্লাউজ, ব্লাউজ পিস, আনস্টিচড থ্রি—পিস, পাঞ্জাবি, কাতুয়া, শার্ট, টি—শার্ট, উত্তরীয়, মাস্ক, শিশুদের থ্রি—পিস, সিঙ্গেল কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি—শার্ট এবং কাপল ও ফ্যামিলি ড্রেস রয়েছে। এছাড়া বিজয়ে উৎসবে রয়েছে জুয়েলারী, মেয়েদের ব্যাগ, পার্স ও উপহার সামগ্রী হিসাবে নানা ডিজাইনের মগ।

শাড়ী, থ্রি—পিস, পাঞ্জাবী, টি—শার্ট, উত্তরীয়, মগসহ বিভিন্ন পোশাক ও অনুসঙ্গে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ সংবলিত লেখা ও লাল—সবুজ রংয়ের মাধ্যমে দেশীয় ভাবনা। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুসঙ্গ হিসাবে। কাজের মাধ্যম হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে টাই—ডাই, ব্লক, বাটিক, এ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন ইত্যাদি। টি শার্টে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকার গ্রাফিক্যাল ফর্মের নান্দনিক উপস্থাপনায় টাইফোগ্রাফি, ক্যালিওগ্রাফির সম্মন্বয়।

বিশ্বরঙের বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ’ লেখা সংবলিত টি—শার্ট থাকছে। যা বিজয়ের মাস ছাড়াও সারা বছরই লাল সবুজ ফ্যাশন সচেতনের ফ্যাশন ভাবনা, দেশপ্রেমী মনের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে পারে। এভাবেই বলছিলেন বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা।


লাল সবুজের অনুসঙ্গ

পোশাকের সঙ্গে ওড়না, ব্যান্ড, ব্যাগ বা অলঙ্কারেও থাকা চাই লাল সবুজের ছোঁয়া। বিপ্লব সাহা বলেন, শাড়ির সঙ্গে বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজ পরতে পারেন। হাতায় গলায় লেস বসানো বা ভিন্ন রঙের পাইপিন বেশ মানিয়ে যাবে। লাল—সবুজ শাড়ি পরতে না চাইলেও একরঙা শাড়ির সঙ্গে লাল—সবুজের সংমিশ্রণে ব্লাউজ বেশ মানাবে। এক্ষেত্রে সাদা, ঘিয়া কিংবা কালো শাড়ির সঙ্গে মানানসই লাল কিংবা সবুজ ব্লাউজের হাতায় লেস বসানো হলে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে।
রঙ বাংলাদেশের সৌমিক দাস বলেন, লাল সবুজের আরামদায়ক সালোয়ার—কামিজ বা লম্বা কুর্তাও বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রেও উঁচু গলা ও লম্বা হাতা মানানসই হবে। সঙ্গে গাঢ় সবুজ রঙের সালোয়ার, ওড়না থাকতে পারে। পোশাকে লাল—সবুজ রাখতে না চাইলেও রাখুন ওড়না, স্কার্ফ ও গহনায়।


সাজে লাল সবুজ

মেকআপের ক্ষেত্রেও লাল সবুজকে প্রাধান্য দেওয়া যায় বলে জানান রূপবিশেষজ্ঞ ঊর্মি ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বড় লাল টিপ কপালে পরতে পারেন। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, হাতে লাল—সবুজ চুড়ি, লাল সবুজ রংয়ের চুলের ব্যান্ড, খোঁপায় লাল ফুল ব্যবহার করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, বাহিরে যদি দিনটি কাটান তাহলে মেকআপ যেন বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেজন্য প্রাধান্য দিতে পারেন হালকা মেকআপ। চোখকে একটু বেশি প্রাধান্য দিন। মোটা করে কাজল দিতে পারেন। গলায় পরতে পারেন পুঁথি, মাটি, কাঠ বা সুতার মালা। সঙ্গে মিল রেখে কানের দুল ও অন্যান্য গহনা।
ঊর্মি ভূঁইয়া বলেন, বিজয় উৎসবে মেয়েদের পায়ে গাঢ় আলতা এনে দিতে পারে অন্যরকম আবহ। দিনজুড়ে অনুষ্ঠান থাকলে পরুন আরামদায়ক জুতা বা স্যান্ডেল। রোদে বের হলে সানগ্লাস, ছাতা, পানির বোতল সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।


কোথায় পাবেন, দরদাম কেমন

বিজয় দিবসের পোশাক যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিসহ বিভিন্ন শপিংমলে পাবেন। পাশাপাশি রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, আড়ং, অঞ্জন’স, গ্রামীণ ইউনিক্লো, ক্যাটস আই, জেন্টল পার্ক, ইনফিনিটি, সেইলোরসহ দেশিয় ফ্যাশন হাউজেও লাল সবুজের পোশাক পাবেন। এছাড়া উত্তরা, বনানী, গুলশান, মিরপুরসহ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটের বিভিন্ন বিপণিবিতানেও পাবেন বিজয় উৎসবের পোশাক। শাড়ি ১৮০০—৩৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কামিজ ১২৫০—১৫৫০ টাকা, থ্রি—পিস ২৫০০—৩৫০০ টাকা, ব্লাউজ ৬০০—৮০০ টাকা, ওড়না ৬৫০—৭৫০ টাকা, শাল ৯০০—১১০০ টাকা, পাঞ্জাবি ১০০০—১৫০০ টাকা, টি—শার্ট ৪৮০—৫২৫ টাকা, উত্তরীয় ৪০০—৫০০ টাকা। শিশুদের থ্রি—পিস ১৩৫০—১৫৫০ টাকা, ফ্রক ৮৫০—১২০০ টাকা, স্কার্ট ১০০০—১৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৭০০—১০০০ টাকা, শার্ট ৫৫০—৭০০ টাকা, টি—শার্ট ৩৮০—৪৫০ টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads