• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি ও পোশাক : বিশ্বরঙ

ফ্যাশন

শাল-চাদরে শীতের আমেজ

  • অরণ্য সৌরভ
  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০২১

সকাল-সন্ধ্যা ঠান্ডা অনুভূতি ও কুয়াশাসিক্ত ভোর জানান দিচ্ছে শীতের। শীতে চাই ওম বা উষ্ণতা। শাল-চাদরে ওম, উষ্ণতা আর মায়া থাকে লেপ্টে। তরুণদের পছন্দের শীর্ষে থাকা শাল-চাদর এখন ট্রেন্ড। হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক প্রিন্ট, সুঁই-সুতোর কাজ বা এক রঙের শাল-চাদর ঘরে-বাইরে, পার্টি বা দাওয়াতে যে-কোনো পোশাকের সঙ্গে পরা যায়। শীত নিবারণের পাশাপাশি ফিরিয়ে আনে ভিন্ন লুক। শাল-চাদর নিয়ে লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ

হিমপরশের ভোর। ঘাসের শিষে চিকচিক করা শিশিরবিন্দু। পিঠা-পুলি, খেজুরের রসের ম-ম ঘ্রাণ। পোশাকের পরতে পরতে আঁকা শীতের গল্প, জন্মকথা কিংবা চিরচৈতন্য সংস্কৃতি। এমন আয়োজনই জানান দেয় শীতের। শীতে চাই উষ্ণতা। শীত তাড়াতে কিংবা উষ্ণতা পেতে ফ্যাশনেবল শীতের অনুসঙ্গ হতে পারে শাল-চাদর। শীতের সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, পঞ্চ যাই থাকুক না কেন, শাল বা চাদর না হলে যেন শীতটা ঠিক জমে না।

জীবনানন্দ দাশের ‘হেমন্ত’ কবিতার, ‘শাদা চাদরের মত কুয়াশার নিচে শুয়ে’ চরণের মাধ্যমে চাদরের কাব্যিকরূপ খুঁজে পাওয়া যায়। আবার শামসুর রাহমানের ‘স্বপ্ন জাগরণের সীমানায়’ কবিতার ‘জ্যোৎস্নার চাদর বিছানো প্রান্তর’ চরণেও চাদরের কাব্যিকতার প্রকাশ মেলে।

একটা সময় শাল-চাদর পরত বয়স্করা। সেদিন অতীত হয়েছে। আবাল-বৃদ্ধা সকলেই এখন শাল বা চাদরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তরুণ-তরুণীরা পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে শাল-চাদর ফ্যাশনে আনে বৈচিত্র্যও।

হ্যান্ডপেইন্ট চাদর নিয়ে কাজ করা অনলাইন শপ কাব্যরং-এর ফ্যাশন ডিজাইনার ফারজানা ইসলাম বলেন, অফিস, পার্টি কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় শীত ফ্যাশনের মানানসই অনুষঙ্গ হতে পারে শাল-চাদর। ফ্যাশনাবেল করে তুলতে চাদরের রং ও ডিজাইনে এনেছি পরিবর্তন। এখনকার ছেলেমেয়েরা সকলেই ফ্যাশনেবল চাদরগুলো গায়ে জড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এখনকার চাদরগুলো চাইলে গলায় পেঁচিয়ে স্টাইলও করা যাবে।

হাল ফ্যাশনে তরুণীরা শাড়ি, কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, স্কার্টের সঙ্গেও শাল বা চাদর পরছেন। রং, নকশা, ডিজাইন যে-কোনো নারীর সঙ্গে মানিয়ে যায় বলেও এই ডিজাইনার জানান।

চাদরের প্রচলন ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা ঘেঁটে জানা যায়, আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশদভাবে শাল-চাদরের ব্যবহারের দেখা মিলে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পশ্চিম ইউরোপে শাল-চাদরের জনপ্রিয়তা দেখা যায়। অন্যদিকে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় আসিরীয় যুগে শাল-চাদরের ব্যবহারের কথাও জানা যায়।

ইসলাম ধর্মাবলম্বী নারীদের বিশেষ পোশাক হিসেবে চাদরের প্রচলন শুরু হয় বলেও জানা যায়। তখন পার্সিয়ান নারীরাই এটি ব্যবহার করত। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে বিশ্বে। তবে একেক জায়গায় একেক নামে। শীত তাড়ানোর এই বস্ত্রটিরও বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে চাদরের অর্থ ‘উত্তরীয়, দেহের উপরিভাগে ধারণীয় বস্ত্র’। ‘আলোয়ান’ বললে বোঝাবে সেই চাদরটিকে যা লোমজাত তন্তুতে তৈরি এবং পাড়হীন। পাড়যুক্ত পশমি চাদর যাকে আমরা সচরাচর বলছি ‘শাল’, সেটিকেই এককালে ‘রেপার’ নামে চিনতেন সবাই।

বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, আমাদের দেশে অনেক বছর আগে থেকেই শাল ও চাদর ব্যবহূত হচ্ছে। এক সময় শীতের পোশাক বলতে জনসাধারণ এগুলোকেই বুঝত। কিন্তু আধুনিকতায় বদলে গেছে সে রীতিনীতি। দেশীয় সংস্কৃতি, মোটিফ, নকশা, ডিজাইনে এসেছে নতুনত্ব।

পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে চাদর পরা এখনকার ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে বলে জানান ডিজাইনার ফারজানা ইসলাম। ছেলেমেয়ে সবাই শীতের ফ্যাশন হিসেবে চাদর ব্যবহার করছেন বলেও তিনি জানান।

বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘শীতকে তরুণরা এখন একটা উৎসব হিসেবে নিয়েছে। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন শীত কাপড়ের ডিজাইন করা হচ্ছে। হালকা শীতের জন্য পাতলা চাদর ও মাঝারি বা কঠিন শীতের জন্য ভারী চাদর ছেলেমেয়ে উভয়েই ব্যবহার করছে সমানতালে।

কর্মজীবী নারীরা শাড়ি বা থ্রিপিসের রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে শাল-চাদর ব্যবহার করতে পারেন। থ্রিপিসের সঙ্গে ওড়না হিসেবেও এটা বেশ মানানসই। ছেলেরা শার্ট, গেঞ্জি এবং পাঞ্জাবির সঙ্গে চাদর পরতে পারেন।

চাদরের রঙের ক্ষেত্রে কালো, হলুদ, নীল, খয়েরি, কফি, মেজেন্টা, বাদামি, অফ-হোয়াইটকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পশমি বা মোটা সুতি, উলেন, সিল্ক, খাদিসহ বিভিন্ন কাপড়ের ওপর পুঁতি, চুমকি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, হেন্ডপেইন্ট, স্কেচ, জরির পাশাপাশি বাহারি সেলাই ও নকশার কারুকাজ রয়েছে শাল এবং চাদরে। লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানিসহ বিভিন্ন বিদেশি শালও রয়েছে।

অনলাইন শপ কাব্যরং-এর ডিজাইনার ফারজানা ইসলাম বলেন, হালকা শীতের জন্য পাতলা কাপড় ও বেশি শীতের জন্য উলেন কাপড়কে প্রাধান্য দিয়েছি।

 

কোথায় পাবেন, দরদাম

আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, ধানম্লি হকার্স মার্কেট, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মৌচাক, গাউছিয়াসহ বিভিন্ন মার্কেটে ও শপিং মলে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাবে শাল-চাদর। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ঢু মারতে পারেন। অনলাইনে কিনতে চাইলে ফেসবুক পেজ Bishworang-এ ঢু মারতে পারেন। সাধারণ মানের শালের দাম পড়বে ৪শ থেকে ১৫০০ টাকা। ফ্যাশন হাউসগুলোয় কটন ও খদ্দের শালের দাম পড়বে ৫শ থেকে ১৫০০ টাকা। কাশ্মীরি শাল মিলবে ৬শ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads