• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মুক্তমত

দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন

  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০২১

আদিত্য রায় রিপন

 

 

করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস থেকে বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী। মাঝে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খোলার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীসময়ে আবার বাড়ানো হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। তবে আর কোনোভাবেই ঘরে থাকতে চাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে তারা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে। মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে তারা ক্লাসে ফিরতে চায়। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় ৫ এপ্রিল ‘লকডাউন’ এবং পরবর্তীসময়ে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার, যা গত ২৩ মে এক সপ্তাহ বাড়ালেও খুলে দেওয়া হয়েছে গণপরিবহন ও হোটেল রেস্তোরাঁ। আর ঈদের আগ থেকেই খোলা রয়েছে দেশের সমস্ত হাট-বাজার ও শপিংমগুলো। আস্তে আস্তে আবার সবকিছুই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েই চলেছে। এখন শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ‘করোনা কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই?’ আমরা দেখেছি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও দেশের কল-কারখানাগুলো চালু রেখেছিল সরকার, যেখানে করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই বেশি। সেইসব শ্রমিক যখন গ্রামে ফিরছিল তখন কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আমরা দেখেছি। কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই তারা একইভাবে আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। সবকিছুই ঠিকঠাকই চলছে। মাঝখানে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে নানা সমস্যায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অটো প্রমোশন দেওয়া হলেও দুবছর ধরে একই বর্ষে পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখন তারা দুবছরের সেশন জটে আটকে আছে। আবার দেশের এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের দু-এক বছর সেশন জট রয়েছে। ফলে এখন তারা একেক জনের তিন থেকে চার বছর করে সেশন জটে আটকে আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় অনেকেই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। একই বিষয়ে অনেকে বিষণ্নতায় ভুগছে। আবার অনেকেই জীবিকার তাগিদে বই-খাতা তুলে রেখে পরিবারের হাল ধরেছে। কেউবা ভাবছে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার কথা। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার ফলেই এমনটা ভাবছে শিক্ষার্থীরা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে এই দীর্ঘসময় বাড়িতে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে মানসিক প্রশান্তির জন্য মাদকের নেশায় ডুবে যাচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকার সুযোগে তারা খারাপ-সঙ্গে মিশে লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধের কারণেও লেখাপড়া ছেড়ে ঘোরাঘুরি-খেলাধুলা ও আড্ডায় মেতেছে অনেক শিশু-কিশোর। অনেকেই আবার এই অবসর সময়ে আসক্ত হয়ে পড়েছে মোবাইল গেমসের দিকে। সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছে ভিডিও গেমসে। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকার ফলে স্কুল-কলেজ পর্যায়েরও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কল-কারখানার কাজে যুক্ত হয়েছেন। শহরে অনেককেই দেখা গেছে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। স্কুল খোলা থাকলে হয়তো তাদের এমনটা হতো না। করোনাকালীন আরেকটি বড় ক্ষতি হয়েছে স্কুলপর্যায়ের মেয়েদের। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তায় অনেক বাবা-মাই তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে সংসারের বোঝা কমানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা এমনও দেখেছি যে মেয়েটি স্কুলে ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সেই মেয়েটিই বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ঝরে পড়ার সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে হয়তো দেখা যাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ২০-৩০% শিক্ষার্থীকে আর ক্লাসে আর দেখা যাবে না, যা কোনভাবেই আমাদের কাম্য নয়। আর এই ঝরে পড়া রোধ করা না গেলে দেশে নেতিবাচক বিবিধ সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা দেবে এক ভয়ানক সংকট। করোনার এই মহাদুর্যোগে দেশের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যেন কোনোভাবেই অন্ধকারে নিমজ্জিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এখন সবচেয়ে জরুরি। শিক্ষার্থীদের এমন মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্ত করতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads