• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বিশ্বরাজনীতিতে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ এবং একটি বিশ্লেষণ

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

বিশ্বরাজনীতিতে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ এবং একটি বিশ্লেষণ

  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০২২

আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে Cold War তথা স্নায়ুযুদ্ধ অত্যন্ত সুপরিচিত টার্ম। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ওয়াল্টার লিপম্যান সংবাদপত্রে প্রথম Cold War শব্দটি ব্যবহার করেন। এ শব্দের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ভীতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। সাধারণ অর্থে স্নায়ুযুদ্ধ বলতে সরাসরি প্রথাগত যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে একে অপরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক কিংবা ভিন্ন আঙ্গিকে পরাজিত করার কৌশলকে ইঙ্গিত করা হয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থাৎ চল্লিশ দশকের শেষ লগ্ন থেকে শীতল যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। যা নব্বই দশকের প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের উপসর্গ লক্ষণীয়। অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বর্তমান প্রেক্ষাপটকে দ্বিতীয় Cold War সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, শীতল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তন ঘটেছিল। মূলত দুই ধরনের মতাদর্শকে (গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র) কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। বেড়েছিল পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা কিংবা অস্ত্রের ঝনঝনানি। তৈরি হয়েছিল ন্যাটো, ওয়ারশর মতো নতুন নতুন সামরিক জোট। সময়ের পরিক্রমায় ১৯৯১ সালে ১ জুলাই ওয়ারশ জোটের পতন  ঘটলেও ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাটো জোট এখনো সুদৃঢ়ভাবে অস্তিত্বের সঙ্গে টিকে আছে।

মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রথমে ১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধ দুই বিশ্ব পরাশক্তিকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছিল। যেখানে উত্তর কোরিয়াকে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সমাজতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে মস্কো। অপরদিকে ওয়াশিংটন দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করতে অনস্বীকার্য দায়িত্ব পালন করে। সেইসঙ্গে উভয় দেশ প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বলা বাহুল্য, ১৯৫৩ সালে ২৭ জুলাই জাতিসংঘের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ ৭০ বছর পরও কোরিয়া ভূখণ্ডে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। অতিসূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কোরিয়া ভূখণ্ডে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা যুক্তরাষ্ট্র। কার্যত দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি। সেই সঙ্গে কোরিয়া সীমান্তে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে সামরিক মহড়া ভালো চোখে দেখে না কিম জং উন প্রশাসন। বরং তাদের এই তৎপরতাকে যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বর্ণনা করে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করে না উত্তর কোরিয়া। ফলে দিন দিন বাড়ছে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও চাপা উত্তেজনা। দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, পিয়ংইয়ং যতটা সিউলকে শত্রু মনে করে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ওয়াশিংটনকে শত্রু ভাবে। কারণ পারমাণবিক ইস্যুকে সামনে রেখে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। সেইসঙ্গে কিম প্রশাসনকে দুর্বৃত্তায়ন রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র। কথিত আছে, উত্তর কোরিয়ার শাসনভার পরিবর্তন করতে চায় হোয়াইট হাউস। মোদ্দা কথা, যতদিন দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কিংবা সামরিক মহড়া অব্যাহত থাকবে, ততদিন কোরিয়া অঞ্চলে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুতরাং একবিংশ শতাব্দীতে কোরিয়া এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি। অন্যথায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিবদমান ইস্যু নিয়ে নতুন মাত্রায় স্নায়ুচাপ বৃদ্ধি পাবে তা অনুমেয়।

কার্যত স্নায়ুযুদ্ধকালে কিউবা সংকট ছিল বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছিল। মূলত ১৯৫৯ সালে কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র বিপ্লব সম্পন্ন হলে এই সংকটের সূত্রপাত ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের অতি নিকটবর্তী কিউবায় সমাজতন্ত্রের উত্থান ওয়াশিংটন ভালোভাবে গ্রহণ করি। শুধু তা-ই নয়, নব্যপ্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের সেই কলকাঠি পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যার ফলে কিউবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাস্ট্রো প্রশাসন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারস্থ হয়। প্রসঙ্গত যে, চুক্তি মোতাবেক মস্কো ১৯৬২ সালে হাভানায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ফলে কিউবায় যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না এমন প্রতিজ্ঞায় ও আলোচনাসাপেক্ষে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে মস্কো। ফলে তৎকালীন উত্তপ্ত পরিবেশ কিছুটা প্রশমিত হয়। কালের বিবর্তনে সমাজতন্ত্রের বাতিঘর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কিউবায় এখনো সমাজতন্ত্র অস্তিত্বের সঙ্গে টিকে আছে। কিন্তু ওয়াশিংটন-হাভানা শীতল সম্পর্ক কখনো উষ্ণতার ছোঁয়া পায়নি।

কার্যত বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুকালে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরোক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি পৃথক প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ষাট এবং সত্তর দশকের দীর্ঘকাল ওয়াশিংটন ভিয়েতনামে সামরিক আগ্রাসন চালায়। কিন্তু এ যুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।  বরং ১৯৭৩ সালে ওয়াশিংটন বাধ্য হয়ে যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে। সেইসাথে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় মার্কিন বহর। ফলে ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। যেখানে অকার্যকর হয় তথাকথিত যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্লোগান। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল স্নায়ুকালে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে মার্কিনিদের বড় পরাজয়। অপরদিকে স্নায়ুযুদ্ধের শেষ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। যার অন্যতম লক্ষ্য ছিল সোভিয়েতপন্থি বারবাক কারমাল সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি মস্কোরও। ভৌগোলিক অবস্থানে রহস্য ঘেরা আফগানিস্তান যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে ১৯৮৮ সালে গরবাচেভ সরকার সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তার মাত্র তিন বছর পর ১৯৯১ সালে ডিসেম্বর মাসে তাসের ঘরের মতো ভেঙে খণ্ড-বিখণ্ড হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মস্কো। যার ফলে আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে স্নায়ুযুদ্ধ নামক দীর্ঘ অধ্যায়ের। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পেছনে আফগান যুদ্ধে ব্যর্থতা অনেকাংশ দায়ী। স্মরণযোগ্য, স্নায়ুযুদ্ধের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। সময়ের পরিক্রমায় আজ তারা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হয়েছে।

নব্বই দশকের প্রথমদিকে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেছে। কিন্তু বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আবারো নতুন রূপে ফিরে এসেছে স্নায়ুযুদ্ধ। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক শক্তি এবং সেইসঙ্গে চীনের অদম্য অর্থনীতির অগ্রগতিকে পরোক্ষভাবে গতিরোধ করা। অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধের রূপ ছিল এককেন্দ্রিক। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমানে তা মূলত দ্বি-মেরুকরণে রূপ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা দ্বি-মেরুকরণকে Cold War বা শীতল লড়াইয়ের নতুন রূপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অতি সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ২০১৫ সালে আরব বসন্তের পর কঠিন সময়ে সিরিয়া সরকারকে সহযোগিতা করে মস্কো। এতে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় আসাদ প্রশাসন, যা মস্কোর জন্য বড় সামরিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও দেশটিতে এখনো গৃহযুদ্ধ বিদ্যমান কিন্তু সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে রুশ বাহিনী, যা মস্কোর সামরিক আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমান বিশ্বরাজনীতির কূটচাল জটিল থেকে জটিলতর রূপ ধারণ করেছে। যেখানে ওয়াশিংটনের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে বেইজিং ও মস্কো। উল্লেখ্য, ট্রাম্প থেকে বাইডেন কিংবা আগামীতে যে কেউ ক্ষমতায় আসীন হোক না কেন, চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হার্ড নীতির কখনো পরিবর্তন ঘটবে না। অপরদিকে নিকট ভবিষ্যতে ক্রেমলিন ও চীনের সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ওয়াশিংটনের চেয়ে রাশিয়া ও চীনের সুদূর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে তা অনুমেয়।

বলা যায়, বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পরার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেসব পরাশক্তি দেশ বিংশ কিংবা একবিংশ শতাব্দীতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, তারা প্রত্যেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশ পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমনে একমত হয়েছে। কিন্তু একে অপরকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা বর্তমানের মতো ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে তা অনুমেয়। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ত্রিদেশীয় অকাস চুক্তি। কিংবা জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হচ্ছে এশিয়া অঞ্চলে চীনকে চাপের মধ্যে রাখার পরোক্ষ কৌশল। অপরদিকে ইউরোপ অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে ব্যবহার করবে তা অনেকাংশে নিশ্চিত। প্রসঙ্গত যে, বর্তমান ইউরোপের ইউক্রেন এবং রাশিয়া সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে মস্কো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সীমান্তে ন্যাটোর উপস্থিতি মেনে নেবে না রাশিয়া। কার্যত বিবদমান উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও ঐকমত্যে পৌঁছায়নি কোনো পক্ষ। অর্থাৎ ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া ছাড় দিতে নারাজ, যা মস্কোর আগ্রাসন সামরিক নীতির বহিঃপ্রকাশ। তবে নিকট ভবিষ্যতে সময় বলে দেবে, ইউরোপের বিবদমান সমস্যা কোন দিকে মোড় নেয়।

বর্তমান মধ্যএশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সিএসটিও সেনাবহর অবস্থান করছে, যা সহজভাবে মেনে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সন্দেহ নেই, বর্তমান বেইজিং ও মস্কোর সম্পর্ক যে কোনো সময়ের তুলনায় উষ্ণ। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ। বেইজিংয়ের অর্থনীতির পরিমাণ ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের অধিক। অপরদিকে সামরিক দিক থেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মস্কো। বিশ্লেষকদের অভিমত, চীনের উত্থানকে দমিয়ে রাখতে পশ্চিমা বিশ্ব দুটি কৌশল অবলম্বন করছে। প্রথমত চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলমানদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। দ্বিতীয়ত তাইওয়ানের সাথে সখ্য গড়ে তোলা। সেইসঙ্গে পরোক্ষভাবে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক এবং অর্থনৈতিক জোট গঠন। ইতোমধ্যে ওই স্ট্র্যাটেজি অনেকাংশে বাস্তবায়ন করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা এবং চলতি বছরে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকে কূটনীতিক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ। যদিও প্রশ্ন থেকে যায় উপরোক্ত পদক্ষেপের ফলে আসলেই কি বেইজিংকে দুর্বল করা সম্ভব!

অন্যদিকে রাশিয়ার গণতান্ত্রিক এবং সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব পদক্ষেপ নিতে যে মুখিয়ে থাকবে তা অনুমেয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মস্কো ক্রিমিয়া দখল করলে এর প্রতিবাদে গ্রুপ-৮ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করবে। যেখানে পরোক্ষভাবে বেইজিং ও মস্কোকে দমিয়ে রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার অপেক্ষা, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের রাজনীতি কতটা জলরং ছড়াতে পারে।

 

লেখক : মো. রাশেদ আহমেদ

শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads