• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ফেসবুক আসক্তির প্রভাব পড়ছে শরীর-স্বাস্থ্যে

প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য

ফেসবুক আসক্তির প্রভাব পড়ছে শরীর-স্বাস্থ্যে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২১

একজন আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফেসবুক আসক্তিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি এই সমস্যাকে শুধু আসক্তিতে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না। তিনি মনে করেন, ফেসবুক ব্যবহার এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং এ প্রবণতা এমন সব জটিল সমস্যা তৈরি করছে, এ অবস্থাকে ডিসঅর্ডারের পর্যায়ে ফেলে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। শারীরিক ও মানসিক অবস্থার এই অবনতিকে বলা হয় ফেসবুক অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার (FACEBOOK ADDICTION DISORDE) বা ফেসবুক আসক্তি সংকট। ফেসবুক আসক্তি সংকট এমন এক অবস্থা, যখন কেউ এত বেশি সময় ফেসবুকে কাটায় যে, তার স্বাভাবিক জীবন ও স্বাস্থ্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এক হিসাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ফেসবুক আসক্তিতে ভুগছে। কেউ এই সংকটে ভুগছে কি না তা বোঝা যায় কতগুলো উপসর্গ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হলো ধৈর্য। এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর বেপরোয়া আচরণ বর্ণনা করার জন্য। এরা তত বেশি সময় ফেসবুকে কাটায় যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি আসে। কিন্তু এতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও মা-বাবারা এই শ্রেণির মানুষকে এককথায় আসক্ত বলে অভিহিত করেন।

দ্বিতীয়ত, এসব আসক্ত মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম করার জন্য যদি ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা হয় বা প্রতিহত করা হয়, তবে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হতাশা প্রচণ্ড রূপ ধারণ করে। তাদের অনুপস্থিতিতে ফেসবুকে কী কী নতুন জিনিস পোস্ট করা হয়েছে তা জানার জন্য এরা সারাক্ষণ অস্থির থাকে।

তৃতীয়ত, ফেসবুক আসক্তদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এমনকি বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। এমনকি এরা প্রয়োজনীয় কাজ, পড়াশোনা বা খেলাধুলা পর্যন্ত ছেড়ে দেয় ফেসবুকে সময় কাটানোর জন্য। ফেসবুক আসক্তির কারণে এরা অনেক সময় দরকারি টেলিফোন কল পর্যন্ত গ্রহণ করে না। অনেক ফেসবুক ইউজার সময়মতো ও ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না, সময়মতো ঘুমাতে যায় না, রাত জেগে ফেসবুক চর্চা করে। ফলে এদের শরীর ও মনের ওপর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। অনেকেই মনে করেন, নেটের প্রতি আসক্তি অন্যান্য ভয়াবহ আসক্তির মতোই একটি খারাপ আসক্তি এবং সাবধানে ও যত্নসহকারে এর চিকিৎসা করা দরকার।

ফেসবুক অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডা এক ধরনের খামখেয়ালিপনা বা খেপামি কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। যে যাই বলুক, ফেসবুক আচ্ছন্নতা বর্তমান সমাজে জটিল ও আজগুবি সব সমস্যা তৈরি করছে। এটা সংকট কি সংকট নয় তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু ফেসবুকের কারণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা দূর করা দরকার। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা অনলাইনে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে প্রোফাইল, ছবি ও স্ট্যাটাস আপলোড করতে ও দেখতে গিয়ে যে সময় নষ্ট হচ্ছে, তাতে করে তাদের জীবনের ওপর প্রভাব পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুক আনন্দদায়ক এবং উপকারীও বটে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফেসবুকে অনেক দরকারি, শিক্ষণীয় ও মূল্যবান উপকরণ থাকে। কিন্তু তারপরও ফেসবুক বিশ্বব্যাপী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আচার-আচরণ ও জীবন পদ্ধতির ওপর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনলাইনে মানুষ আজকাল এত বেশি সময় ব্যয় করছে যে, তার ফলস্বরূপ দৈনন্দিন জীবনের অপরাপর প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান কাজে বেশি সময় দিতে পারছে না। মানুষের আসল জীবনের চেয়ে অনলাইন জীবন যেন অনেক বেশি অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কোথায়? আমরা কীভাবে এমন একটি সমস্যার সমাধান খুঁজব, যখন পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অনলাইন কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। এর উত্তর দেওয়া হয়তো তত সহজ হবে না। তবে উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের মা-বাবারা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু বাবা-মায়েরা যখন সন্তানের ফেসবুক বন্ধু হয়ে যান, তখন কী করার থাকে! বয়স্ক মানুষের চেয়ে উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েরাই ফেসবুক নিয়ে তাদের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছে। ফেসবুক নিয়ে এত বেশি সময় কাটানো উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের উপকারের চেয়ে অপকারই করছে বেশি। তাই কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের ফেসবুক আসক্তি থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই কোনো না কোনো প্রতিকার খুঁজে বের করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads