• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা ভারতে

সংগৃহীত ছবি

ভারত

তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা ভারতে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০২১

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ভারতে নতুন ঢেউ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী। গত বুধবার সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন এই সতর্কবার্তা দেন। করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে বিরোধী দলসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের দাবি জানালেও অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় তাতে নারাজ নরেন্দ্র মোদি সরকার। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভির।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনা উচ্চমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে ফেইজ থ্রি বা তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী। কোন সময়সীমার মধ্যে এটা ঘটবে তা স্পষ্ট নয়। তবে নতুন ঢেউয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শনাক্ত রোগী সংখ্যায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে করোনায় গত শনিবার একদিনে রেকর্ড ৩ হাজার ৭৮০ জনের মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখের বেশি। পরদিন ওই সংখ্যা তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৮৮ জনে নামে; সোম ও মঙ্গলে দৈনিক শনাক্ত ধারাবাহিকভাবে কমতে দেখে সংক্রমণ কমছে বলে কর্মকর্তারা স্বস্তিও প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু বুধবার তিন লাখ ৮২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের সংখ্যা তাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে অক্সিজেনের ঘাটতি আর হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড়ে এমনিতেই নাকাল স্বাস্থ্য বিভাগ। সব মিলিয়ে কোভিড-১৯ এ দেশটিতে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে দুই কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৪৮ জন; সরকারি হিসাবে ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৮৮ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবেদনে বলেছে, গত সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় যত সংখ্যক নতুন সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে, তার অর্ধেকই ভারতে এবং চার ভাগের এক ভাগ মৃত্যুও সেখানেই হয়েছে।

অনেক রাজ্যে চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে, হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায়। সৎকারের স্থানগুলো মহদেহের নিরবচ্ছিন্ন মিছিল সামাল দিতে হিমশিম অবস্থায়।  সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে ধর্মীয় উৎসব ও নির্বাচনী সমাবেশগুলোকে সুপার স্প্রেডার বা অতিমাত্রায় ছড়িয়ে দেওয়া আয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মোদিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বুকার পুরস্কার জয়ী লেখক অরুন্ধতি রায় লিখেছেন, আমাদের জন্য বাতাসও ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা মারা যাচ্ছি। এক নিবন্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, এই সংকট আপনারই তৈরি করা। আপনি এর সমাধান করতে পারবেন না। আপনি একে আরো খারাপ দিকেই নিয়ে যেতে পারবেন। তাই দয়া করে বিদায় নিন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর বাস্তব সংখ্যা সরকারি হিসাবের চাইতে পাঁচ থেকে দশগুণ বেশি হতে পারে। মাত্র চার মাসে সেদেশে এক কোটি মানুষ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। অথচ ভাইরাসটি সেখানে শনাক্ত হওয়ার পর প্রথম এক কোটি মানুষে সংক্রমিত হতে সময় লেগেছিল ১০ মাস। বিরোধী দলগুলো দেশজুড়ে ফের লকডাউন কার্যকর করার আহ্বান জানালেও অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় সরকার তা করতে রাজি নয়। যদিও বেশ কয়েকটি রাজ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপগুলো নিতে শুরু করেছে।

এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য-যেখানে বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাররা মোদির দলের পক্ষে সমর্থন দেয়নি। নির্বাচনে জিতে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা তৃণমূলের মমতা ব্যানার্জির সরকার মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে রাজ্যে লোকাল ট্রেন চলাচল স্থগিত করেছে এবং ব্যাংক, গয়নার দোকানে কর্মঘণ্টা কমিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। সংকটময় মুহূর্তে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হতে পারে বিবেচনায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময় বাড়ানোর জন্য বুধবার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

টিকা উৎপাদনে ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হওয়ার পরেও সংক্রমণ উচ্চহারে বেড়ে চলায় টিকাদানের হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে, যার অন্যতম কারণ সরবরাহ ও পরিবহন সমস্যা। মহারাষ্ট্রসহ অন্তত তিনটি রাজ্যে টিকার ঘাটতির কারণে অনেক টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যদিও সরকার বলছে, কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য ওষুধ রেমডেসিভিরের উৎপাদন তিনগুণ বাড়িয়ে মাসে এক কোটি তিন লাখ শিশি করা হয়েছে, যা এক মাস আগেও ছিল ৩৮ লাখ শিশি। রাষ্ট্র-পরিচালিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ জানিয়েছে, দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছে, যা শনিবারও ছিল সাড়ে ১৯ লাখ।

রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল টুইট বার্তায় বুধবার জানান, তরল অক্সিজেন নিয়ে দুটি বিশেষ ট্রেন রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছে। দেশজুড়ে ২৫টিরও বেশি ট্রেন অক্সিজেন সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ে সংকট নেই কিন্তু পরিবহন জটিলতার কারণে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ছে।

মিজোরামের মতো মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ভারতের প্রান্তিক রাজ্যের সবচেয়ে বড় কোভিড-১৯ হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে অন্য সব রোগীকে ছাড়পত্র দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছেন বলে জানান সেখানকার কর্মকর্তা ড. জেড আর থিয়ামসাঙ্গা। বলেন, হাসপাতালের ১৪টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে মাত্র তিনটি খালি আছে। আমার মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন অপরিহার্য।

ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ভারতের এই সংক্রমণ বিস্ফোরণ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেশী নেপালও এখন সংক্রমণের হার সামাল দিতে হিমশিম পরিস্থিতে রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নেপালে এক মাস আগের তুলনায় এখন সংক্রমণ বেড়েছে ৫৭ গুণ। সেখানে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৪৪ শতাংশের দেহেই ভাইরাস ধরা পড়ছে। ভারতের সীমান্তঘেঁষা শহরগুলো চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর চাপ সামলাতে পারছে না। অথচ দেশটির মাত্র এক শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads