• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আবারো অনিশ্চয়তা পোশাকশিল্পে

সংগৃহীত ছবি

শিল্প

আবারো অনিশ্চয়তা পোশাকশিল্পে

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০২১

দেশের তৈরি পোশাকের ৬০ ভাগেরও বেশির ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭টি দেশ। কিন্তু দুঃসংবাদ হলো, পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় এই বাজারে করোনা মহামারীর কারণে দফায় দফায় লকডাউন লেগেই আছে। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শপিংমলসহ দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের ওপর। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে করোনার প্রকোপ কমে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল পোশাক খাতে। কিন্তু আবারো করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি দেশে লকডাউনের সময় বাড়ানো বা লোকসমাগম বন্ধে আরো কঠোর আইন করায় সে আশা এখন গুড়েবালি।

সবশেষে গত ৮ মার্চ পর্যন্ত জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশের লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ ৯ মার্চ (গতকাল) থেকে সবকিছু খুলে দেওয়া হবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এসব দেশ চলতি মাসের পুরোটা সময় লকডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সেইসাথে ইস্টার হলিডেকে সামনে রেখে লকডাউন ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে শঙ্কা পোশাক মালিকদের। এ অবস্থায় নতুন কোনো অর্ডার না আসায় হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। বিজিএমইএ’র পরিচালক ও গোল্ডেন রেফিট গার্মেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ৮ তারিখ থেকে লকডাউন তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সেটা ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যতদূর জানতে পারছি, এটা ইস্টার হলিডে পর্যন্ত অর্থাৎ ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এসব কারণে খুব হতাশার মধ্যে আছি।’

রফিকুল ইসলাম জানান, তার প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২০ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। পাশাপাশি পোশাকের নতুন বাজারও তেমনটি তৈরি হচ্ছে না। যে কয়টা আছে সেগুলোতেও চাহিদা অনেক কম। মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকার ওপরই আমাদের পোশাকশিল্প টিকে আছে। ৮৫ ভাগ মার্কেটই  সেখানে।’ হতাশার কথা জানিয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক ও দিগন্ত সোয়েটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কামালউদ্দীন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। কারণ ইউরোপের বাজার এখনো বন্ধ রয়েছে। বায়াররা শঙ্কিত। অর্ডার দিয়ে আবার স্থগিত করে দেয়। তারা এখনো দোটানার মধ্যে রয়েছে।’

তবে ব্যবসায়ীদের আশা, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের সংখ্যা বাড়লে হয়তো মে-জুনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বিজিএমইএ’র পরিচালক ও মাসুদ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘করোনা প্রথম ওয়েভের পরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আবার প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছি। নতুন অর্ডার আসছে না। সরকার সহজশর্তের ঋণ না দিলে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে যেত। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতাম না। আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এখন কেবল টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কোনোভাবে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়ে পরবর্তী সিজন পর্যন্ত টিকে থাকাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) গত ৩ মার্চ প্রকাশিত রপ্তানি আয়ের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিশ্ববাজারে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। চলতি ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৩১৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের, যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৩৩২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় চলতি ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি কমেছে ১৩ কোটি ৬ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

তবে আশার খবর হলো, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ’২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ’২১) ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করে মাইলফলক স্পর্শ করেছে তৈরি পোশাক খাত। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইপিবির হিসাব অনুযায়ী লাভ-ক্ষতির হিসাব করা সমীচীন হবে না। মাসুদ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘করোনার সময় প্রাইসের ডাউন হয়েছে। ১০ থেকে ১২ শতাংশ দাম কমে গিয়েছিল, যেটা আমাদের কস্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাই ইপিবি’র তথ্য দিয়ে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা যাবে না।’

গত বছর করোনার শুরুতে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটলেও পোশাক খাতে আশঙ্কার চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা কম। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার আগে দেওয়া অনেক অর্ডার করোনা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সময় সরবরাহ করায় ক্ষতিটা কম হয়েছে। দিগন্ত সোয়েটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কামালউদ্দীন বলেন, ‘প্রথমে যতটা খারাপ মনে করেছিলাম ততটা খারাপ যায়নি। মোটামুটি চলেছে। সরকার আমাদেরকে প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করেছে। ওটা না হলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যেত।’

ইপিবি’র তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে টানা ১৮ মাস লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারেনি ওভেন (শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেটসহ শৌখিন আইটেম)। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে এ খাতে এক হাজার ৮৪০ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছর করোনা মধ্যে দেশের পণ্য রপ্তানি খুব একটা খারাপ করেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার বা ১ লাখ ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে এই আয় তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ৪৫ শতাংশ কম।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। গত অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। এই আট মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের (২০১৯-২০২০) জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads